Sunday , December 22 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার নতুন চার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে আ.লীগ

এবার নতুন চার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে আ.লীগ

বর্তমান সরকার পরপর তিন বার ক্ষমতা থেকে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন করলেও দলের মধ্যে আগামী নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলচ্ছে। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকার কারনে দলের মধ্যে ব্যাপক কোন্দলের তৈরী হয়েছে। যার ফলে প্রায় স্থানীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর কারনে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। দ্বাদশ নির্বাচনে ক্ষমতা ধরে রাখতে দলটি বিভিন্ন পরিকল্পনা করছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঘর গোছাতে চায় আওয়ামী লীগ। দলকে সুসংগঠিত করার নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই প্রধান চারটি টার্গেট নিয়েই মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের টার্গেটের মধ্যে রয়েছে আগামী ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হওয়া ৩৪টি জেলা সম্মেলন, গাজীপুর ও রংপুর সিটিতে বিজয়, ২ কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন। দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই সম্মেলনের আগেই মেয়াদ শেষ হওয়া ৩৪ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতেও নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভাপতি। সেই লক্ষ্যে দায়িত্বশীল নেতারা মাঠে নেমেছেন। গাজীপুর ও রংপুর সিটিতে চলতি বছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরুতে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকার কাছে গাজীপুরে জয়ের ধারাবাহিকতা এবং রংপুরে জাতীয় পার্টির শক্ত ঘাঁটিতে জয় চায় আওয়ামী লীগ। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই যোগ্য প্রার্থীদের খোঁজ চলছে। একইভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই কোটি নতুন ভোটার করতে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সামনে আগস্ট। চলতি মাসেই দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে এ মাসের ধারাবাহিক কর্মসূচি ঠিক করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সভা থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা সম্মেলন, মেয়াদ উত্তীর্ণ সহ-ভ্রাতৃত্ব সংগঠনের সম্মেলন সম্পন্ন করা, আসন্ন গাজীপুর ও রংপুর সিটিতে যোগ্য প্রার্থী খোঁজা। তিনি বলেন, “আমাদের অন্য টার্গেট হল প্রায় ২ কোটি নতুন ভোটারকে সদস্য করা। এর বাইরে যেখানে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে, সেগুলো মেটানো।
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচন আগের নির্বাচনের চেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এবং কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, দলের একাধিক বৈঠকে এই বার্তাও দিয়েছেন দলীয় প্রধান। তাই আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য, বিপদে-আপদে জনগণের পাশে থাকা লোক খুঁজে বের করতে দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে যেসব নেতা দলের নির্দেশনা অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেছেন তাদের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনার কথা দলীয় ফোরামে আবারও উঠে এসেছে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীরা দলের জন্য বিপজ্জনক বলেও মনে করেন কোনো কোনো নেতা। তাই দলীয় সভানেত্রীর কঠোর বার্তা, বিদ্রোহীদের কোনো ছাড় নয় বরং তাদের কোনো পদ-পদবিতে না রাখার জন্য বলা হয়েছে।

দলের জাতীয় কাউন্সিলের আগেই সব বিরোধ নিষ্পত্তি করে দলকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র ও ইশতেহার হালনাগাদ করার কাজও শুরু করতে বলা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেওয়া ইশতেহারের আলোকে নতুন ইশতেহার প্রণয়নের কাজ শুরু করবে আওয়ামী লীগ। তা ছাড়া আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সব ধরনের ছাড় দিতে চায় দলটি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী দল। একটি নির্বাচন শেষ হলে আরেকটি নির্বাচন হয়। দলকে নির্বাচনমুখী করতে সবকিছু করা হচ্ছে। তৃণমূলের সম্মেলন, সদস্য সংগ্রহ, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসনসহ যাবতীয় কাজ করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। আমরা এখন থেকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামব।

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, এর আগে বারবার দলের সদস্য সংগ্রহের বিষয়টি ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। ঘটা করে উদ্বোধন করা হলেও সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম শেষ পর্যন্ত গতি হারিয়ে ফেলে। সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তিন বছর পর পর সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন করা হয়। সদস্য পদ নবায়ন করা না থাকলে দলের কোনো কমিটিতে স্থান পাওয়া যায় না। নতুন সদস্য ও নবায়ন মিলে কখনোই ৪০ লাখের বেশি ফরম পূরণ হয়নি। অনেক সক্রিয় নেতা-কর্মীও ফরম পূরণ করেন না। সে ক্ষেত্রে দলের বাইরের সরকারি উপকারভোগী প্রায় ১ কোটি মানুষকে নতুন সদস্য হিসেবে দলে অন্তর্ভুক্ত করার এ কার্যক্রম কতটা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যেই সন্দেহ আছে।

সরকারের অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ১২৩টি কর্মসূচি রয়েছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে আটটি কর্মসূচি নগদ ভাতার আর ১১টি খাদ্য সহায়তার। আগামী বাজেটে নতুন করে ১১ লাখ উপকারভোগীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এতে সব মিলে ১ কোটির কিছু কম বা বেশি মানুষ সরাসরি সরকারের উপকারভোগীর তালিকায় আসবে। এদের মধ্যে মুজিববর্ষে ঘর পাওয়া দেড় লাখ পরিবারও আছে। এ উপকারভোগীদের আওয়ামী লীগের সদস্য করার জন্য তৃণমূলের নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য উপকারভোগীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়েও নানা মত আছে। অর্থ বিভাগের তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে বয়স্ক ভাতা পান ৫৭ লাখ মানুষ। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা পান ২৪ লাখ ৭৫ হাজার। মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী পান ২ লাখ বীর মক্তিযোদ্ধা। প্রতিবন্ধী ভাতা পান ২১ লাখ ৮ হাজার। সব মিলে ১ কোটি ৪ লাখের বেশি মানুষ ভাতার আওতায় আছে। এ ছাড়া জেলে, বেদে, রূপান্তরিত মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আছেন। তবে একই ব্যক্তি একাধিক ভাতাসহ নানা সুবিধা পাওয়ার অভিযোগও আছে। সে কারণে এ সংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তি আছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী দল, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ ওয়ার্ডে সভা করছে, উপজেলায় সভা করছে, জেলায় জেলায় সভা করছে, বিভিন্ন দিবস পালন করেও আমাদের কার্যক্রম থেমে নেই। তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়ের জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুতি নিচ্ছি। আওয়ামী লীগ টার্গেট নিয়ে কাজ করে।

প্রসঙ্গত, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন লক্ষ নিয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামীলীগ বলে মন্তব্য করেন দলের শীর্ষ নেতারা। এ বিষয়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা্ দিয়েছে বলে জানান নেতারা।

About Babu

Check Also

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে নতুন মোড়

বাংলাদেশ-ভারতের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে উত্তেজনার নতুন মোড় নিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *