দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। পদ্মা সেতু ইতোমধ্যে সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রমত্ত পদ্মা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। পদ্মার প্রবল স্রোত উপেক্ষা করে স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সব ধরনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন নদীর দুই তীরে দাঁড়িয়ে দেখা যায় বহু কাঙ্খিত স্বপ্নের সেতুটি।
তথ্যমন্ত্রী মো. হাছান মাহমুদ বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বাড়তি কোনো অর্থ ব্যয় করা হয়নি। এর বিপরীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যয় করেছেন ২০ হাজার কোটি টাকার কম। এই টাকা তিনি সংরক্ষণ করেছেন। কারণ, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৪ কোটি টাকার বেশি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১.৮ কিলোমিটার। সোনার দামের সাথে তুলনা করা হলে সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হতো ৫৮ হাজার কোটি টাকা। সেখানে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য সাড়ে তিন গুণ বেশি। আবার রেলওয়ে ব্রিজসহ দোতলা। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ একটি রেল সেতু মাত্র। কোনো অ্যাপ্রোচ রোড নেই। সে হিসেবে পদ্মা সেতুতে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কিন্তু তা হয়নি। এর পরিবর্তে মূল সেতু নির্মাণে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা।
বুধবার বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পদ্মা সেতুর অবদান শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আ.লীগের প্রচার উপ-কমিটি এ সেমিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাহাব উদ্দিন চুপ্পুর আবুল বারকাত। আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খান মাহমুদ আমানত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ। বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর। তথ্যমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা না থাকলে কখনো পদ্মা সেতু হতো না। এই সেতুর মালিক জনগণ। সবার জন্য সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার জন্য, এমনকি মির্জা ফখরুলের জন্যও। বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আপনি স্বাগত জানাই. তবে আগে জনগণের কাছে ক্ষমা চান।
আবুল বারকাত বলেন, সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্বে যে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় তার প্রমাণ পদ্মা সেতু। যদিও সবাই একমত যে তাদের নিজস্ব তহবিল দিয়ে এটি সম্ভব নয়, আমরা, অর্থনৈতিক সমিতি, হিসাব করেছিলাম যে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে চারটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেতে পারে। সেটাই হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ৫ বছর পর ২০২৭ সালে সেতুটি জিডিপিতে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ অবদান রাখবে। ৪০তম বছরে নিট মুনাফা হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। শততম বছরে মুনাফা হবে ১০ লাখ কোটি টাকার বেশি। অর্থনীতিবিদদের কথা কেউ শুনবে না। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংকের কারণে বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই যা উন্নত হয়েছে।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতুতে ফ্র্যাকশনাল পেন্ডুলাম বিয়ারিং এর ধারণক্ষমতা প্রায় ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোনো সেতুতে এ ধরনের বিয়ারিং বসানোর তথ্য জানা যায়নি। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প মোকাবিলায় সক্ষমতা অনুযায়ী পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই পদ্মা সেতু ভূমিকম্প ও মাটি ক্ষয়সহ সব ধরনের প্রভাব প্রতিহত করতে সক্ষম। আর সেই সক্ষমতা গড়ে তুলতেই পদ্মা সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।