Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / কার মাধ্যমে এই সব অপকর্ম করতো উৎপল প্রাণনাশের সাথে জড়িত সেই ছাত্র

কার মাধ্যমে এই সব অপকর্ম করতো উৎপল প্রাণনাশের সাথে জড়িত সেই ছাত্র

উৎপল-বিউটির সংসার শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। একই দিনে গাঁটছড়া বাঁধেন এই দম্পতি। শুরু হয় নতুন জীবনের পথচলা। সুখে-দুঃখে তাদের দিন কাটত। তবে হঠাৎ করেই সব থেমে গেল। আজ প্রিয় মানুষটির বিবাহবার্ষিকী, কিন্তু বিউটি কাঁদছে। জীবন যুদ্ধ শুরু না করেই স্বামী হারানোর বেদনা বুকে চেপে বসে আছে।

আশরাফুল আহসান জয়ী। বয়স ১৮ হলেও তিনি দশম শ্রেণীতে পড়তেন। ছাত্র হিসেবে পিছিয়ে থাকলেও বিশৃঙ্খলায় এগিয়ে ছিলেন। এই বয়সে তিনি একটি কিশোর গ্যাং গঠন করেন। স্ব-গঠিত কিশোর গ্যাং ‘জিতু দাদা’র মাধ্যমে সব ধরনের অপকর্ম সংঘটিত হয়। এভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠে জিতু। তার হাত থেকে রেহাই পাননি শিক্ষক। সবার সামনে স্টাম্প দিয়ে শিক্ষককে পিটিয়ে নিথর করেছে দশম শ্রেণির ছাত্র। আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার প্রয়ানের মামলায় জিতুকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য বেরিয়ে আসে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কাওরান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, জিতু তার এলাকায় ‘জিতু দাদা’ নামে একটি কিশোর গ্যাং গঠন করে। তিনি গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে আধিপত্য বিস্তার করতেন। পরিবারের কাছে কেউ অভিযোগ করলে জিতু তার দলের সদস্যদের নিয়ে তাদের ওপর হামলা করত।

কমান্ডার মইন জানান, জিতু এক স্কুলছাত্রীকে নিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। শিক্ষক উৎপল জিতুকে বললেন এই ঘোরাঘুরি থেকে বিরত থাকতে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রকে বীরত্ব দেখাতে উৎপলের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেন ওই ছাত্র। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৫ জুন স্কুলে মেয়েদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন, জিতু উৎপলকে স্টাম্প দিয়ে আঘাত করে এবং তাকে আহত করে। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াত হন শিক্ষক উৎপল। ঘটনার পর জিতু পালিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। পরে বুধবার যৌথ অভিযানে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে জিতু ওরফে জিতু দাদাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। জিতুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানায়, ওই শিক্ষক প্রথমে উৎপলের মাথায় পিছন থেকে আঘাত করেন এবং পরে জিতুকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর জখম হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জিতু ওই এলাকায় অবস্থান করলেও পরে আত্মগোপনে চলে যায়। প্রথমে বাসে করে মানিকগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান এবং রাত কাটান। পরদিন আরিচা অবস্থান পরিবর্তন করে ফেরি টার্মিনালে পৌঁছে ট্রলারে করে নদী পার হয়ে পাবনার আতাইকুলায় পরিচিত বাড়িতে আত্মগোপন করে। পরদিন সকালে তিনি আতাইকুলা থেকে কাজিরহাট লঞ্চ টার্মিনালে বাসে করে আবার অবস্থান পরিবর্তন করে লঞ্চে করে আরিচাঘাটে পৌঁছান। সেখান থেকে বাসে করে গাজীপুরের শ্রীপুরের ধানুয়া গ্রামে এক বন্ধুর বাড়িতে যান। সেখান থেকে জিতুকে আটক করে র‌্যাব। গ্রেফতার বিজয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, পড়ালেখায় বিরতি নিয়ে প্রথমে স্কুলে, পরে মাদ্রাসায় এবং সবশেষে পুনরায় স্কুলে ভর্তি হন। জিতু স্কুলের নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে বর্তমানে দশম শ্রেণীতে পড়ছে। স্কুলের সবার কাছে সে একজন দুষ্টু ছাত্র হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মারামারি ও বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে।

কমান্ডার মঈন বলেন, জিতু স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে শিক্ষার্থীদের উত্যক্ত ও বিরক্ত করত। তিনি স্কুল প্রাঙ্গণে সবার সামনে ধূমপান করতেন, স্কুলের ইউনিফর্ম ছাড়াই স্কুলে আসা-যাওয়া করতেন এবং মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়া চলাফেরা করতেন। জিতুর জেএসসি সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার বয়স ১৯ বছর। তবে মামলার জবানবন্দিতে তার বয়স ১৮ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। খন্দকার আল মঈন জানান, নিহত শিক্ষক উৎপল কুমার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ২০১৩ সালে আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ফলে স্কুলের ইউনিফর্ম, চুল কাটা, ধূমপান, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা পরিচালনাসহ শিক্ষার্থীদের পরামর্শ, প্রেরণা ও কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সৃজনশীলতা বিকাশে ভূমিকা রাখেন।

উল্লেখ্য, দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু উৎপলকে সবার সামনে স্টাম্প দিয়ে প্রহার করেছে। ঘটনাটি ঘটে ২৫ জুন। ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে প্রহারের পরের দিন হাসপাতালে প্রয়াত হন উৎপল। এর ঘটনার পরে, বিউটি শোকের পাহাড়ে আরোহণ করে এবং তার প্রিয়জনকে বিদায় জানায়। উৎপল কুমার সরকার আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ছিলেন। এছাড়া তিনি সংগঠনের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন।

About Syful Islam

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *