Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার পদ্মা সেতু ইস্যু নিয়ে মোশাররফ : বিশ্বব্যাংককে খুশি করতেই আমাকে জেলে পাঠানো হয়

এবার পদ্মা সেতু ইস্যু নিয়ে মোশাররফ : বিশ্বব্যাংককে খুশি করতেই আমাকে জেলে পাঠানো হয়

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। এসব বিষয়ে দেশের একটি অন্যতম গনমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

দেশের একটি অন্যতম গনমাধ্যম : দুই মন্ত্রীকে বাদ দিয়ে সেতু বিভাগের সচিব হিসেবে আপনাকে কেন মামলার প্রধান আসামি করা হলো?

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে অভিযুক্ত করার সাহস পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রধানমন্ত্রীও মন্ত্রীদের নামে মামলা করতে রাজি হননি। কারণ, মন্ত্রীদের দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত করা মানেই সরকারকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণ করা। বিষয়টি সারা বিশ্বে প্রচার হতো। এর জন্য দুই মন্ত্রীকে অভিযুক্ত করা হয়নি। আর মন্ত্রীর পরের ব্যক্তি সচিব। তাই সচিব হিসেবে আমাকে মামলার প্রধান আসামি করা হয়।
দেশের একটি অন্যতম গনমাধ্যম : জেলে যেতে হলো কেন?
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: বিশ্বব্যাংককে খুশি করতে আমাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। সরকারের ধারণা ছিল আমাকে জেলে পাঠালে বিশ্বব্যাংক খুশি হয়ে ঋণ দেবে। কিন্তু আমি জেলে যাওয়ার পরও বিশ্বব্যাংক আমাকে পদ্মা সেতুর জন্য ঋণ দেয়নি। কারণ, আমাকে জেলে পাঠানোর পরও বিশ্বব্যাংক খুশি হয়নি। তবে দুদকের মামলার দুই দিন পর ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারি, আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এরপর ২৬শে ডিসেম্বর ২০১২ আমি হাইকোর্টে জামিনের জন্য যাই। কিন্তু বিচারপতি বলেন, এক সপ্তাহ পর নিয়মিত বেঞ্চ বসবে, এটি তখন রেগুলার বেঞ্চে ওঠাবেন। এরপর আদালত থেকে বের হওয়ার পথে দুদক আমাকে ও তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফেরদৌসকে গ্রেপ্তার করে। অবশেষে সাত দিনের রিমান্ড শেষে ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি তাকে কারাগারে যেতে হয়।

দেশের একটি অন্যতম গনমাধ্যম : সেতু বিভাগের সচিব হিসেবে আপনি কারাগারে যাওয়ার পর বিশ্বব্যাংক কেন খুশি হয়নি?
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানকে বিশ্বব্যাংকের টার্গেট ছিল কারাগারে পাঠানোর। বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরাও মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাকে কারাগারে পাঠানোর প্রস্তাব করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রস্তাবে রাজি হননি। ফলে আমাকে জেলে পাঠানোর পরও বিশ্বব্যাংক খুশি হতে পারেনি।

দেশের একটি অন্যতম গনমাধ্যম : জেল থেকে বের হলেন কীভাবে?
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: আমার স্ত্রীর অনুরোধে। মশিউর রহমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমার জামিনের বিষয়টি তুলে ধরেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী আইনমন্ত্রীকে ডেকে আমার জামিনের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন। জেলা জজ আদালতে এ বার্তা পৌঁছে দেন আইনমন্ত্রী। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ আমি জামিন পাই।

দেশের একটি অন্যতম গনমাধ্যম : জেল থেকে বের হয়ে চাকরিতে যোগ দিলেন কীভাবে?
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: জেলে যাওয়ার পর সাসপেন্ড হয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর এমন কথার দুই মাস পর ২০১৩ সালের ৬ জুন অন্তর্বর্তীকালীন বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। পুনর্বহাল হলেও দেড় বছর তাকে ওএসডিতে রাখা হয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে তিনি প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য হিসাবে নিযুক্ত হন। তারপর আমি একটু স্বস্তি পেলাম, অন্তত বসার জায়গা পেলাম। যদিও পরে তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান করা হয়। আমি বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত আছি।

দেশের একটি অন্যতম গনমাধ্যম : মামলা থেকে রেহাই পেলেন কীভাবে?
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া : দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুর মূল্যায়ন কমিটি পরিবর্তন করেছি বলে অভিযোগ করেছে দুদক। আর বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ, মূল্যায়ন সঠিকভাবে হয়নি। কিন্তু আমি তাদের অভিযোগের জবাব দিয়েছিলাম যে তারা সাড়া দিতে পারেনি। অবশেষে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্রের কোনো প্রমাণ পায়নি দুদক। মামলার দেড় বছরেরও বেশি সময় পর মামলার প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয়।

প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতুর দুর্নীতের অভিযোগে কারাভোগ করতে হয়েছিল তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে। তবে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমান না হওয়া তিনি অব্যাহতি পান মামলা থেকে

About Babu

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *