বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করেছে। এই স্বল্প সময়ে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে অর্জন করেছে ব্যপক সফলতা এবং সম্মাননা। এমনকি সম্পর্তি সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে আপ্রান ভাবে কাজ করছে। দীর্ঘ দিন ধরে মুসলিম বিশ্বের ঐক্য প্রসঙ্গে তুরষ্কের সাথে বাংলাদেশ ভুল বোঝাবুঝি ছিল। তবে সম্পর্তি সেই ভুল বোঝাবুঝি অবসান ঘটেছে। এবং একে অন্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
ভুল বোঝাবুঝি অবসানের পর তুরস্ক এবং বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন উদ্যোমে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বের ঐক্য বিনষ্ট করছে বলে একসময় বিশ্বাস করতো তুরস্ক। কিন্তু এখন সত্য প্রকাশ্যে আসায় তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশি মন্ত্রী। মোজাম্মেল হক বলেছেন, (বাংলাদেশ সম্পর্কে) সত্য প্রকাশ্যে এসেছে এবং সব ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়েছে। গত সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক ‘ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক থিংকিং’ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তুরস্ক-বাংলাদেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরিতে পাঁচ দশক লেগে গেলো কেন। জবাবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতালাভ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ মুসলিম ঐক্য বিনষ্ট করছে এমন বহু প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছিল। মোজাম্মেল হক বলেন, সেই ধারণাটি দূর হচ্ছে এবং (বাংলাদেশ সম্পর্কে) সঠিক তথ্য পেতে এখানে (আঙ্কারায়) আমাদের দূতাবাস রয়েছে।
তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দক্ষিণ এশিয়ার বহু মুসলিম সেদেশে গিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। সেই কথা স্মরণ করিয়ে মন্ত্রী বলেন, উপমহাদেশের বহু মানুষ, বিশেষ করে বাঙালিরা এখানে এসেছিলেন। অনেকেই তাদের সোনাদানা বিক্রি করে আধুনিক তুরস্কের স্বাধীনতা ও সীমানা নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করেছিলেন। মোজাম্মেল হক বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আজ বাংলাদেশ সারা বিশ্বের জন্য উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এসময় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কথাও স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মুস্তফা কামাল আতাতুর্ককে নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে মোজাম্মেল হক বলেন, কবি নজরুল যখন কামাল আতাতুর্ককে নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন, তখন তাকে বিদ্রোহী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীনতালাভের পর তাকে জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়। মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে তুরস্ক ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্রমেই বাড়ছে। বাড়ছে সামরিক সহযোগিতা। গত কয়েক মাসে আমাদের তিন বাহিনীর প্রধানই তুরস্ক সফর করেছেন।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ মান্নান। তিনি বলেন, ঢাকার সঙ্গে সব প্রতিবেশীরই সুসম্পর্ক রয়েছে। আমাদের নেতৃত্বের মনোযোগ উন্নয়ন ও শান্তির দিকে।এসময় তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ১২ লাখ রো/হি/ঙ্গা শরণার্থীকে সামলানোর বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে তুরস্ক। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপদে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তুরস্কের মানুষ ও সরকার, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বাংলাদেশের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উন্নয়নে যৌথ ভাবে কাজ করছে তুরষ্ক। এমনকি বাংলাদেশের অনেক উন্নয়নমূলক খাতে মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি খাতে অর্থ বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এরই ধারবাহিকতায় বর্তমানে সময়ে তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্রমশই বাড়ছে।