Sunday , November 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / শিক্ষক উৎপলের প্রাণনাশ: ইউনুছ আলী কলেজ সম্পর্কে বেরিয়ে এলো ভিন্ন তথ্য

শিক্ষক উৎপলের প্রাণনাশ: ইউনুছ আলী কলেজ সম্পর্কে বেরিয়ে এলো ভিন্ন তথ্য

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন গনমাধ্যমকে বলেন, ঢাকার আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় হাজী ইউনুস আলী কলেজের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শাখা পরিচালনার অনুমতি নেই। একই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম ওরফে জিতু (১৯) একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে প্রাণনাশ করেছে।

সাভারের হাজী ইউনুস আলী কলেজ যেখানে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে প্রাণনাশ করা হয়েছিল সেখানে চার স্তরের শিক্ষা রয়েছে। এগুলো হলো- কেজি, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর। অনুমোদন ছাড়াই চলছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর। এক দশক ধরে এই চলছে। অন্যদিকে ঢাকা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে সাময়িক স্বীকৃতির মেয়াদও এক বছর আগেই পেরিয়ে গেছে। কেজি লেভেল কোড নম্বর থাকা সত্ত্বেও কোম্পানির অনুমতি বা স্বীকৃতির কোনো রেকর্ড নেই। সে হিসেবে সরকারের যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই চলছে পুরো বিদ্যালয়টি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। এদিকে তদন্তে জানা গেছে, খুনি আশরাফুল ইসলাম জিতু নাবালক নয়। রাজধানীর উত্তরার একটি বিখ্যাত মাদ্রাসা থেকে ২০২০ সালে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। বোর্ডের নিবন্ধন অনুসারে, তিনি ১৭ জানুয়ারী, ২০০৩ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এতে তার বয়স ১৯ বছর ৫ মাসেরও বেশি।

অন্যদিকে উৎপল কুমার সরকারের ঘটনার পর ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ‘ইওয়াশ’ নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠানটির স্টিয়ারিং কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছে। কারণ বিদ্যালয়ে কোনো কমিটি ছিল না। গত জানুয়ারি মাস থেকে এটি চলছে। তবে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছিল। শিক্ষক প্রয়ানের পরিপ্রেক্ষিতে এবং বোর্ডের নির্দেশে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া এখন জোরেশোরে শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান মুঠোফোনে দেশের একটি জনপ্রিয় গনমাধ্যমকে বলেন, মাধ্যমিক স্তরের প্রাথমিক অনুমোদনের জন্য তারা একাধিকবার বোর্ডে আবেদন করেছেন। নিয়মানুযায়ী কলেজের অনুমোদন আগে থাকলে স্কুলের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণের পরই অনুমোদন নেওয়া যাবে। কিন্তু একটি ভবন নির্মাণে প্রয়োজন ২ কোটি টাকা। বিদ্যালয় ভবনটি না থাকায় নির্মাণ করা যায়নি। করোনেশন সময়ের বিশেষ পরিস্থিতির কারণে কলেজ শাখার মেয়াদ উত্তীর্ণ অনুমোদন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া যায়নি।

তিনি স্বীকার করেন যে কেজি স্কুল মানে খেলা, নার্সারি এবং কেজি ক্লাস। তাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে প্রাপ্ত কোডটি প্রাথমিক শাখার জন্য নয়। তবে তিনি বলেন, শুধু তার প্রতিষ্ঠান নয়, সাভারে ৩৩১ কেজি স্কুল রয়েছে যার কোনো অনুমোদন নেই। যদিও সরকার এসব স্বীকার করে। এ কারণে তারা শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই পাচ্ছেন। সোমবার মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন শিক্ষা ভবনের প্রধান কার্যালয়ে পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দেন। জানা গেছে, ২৫ জুন হাজী ইউনুস আলী কলেজের পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফুটবল খেলা চলছিল। শিক্ষক উৎপল ছিলেন পঞ্চম শ্রেণির কোচ। স্কুল ভবনের উল্টোদিকে বসে খেলা দেখছিলেন তিনি। দশম শ্রেণির ছাত্র জিতু হঠাৎ উৎপলের মাথায় ও বুকে আঘাত করে। খেলায় আম্পায়ারিং করছিলেন আরেক শিক্ষক শরিফুল ইসলাম। তাকে মারতে দেখে দ্রুত এসে জিতুকে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু এরই মধ্যে উৎপলের অদ্ভুত অবস্থা দেখে সে জিতুকে ছেড়ে উৎপলের সাহায্যে এগিয়ে গেল। পরে অন্য শিক্ষকদের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এই তদন্ত প্রতিবেদনে কমিটি শুধু তথ্য চেয়েছে। কোনো সুপারিশ করেননি। প্রতিবেদনের প্রথম অংশে কলেজের বৈধতা সম্পর্কিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৭২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানা গেছে। কলেজ শাখায় একাদশ শ্রেণিতে ১২০ জন এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৯২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ৪৫ জন। মাধ্যমিক স্তর ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি কলেজ শাখার প্রাথমিক অনুমোদন নিয়েছে ২০১৩ সালে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের জুন মাসে ৩ বছরের জন্য প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া হয়। স্টিয়ারিং কমিটির (নির্বাহী কমিটি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে গত বছরের আগস্টে। এরপর ১০ মাস ধরে এডহক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। অর্থাৎ কোনো কমিটি ছাড়াই সংগঠনটি চলছিল। কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালে কেজি স্কুল নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। একজন ইউনুস আলীর জমি দাতা। ২০১১ সাল থেকে কাছাকাছি স্কুল থেকে তাদের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়ে আসছে। গত দুই বছরে, নিশ্চিন্তপুর দেওয়ান ইদ্রিস আলী উচ্চ বিদ্যালয় এবং আমছিমোর সেসিপ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যথাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক তপন কুমার সরকার যুগান্তরকে বলেন, কলেজ শাখার অনুমোদন নিয়েই প্রতিষ্ঠান চালানো যায়। কিন্তু আপনি যদি একটি স্কুল শাখা চালাতে চান তবে আপনাকে তার অনুমোদন নিতে হবে। এর কিছু প্রক্রিয়া আছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব, অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে অবস্থানগত দূরত্ব ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়। ইউনুস আলী কলেজের স্কুল শাখার অনুমোদন ছিল না।

উল্লেখ্য, শনিবার হাজী ইউনুস আলী কলেজ প্রাঙ্গণে মেয়েদের ক্রিকেট খেলার সময় দশম শ্রেণীর ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্টাম্প দিয়ে আঘাত করেন। পরদিন সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার প্রয়ান হয়। ওই দিনই ভুক্তভোগীর বড় ভাই অসীম কুমার সরকার বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি প্রয়ান মামলা করেন। বুধবার গাজীপুর থেকে জিতুকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

 

 

About Syful Islam

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *