বেলায়েত শেখ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উৎসাহ যোগানো নাম। তিনি ৫৫ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিলেও সেখানে মেধাতালিকায় স্থান না পাওয়ায় তার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এবার তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
এর আগে গত ১১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তার স্বপ্ন ভেঙে যায়। তাই এবার স্বপ্ন পূরণে রাবিতে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে আসছেন তিনি।
বেলায়েত শেখ জানান, আগামী মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে তিনি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ একাডেমিক ভবনের ৪০৬ নম্বর কক্ষে সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ‘এ’ ইউনিটের প্রথম শিফটে পরীক্ষা দেবেন।
বেলায়েতের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা যায়, ১৯৬৮ সালে জন্ম নেওয়া বেলায়েত শেখের ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। ১৯৮৩ সালে তার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে সময় তার বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাকে পরিবারের দেখাশোনা করতে হয়। এরপর আর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া হয়নি। পরে ২০১৭ সালে ঢাকার বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে পড়াশুনা শুরু করেন। ২০১৯ সালে, ৫২ বছর বয়সে, তিনি এসএসসি পরীক্ষা দেন এবং ৪.৪৩ জিপিএ নিয়ে পাস করেন। তিনি ২০২২ সালে মহানগর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রামপুরা থেকে ৪.৫৮ জিপিএ নিয়ে এইচএসসি পাস করেন।
বেলায়েত তার হতাশা ও আক্ষেপের জায়গা থেকে বলেন, সংসার সামলাতে গিয়ে পড়তে পারিনি। তাই আমি আমার ভাইদের শিক্ষিত করে উচ্চ শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি সেটাও করতে পারিনি। তখন আমি আমার সন্তানদের পড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। বড় ছেলে অনার্সে দুই সেমিস্টারের পর বাদ পড়ে। মেয়েটি মেধাবী ছিল। ভেবেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবো। কিন্তু আমি সেটাও করতে পারিনি। পরে নিজের রাগ থেকেই পড়াশুনা শুরু করি।
রাবিতে পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি টানা ১৭ দিন অসুস্থ ছিলাম। এখন একটু পড়াশুনা করেছি। এই বয়সে সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো। এই শরীর নিয়েই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষ দিতে যাব। আমি যেন আমার সেরাটা দিয়ে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।’
তিনি আরো যোগ করে বলেন, ‘যারা বর্তমান প্রজন্ম এবং তাদের মধ্যে যারা নিজেদেরকে ব্যর্থ হিসেবে বিবেচনা করেন, তাদেরকে দেখাতে চাই কিভাবে পরিবারের সমস্ত কিছু সামলিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া যায়। আমি এই বয়সে একজন সুশিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ হতে চাই। যদি প্রত্যেক নাগরিক সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়, তাহলে দেশের উন্নতি হবে, উন্নতি হবে সমাজের। সুশিক্ষা পেলে কেউ কখনো কারোর প্রতি ক্ষতির মনোভাব নিবে না।’