বিশ্ব জুড়ে অলনাইন মাধ্যম ব্যবহারের প্রবনতা ব্যপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন মানুষ এই অনলাইন যোগযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের মতামত প্রকাশ করে থাকে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও এই অনলাইন যোগযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় লেখালেখির প্রবনতা রয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউস বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনলাইনে মতপ্রকাশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাংলাদেশর অবস্থান।
অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আংশিক মুক্ত শ্রেণির তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। মার্কিন অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে এমনটাই দেখা গিয়েছে। গবেষণা সংস্থাটি এর পেছনে দুটি কারণ উল্লেখ করেছে। প্রথমত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় ধরপাকড় জারি রেখেছে সরকারি কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয়ত, ক্রমেই অভিনব সব উপায়ে সরকারি নজরদারির খবর আসছে সামনে। ফ্রিডম হাউসের ‘ফ্রিডম অন দ্য নেট ২০২১’ প্রতিবেদনে ইন্টারনেটে বাক্স্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১০০ তে ৪০ পয়েন্ট। গত বছর ছিল ৪২। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালে ৪৪, ২০১৮ সালে ৪৯, ২০১৭ সালে ৪৬ ও ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৪৪ পয়েন্ট। প্রাপ্ত পয়েন্টের ভিত্তিতে দেশগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। পয়েন্ট ১০০ থেকে ৭০-এর মধ্যে থাকলে ‘মুক্ত’, ৬৯ থেকে ৪০-এর মধ্যে থাকলে ‘আংশিক মুক্ত’ এবং ৩৯-এর নিচে হলে ‘মুক্ত নয়’। সে হিসেবে আংশিক মুক্ত শ্রেণির তলানিতে বাংলাদেশ।
ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনটিতে বিশ্বের ৭০টি দেশের পর্যালোচনা করা হয়েছে। ইন্টারনেটে স্বাধীনতার স্তর নির্ণয়ে ৩ ধরনের মোট ২১টি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এতে। সেগুলো হলো- সেবা ব্যবহারে বাধা, কনটেন্টের সীমাবদ্ধতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন।
প্রতিবেদন তৈরিতে ২০২০ সালের ১ জুন থেকে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ঘটনাবলি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে— রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে থ্রি–জি ও ফোর–জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। প্রায় এক বছর পর ২০২০ সালের আগস্টে তা চালু করা হয়।
– ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় গত মার্চে চলমান আন্দোলনে তিন দিনের জন্য ফেসবুক ও ফেসবুক মেসেঞ্জার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
– চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আল–জাজিরা ও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি নজরদারি সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নজরদারি, হ্যাকিং ও মুঠোফোন থেকে তথ্য সংগ্রহের প্রযুক্তি কিনেছে বাংলাদেশ।
– ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃ/ত্যু/র ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনটির বিরুদ্ধে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবাদ শুরু হয়। করোনা মোকাবিলায় সরকারের সমালোচনা করে দেওয়া ফেসবুক পোস্টের জেরে গত বছরের মে মাসে আটক হন মুশতাক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৮০০–এর বেশি মামলা হয়েছে এবং সরকারের সাইবার ট্রাইব্যুনালের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের অক্টোবরে আইনটি প্রণয়নের পর থেকে মামলা দায়ের হয়েছে প্রায় ২ হাজার।’ ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের নয়টি সূচকের মধ্যে সাতটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বাধা, ওয়েবসাইট বন্ধ, ইন্টারনেট বন্ধ, সরকারপন্থী ভাষ্যকার, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আ/ট/ক, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে শারী/রি/ক/ভা/বে হে/ন/স্তা ও কারিগরি হা/ম/লা। বিশ্বব্যাপী টানা ১১ বছর ধরে ইন্টারনেটে স্বাধীনতা কমছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। সূচকে ৯৬ পয়েন্ট পেয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে আইসল্যান্ড। আর সবচেয়ে করুণ দশা চীনের, দেশটি মাত্র ১০ পয়েন্ট পেয়েছে।সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে কেবল পাকিস্তান। ২৫ পয়েন্ট পেয়ে ‘মুক্ত নয়’ তকমা জুটেছে দেশটির। ভারত ও শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট যথাক্রমে ৪৯ ও ৫১। সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলো প্রতিবেদনে নেই।
বর্তমান সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশও দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে প্রষুক্তি খাতে। তবে সম্প্রতি ডিজিটাল খাতকে নিয়ন্ত্রনের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেছে বাংলাদেশ সরকার। এমনকি এক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রনয়ন করেছে। তবে এই আইনকে নিয়ে নানা ত্রক-বির্তক রয়েছে। এমনকি একদল গবেষকরা এই আইনের বিপক্ষে মতামত প্রদান করেছে।