সম্প্রতি সিলেটে ভয়বাহ বন্যায় ঘর-বাড়ি হারিয়ে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কোনো ভাবে এক বেলা, আবার না খেয়েও দিন পার করতে হচ্ছে তাদেরকে। তবে তাদের এই দুর্দিনে রীতিমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকেই। আর তাদের মধ্যে একজন ফারাজ করিম চৌধুরী।
তিনি চট্টগ্রাম-৬ আসনের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বড় সন্তান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি। বিশেষ করে সমাজের বিভিন্ন মানবিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তার ব্যাপক ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। দেশের সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
গত কয়েকদিন ধরে ওই যুবক বন্যা কবলিত এলাকায় অবস্থান করছেন। সেখানে বানভাসি মানুষের পাশে শুকনো খাবার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাহায্যের ব্যবস্থা করেন তিনি। তিনি ইতোমধ্যে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সহযোগিতায় বন্যা দুর্গতদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন।
তবে বানভাসি জনগণকে সহযোগিতা করতে গিয়ে তাকে নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। অসহায় মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে তাকে যেতে হচ্ছে বন্যা কবলিত প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এ জন্য তাকে ট্রলার ব্যবহার করতে হয়। তবে কিছু ট্রলার মালিক ও নৌকার মাঝি অতিরিক্ত ভাড়া চাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বুধবার (২২ জুন) রাতে ফারাজ চৌধুরী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টও করেন। সেখানে তিনি বলেন, ট্রলারমালিকরা ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা ভাড়া ৮৭ হাজার চাচ্ছেন।।
ফারাজ করিম চৌধুরীর ফেসবুক পোস্টটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
ত্রাণ দিতে প্রথম যখন ট্রলারে উঠলাম, তখন শুধু মিষ্টি কথাবার্তা ছিল। তাদের সাথে খাবার শেয়ার করলাম। একজন মানুষ অন্য লোকেদের সাথে যেভাবে আচরণ করে আমি ঠিক সেইভাবে করছিলাম। ধর্ম আমাকে শিখিয়েছে বলে আমি তাদের সাথে সময় কাটিয়েছি। সময়ের সাথে সাথে তারা আমাকে কিছু এলাকায় ত্রাণ বিতরণ থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিল। যে জায়গায় ট্রলার নিয়ে যেতে ৪ ঘণ্টা লাগবে, সেখানে ৮ ঘণ্টা লাগবে বলে ভাড়া নির্ধারণ করতে চেয়েছে। সবশেষে দেখি, যে ভাড়া ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা, সেই ভাড়া ৮৭ হাজার টাকা চাচ্ছে।
আমি জানি ট্রলার মালিক ও নাবিকদের খরচ আছে। তারাও অনেক কষ্টে আছে। তবে সবাইকে সহনশীল হতে হবে। জনগণ তাদের টাকা আমাকে আমানত হিসেবে দিয়েছে। আমি সেই টাকার এক টাকাও নষ্ট করতে পারব না।
ট্রলার মালিক ও নাবিকদের পাওনা যথাযথভাবে পরিশোধ করব। আমি তাদের প্রতারণা করব না। অযৌক্তিক ভাড়া না চাওয়া এবং ভবিষ্যতে ট্রলার না দেওয়ার হুমকির চেয়ে বেশি ভাড়া না দেওয়াই তাদের জন্য ভালো। মহান আল্লাহ যখন আমাকে মানুষের সেবা করার ক্ষমতা দিয়েছেন তখন আমি সাঁতার কাটব এবং প্রয়োজনে সেখানে যাব।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফারাজ করিমের এমন একটি স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়ার পরপরই মুহুর্তে মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলতে দেখা যায়। অনেকেই এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে অসাধু ব্যক্তিবর্গদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।