জজ হলেন বিজ্ঞ একজন ব্যক্তি। তার প্রত্যেকটি কথা ও চালচলনের মধ্যে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে। তিনি সত্য মিথ্যার পার্থক্য যাচাই বাছাই করে আদালতে রায় দিয়ে থাকেন। তিনি তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সবকিছু ভালো করে অণুবেক্ষণ করে তারপর সিদ্ধান্তে উপনীত হন। সম্প্রতি জানা গেল একটি মামলায় জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জিন্নাহ জাহান ঝুনু করছেন ভুলের উপর ভুল।
একটি মামলায় জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জিন্নাহ জাহান ঝুনু হাইকোর্ট আসামিদের জামিন দিলেও জামিন আবেদন নামঞ্জুর করার আদেশ দেন। তিনি আদেশটিকে “অজান্তে” এবং “অনিচ্ছাকৃত” হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। একই সঙ্গে আগামীতেও দায়িত্ব পালনে সচেতন থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
এরপর হাইকোর্ট তাকে আদালত অবমাননার দায়ে বেকসুর খালাস দেন এবং ভবিষ্যতে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন। এ প্রসঙ্গে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন বলেন, বিচারক ভুল করেছেন।
অপর একটি মামলার শুনানিতে বিচারপতির কথা উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেন, আমাদের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য আজ সকালে একজন বিচারক হাজির হয়েছিলেন। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা একজন আসামিকে জামিন দিয়েছি। তিনি (বিচারক) লোকটিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আবারও আদালতে আসার আগেই জামিনে আসছেন তিনি। আমরা আদালতে বাংলায় আদেশ দিলেও ইউনিও বাংলায় আদেশ দিয়েছে। কিন্তু তিনি (বিচারক) তা না বুঝে ভুল করেছেন। তিনি জামিনও পেয়েছেন। বিচারক ভুল করেছেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল হাসেম জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার (২০ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. বিচারপতি শেখ জাকির হোসেন ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে বিচারকের পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আবুল হাসেম। আসামি মো. জাকিরুল আইনজীবী ছিলেন। সারোয়ার আলম চৌধুরী।
এর আগে জিন্নাহ জাহান ঝুনু হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে হাজির হয়ে মৌখিকভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। তার উপস্থিতিতে শুনানি শেষে হাইকোর্ট তার ক্ষমা প্রার্থনা মঞ্জুর করে তাকে মুক্তি দেন। মামলার বিবরণে জানা যায়, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ থানার বাহাদুরাবাদ ভাটিরপাড়া এলাকায় জাকিরুলকে (৩৯) গ্রেপ্তার করে মো. পরে ওই দিনই জাকিরুলের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ক ধারায় মামলা হয়।
মামলায় জামিন নামঞ্জুর হলে জাকিরুল হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। পরে গত ১০ এপ্রিল জাকিরুলের জামিন আবেদন বিধিমালাসহ মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। মামলাটি জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন ছিল। গত ২৪ মে আসামিরা হাইকোর্টে জামিন চেয়েছিলেন। একই দিন জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করার আদেশ দেন। জামালপুরের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক জিন্নাত জাহান ঝুনু (অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ) জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে ওইদিনই জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
বিচারক আদেশে বলেন, মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন এবং নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এমতাবস্থায় আদালত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আসামিদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনলে ৬ জুন হাইকোর্ট বিচারককে কারণ দর্শানোর জন্য ২০ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। সোমবার বিচারক জিন্নাহ জাহান ঝুনু আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।
প্রসঙ্গত, ভুল সাধারণত মানুষই করে থাকে। তবে বার বার ভুল করাটা স্বাভাবিক কোনো বিষয় না। জজ হয়ে এই ধরণের ভুল কেহই মেনে নিতে পারছেনা। বিচারকার্য অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এমন বিষয়ে ভুল করা সমীচীন নয় বলে দাবি অনেকের।