পাটনা থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে সদ্য ছেড়ে যাওয়া একটি স্পাইস জেট বিমানের ডানায় হঠাৎ করে আগুন লেগে যায়। ওই বিমানটি ১৮৫ জন যাত্রী বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আগুন লেগে যাওয়ার কারণে পাটনা থেকে মাঝ আকাশে উড়ে যাওয়া বিমানটি ফের পাটনা বিমানবন্দরের জরুরি অবতরণ করানো হয়। জানা যায়, পাখির ডানার ঝাপটার কারণে বিমানটির একটি ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। যার কারণে বিমানের যাত্রীদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দরে খবর দেওয়া হয়। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে পাইলটদের জরুরি অবতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু পাটনা বিমানবন্দর এমন একটা জায়গায় যেখানে রানওয়ের একদিকে গাছের লম্বা সারি আর অন্যদিকে রেললাইন।
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই জয়প্রকাশ নারায়ণ বিমানবন্দরের রানওয়েতে বিমান অবতরণ করানো খুব সহজ নয়। তার ওপর এমন জরুরি অবস্থা। যাত্রী ও নাবিকরা কি জীবিত ফিরতে পারবে? নাকি মাঝ আকাশে ইঞ্জিন থেকে পুরো বিমানে আগুন ধরবে? উদ্বিগ্ন ছড়িয়ে পড়ে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টসহ সকলের মাঝে।
এ ঘটনায় সবাই খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। স্পাইসজেট বোয়িং ৭৩৭-এর মহিলা পাইলট ক্যাপ্টেন মনিকা খান্না এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন।
মনিকার সাহস ও ধৈর্যের প্রশংসা করেছেন ডিজিসিএ-র আধিকারিকরা সহ অনেক এয়ারলাইন্সের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এই পরিস্থিতিতে ‘ওভারওয়েট ল্যান্ডিং’-এর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মনিকা তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, মনিকা ২০১৬ সালে স্পাইসজেটে যোগ দিয়েছিলেন। চার বছরে তিনি প্রচুর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। কিন্তু এমন ভ/’য়ান”ক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি তাকে। প্লেনটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরে, ক্রু সদস্যরা মনিকাকে জানান যে একটি পাখির ডানা ঝাপটা লেগে বিমানের একটি ইঞ্জিন থেকে আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছে।
বিমানের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য মনিকা মাঝ আকাশে সব ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়। এরপর ধীরে ধীরে প্লেনটিকে রানওয়েতে নামিয়ে আনেন তিনি। এফও (ফার্স্ট অফিসার) বলপ্রীত সিং ভাটিয়ার অবদানও অনস্বীকার্য। অবতরণের সময় তিনি মনিকাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন।
তিনি ১৮৫ যাত্রীকে নিরাপদে বিমানবন্দরে ফিরিয়ে আনেন। এই ঘটনার পর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মনিকার ভক্তের সংখ্যা। একজন নারী পাইলট হিসেবে তিনি দেশবাসীর সামনে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
ইনস্টাগ্রামে তার ৯০০০ এর বেশি ফলোয়ার রয়েছে। মনিকা দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। নেপাল থেকে আর্মেনিয়া ও মরিশাস পর্যন্ত তিনি বিস্তর ভ্রমণ করেছেন।
এই সাহসী নারী পাইলটকে তার এই বুদ্ধমত্তার মাধ্যমে বহুসংখ্যক মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য তাকে কয়েক দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবে সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তদন্ত সম্পূর্ণ করার পর তিনি আবার বিমান উড়াতে পারবেন। তবে তিনি যে উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন, তার কারনে তিনি প্রশংসায় ভাসছেন এবং সকলের নিকট থেকে কুর্নিশ আদায় করে নিলেন।