বর্তমান সময়ে সমগ্র দেশ জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে রয়েছে অনলাইন ভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন অনিয়মের জের ধরে প্রশাসনের কাছে গ্রে/ফ/তা/র হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মহা পরিচালক এবং ব্যবস্থাপক। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির কাছে পাওনাদারদের পাওনা ফিরত নিয়ে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই অনিশ্চয়তা দূরীকরনের পাওনাদারদের পাওনা ফিরিয়ে দিতে বিশেষ প্রস্তাব দিল বিশেষজ্ঞরা।
প্র/তা/র/ণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন গ্রেফ/তা/রে/র পর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত গ্রাহক ও সেলারদের পাওনা টাকা নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। টাকা ফিরে পেতে আইনের আশ্রয়ও নিয়েছেন অনেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোম্পানি আইন অনুযায়ী অবসায়নের মাধ্যমে এসব গ্রাহকদের দেনা পরিশোধ করা সম্ভব। তবে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সততা, সমন্বয় ও সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন। শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি আয়োজিত ‘ই-কমার্স খাতের চ্যালেঞ্জ: সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট ও করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এমন অভিমত প্রকাশ করেন বক্তারা। সভায় কর্পোরেট আইন বিশেষজ্ঞ ও ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো এখন জনগণের পাওনা টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন? অনেকে বলাবলি করছেন, যে সরকারি অর্থায়ন থেকে জনগণের পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু জনগণের করের টাকা সরকারের কাছে আমানত। একজনের লু/ট/পা/টে/র টাকা পরিশোধে আমি ট্যাক্স দিইনি, এটা সংবিধানবিরোধী।
ইভ্যালি অবসায়ন করে দেনা পরিশোধের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, এখন কোম্পানি আইন অনুযায়ী ওই কোম্পানিকে অবসায়ন করে যে অর্থ পাওয়া যায় তা দিয়ে পাওনা পরিশোধ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে যে লোকের ২০ হাজার টাকা পাওনা আছে তাকে এক হাজার টাকা দেওয়া সম্ভব হলে, তাকে ওইটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই করের টাকায় এই পাওনা পরিশোধ করা যাবে না।
ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম আরও বলেন, আইনের অভাব নাই, নতুন আইনেরও দরকার নাই। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা যদি বাড়ানো যায় এবং সেই প্রতিষ্ঠানগুলো যদি সততার সাথে কাজ করে তাহলে এ ধরনের অনিয়ম ঠেকানো যাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশন ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) যেসব আইন আছে, তা দিয়ে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। ব্রাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আরএফ হোসাইন বলেন, ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জসহ বেশ কয়েকটি ই-কমার্স কোম্পানি দেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় বিপদ সংকেত দিয়েছে। ইভ্যালিসহ সম্প্রতি যা ঘটেছে তা সকল পক্ষের লোভের কারণেই হয়েছে। এখন জনগণের বিপুল পাওনা টাকা কোথায় আছে, তা খুঁজে বের করে যেটুকু পাওয়া যায়, তাই ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সভায় ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল, বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর প্রমুখ বক্তব্য দেন।
গত কয়েক বছরে দেশে বেশ কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আবির্ভাব হয়েছে। তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান গুলোর বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমানের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তবে এই সকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। এমনকি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বেশ কিছু নীতিমালা প্রনয়ন করেছে সরকার।