পদ্মা সেতু মানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, বাঙালি জাতিকে দাবায় রাখতে পাবা না। আজ শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন বাঙালি জাতিকে চেপে রাখা যায় না। পদ্মা সেতু প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ আজ কারো পায়ে দাঁড়ায় না। বাংলাদেশ নিজের দুই পায়ে দাঁড়িয়েছে। তাই পদ্মা সেতু আমাদের গর্ব, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ যে তা করতে পারে তা সারা বিশ্বকে দেখানো হয়েছে।
শামীম ওসমান মানে অন্য কিছু, শামীম ওসমান মানে নতুন কিছু। বক্তব্য দিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে আলোচনায় থাকা এই এমপি এবার স্লোগানে মঞ্চ কাঁপিয়ে দিয়েছেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন আয়োজিত বিশাল ও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে যোগদানের আগে প্রবীণ রাজনীতিবিদ তাৎক্ষণিক বৃষ্টিতে আনন্দ সমাবেশে হাজার হাজার মানুষকে কাক ভেজা দিয়ে প্লাবিত করেন। নারায়ণগঞ্জের সামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের উন্মুক্ত মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার আগে তিনি জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় শেখ হাসিনা স্লোগান দেন। আর সেই মুহূর্তেই যেন পাল্টা স্লোগানে কেঁপে ওঠে হাজার হাজার মানুষ। বক্তৃতায় শামীম ওসমান বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাঙালি জাতিকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী দেখিয়েছেন বাঙালিদের চাপে রাখতে পারেনি কেউ।
বিশ্ব দেখেছে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে আমরা নিজের দুই পায়ে দাঁড়িয়েছি। শেখ হাসিনা এখন শুধু আওয়ামী লীগের নয়, দেশের সম্পদ, আপনার সম্পদ। পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন এ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। পদ্মা সেতুর আদলে নির্মিত বিশাল মঞ্চের পাশে ছিল বিশাল টিভি পর্দা। যেখানে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজার হাজার মানুষ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন। এর আগে সকালে সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি বের হয়। এ সময় মুষলধারে বৃষ্টি হলেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সমাবেশে অংশ নেন। শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া থেকে র্যালি বের হয়। পরে তা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এসময় অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান তার বক্তব্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনেকেই বলেছেন পদ্মা সেতু হবে না, বাংলাদেশ থাকবে না। তারাই বাংলাদেশকে এমন জায়গায় ছেড়ে যেতে চায় যেখান থেকে বাংলাদেশ দাঁড়াতে পারবে না। জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশপ্রেম, সততা ও দৃঢ়তা আজ সারা বিশ্ব দেখেছে। আজ সারা বিশ্বের কাছে পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার, পদ্মা সেতু মানে বাংলাদেশ কারো পায়ে নয়, নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। শামীম ওসমান বলেন, এখন অনেকেই গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন। যেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন, সেদিন তাকে ৩২ নম্বর বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে প্রয়াত করা হয়। তখন কোথায় ছিল তাদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার? যে মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরে আমার মা বোনকে পাকবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল, বাংলাদেশের নিরীহ মানুষকে জ// বাই করেছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের নারায়ণগঞ্জের পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছিল।
সেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম নারায়ণগঞ্জে। সংসদে একজন নেতা আমাকে বললেন, দেখা করব। তিনি সত্যিই একটি কটাক্ষপাত। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে ১৬ জুন আমাদের বো// মা হামলায় ২০ জন প্রয়াত এবং অনেকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। হামলার পর আহত হয়ে একটাই কথা বলেছি- শেখ হাসিনাকে বাঁচান। আর বিএনপি নেতা বলেন- হয় আমরা জাতির জনকের নিরাপত্তা আইন পাশ করেছি নয়তো নিজেরাই বো// মা মেরেছি। সেই ষড়যন্ত্র এখনো থামেনি। সামনে ষড়যন্ত্র আছে, সবাই প্রস্তুত থাকুন, এক থাকুন। এসময় উপস্থিত ছিলেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) এমপি, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ, পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম, জেলা পরিষদের প্রশাসক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, শনিবার (২৫ জুন) সকালে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান শহরের সামসুজ্জোহা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও জনগনের উদ্দেশ্যে অনেক কথা বলেছেন। তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, নানা ষড়যন্ত্রের পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন যে বাংলাদেশ পারে। শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সম্পদ নন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বপ্ন। শেখ হাসিনা আপনাদের, আমাদের সবার সম্পদ, বাংলাদেশের সম্পদ। আগামীতে বাংলাদেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে তা নির্ভর করছে শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের ওপর।