Monday , December 30 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আমার কামালকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন, ইতালির রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য আটকে দিয়ে মা নাছিমা

আমার কামালকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন, ইতালির রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য আটকে দিয়ে মা নাছিমা

কাজের সন্ধানে অনেক মানুষ নিজদেশ ছেড়ে ভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়। অনেকে বিদেশ যাওয়ার জন্য দালালের খপ্পরে পড়ে অবৈধ পথ অবিলম্ভন করে। এমনি একটি ঘটনায় ভুক্তভোগি কামালও তার পরিবার।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার দক্ষিণ লোনসিং গ্রামের বাসিন্দা কামাল মুন্সী তিন বছর আগে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার জন্য বাড়ি ছেড়েছিলেন। গত ২৯ জুন থেকে তার স্বজনরা তাকে খুঁজে পাচ্ছেন না। মা নাছিমা আক্তার তার ছেলেকে খুঁজে পেতে ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াটা ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে কান্নাকাটি করেন।

আজ শরীয়তপুরে অভিবাসন বিষয়ক এক আলোচনা সভায় ইতালির রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র সচিবসহ অতিথিদের সামনে কেঁদে ফেলেন নাছিমা আক্তার এবং তার ছেলের সন্ধান কামনা করেন। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মানব পাচার রোধ এবং নিরাপদ অভিবাসনকে উৎসাহিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সভার আয়োজন করে।

সকাল সাড়ে ১০টায় পৌরসভা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা, গোসাইরহাট ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার আংশিক) সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক। ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াটা, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব আখতার হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুচ এবং শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস.এম. আশরাফুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কামাল মুন্সীর স্বজনরা জানান, শরীয়তপুরের নদীয়া পৌরসভার দক্ষিণ লনসিং এলাকার মৃ/ ত ফজলুল হক মুন্সীর চার ছেলে রয়েছে। মেজের ছেলে কামাল মুন্সী গ্রামে কৃষকের কাজ করেন। পরিবারের দারিদ্র্য দূর করতে স্থানীয় দালাল হানিফ সরদারের মাধ্যমে লিবিয়ায় গিয়ে ইতালি যান। এরপর দালালকে সাড়ে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়। এরপর কামালের স্বজনরা লিবিয়ায় অবস্থানরত আরেক বাংলাদেশি দালাল হাসানের সঙ্গে চুক্তি করেন। বিভিন্ন সময়ে তাকে আরও ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

২৯ জুন কামাল বাসায় ফোন করে মা নাছিমা বেগম ও স্ত্রী সামিয়া আক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। কামাল তাদের জানান, ১ জুলাই তাকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে নৌকায় করে ইতালি নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর স্বজনরা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। লিবিয়ার দালাল হাসান ৩ জুলাই ফোন করে জানান, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কামালের মৃত্যু হয়। তার লাশ ফেরত পাঠানোর জন্য পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হয়।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন যখন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন, তখন নাছিমা বেগম দাঁড়িয়ে কাঁদলেন। তিনি তার ছেলেকে উদ্ধার ও ফিরিয়ে আনার আবেদন জানান। পররাষ্ট্র সচিব ওই নারীকে আশ্বস্ত করেন যে, অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সময় নিখোঁজ কামাল মুন্সিকে খুঁজে বের করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করবে। তিনি অবৈধভাবে বিদেশে না যেতে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে উপস্থিত সবাইকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

বৈঠকে মা নাছিমা আক্তার ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ কামাল মুন্সীকে ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শুক্রবার শরীয়তপুর পৌর মিলনায়তনে বৈঠকে মা নাছিমা আক্তার ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ কামাল মুন্সীকে ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শুক্রবার শরীয়তপুর পৌর মিলনায়তন ছবি: প্রথম আলো

কামাল মুন্সীর মা নাছিমা বেগম এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। জমি বিক্রি করে সন্তানের উন্নত জীবন গড়তে দালালকে টাকা দিয়েছি। এখন বাচ্চাটাকেও খুঁজে পাচ্ছি না। কেউ কি আমার সন্তানকে খুঁজে পাবে না? রাষ্ট্র কি এমন হতভাগ্য মায়ের পাশে দাঁড়াবে না?

কামালের স্ত্রী সামিয়া আক্তার জানান, বিয়ের কয়েকদিন পর কামাল মুন্সী ইতালি চলে যান। তিন বছর ধরে স্বামীকে খুঁজছেন তিনি। অনেকবার ফোনে ফিরে আসতে বলে। দালাল চক্র তাকে দেশে ফিরতে দেয়নি। তাকে জিম্মি করে বিভিন্ন সময় টাকা হাতিয়ে নেয়। এখন আবার মৃত্যুর খবর দিয়ে টাকা চাইছেন। তারা এখন কি করবে? মানুষ খুঁজে কিভাবে?

তিউনিশিয়া হয়ে ইউরোপে যাত্রা বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক অভিবাসন রুটগুলির মধ্যে একটি। তবে ইউরোপে নতুন জীবন শুরু করার আশায় আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এই পথে চলে যাচ্ছে বৈঠকে ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াটা বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক রুটে ইতালি ভ্রমণ করা সবার জন্য উদ্বেগের বিষয়। তাই মানবিক কারণে জীবন বাঁচাতে, প্রতারণা ও নির্যাতন থেকে শ্রমিক অভিবাসীদের বাঁচাতে, সর্বোপরি মানব পাচার প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, যারা বিপজ্জনক পথে ইতালি যাওয়ার ঝুঁকি নেন, তারা মানব পাচার, প্রতারণা, সহিংসতা ও অমানবিক পরিস্থিতির শিকার হন। ভূমধ্যসাগর ও উত্তর-পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে গত বছর ৩,২৩১ জন মারা গেছে।

উল্লেখ্য, অবৈধ পথে বিদেশ গিয়ে বিপাকে পড়েছে অনেক মানুষ। হতো কারো কাছে বিক্রি হয়ছে অন্যথায় আটকা পড়েছে পুলিশের কাছে। যেহেতু কামালও অবৈধ পথে বিদেশ গিয়েছে এবং সেখানে গিয়ে কারো সাথে যোগাযোগ করেনি তাই সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না যে সে আসলে কোথায় এবং কেমন আছেন।

About Nasimul Islam

Check Also

কোহিনূরের পর বিশ্বের সবচেয়ে দামি হীরা দরিয়া-ই-নূর বিদেশে পাচার করেছিল শেখ হাসিনা

ঢাকার নবাবি আমলের মহামূল্যবান হীরকখণ্ড ‘দরিয়া-ই-নূর’ নিয়ে রহস্য আজও অমীমাংসিত। ২০১৬ সালে সোনালী ব্যাংক সদরঘাট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *