Tuesday , December 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / পুলিশের এমন ‘কড়া’ প্রতিক্রিয়ার উদ্দেশ্যটা কী? মিজানুরকে ‘আটক’ নিয়ে এতো লুকোচুরি কেন?: মনজুরুল ইসলাম

পুলিশের এমন ‘কড়া’ প্রতিক্রিয়ার উদ্দেশ্যটা কী? মিজানুরকে ‘আটক’ নিয়ে এতো লুকোচুরি কেন?: মনজুরুল ইসলাম

ঢাকার জুরাইনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের প্রধান মিজানুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দিয়েছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ওয়ারী গোয়েন্দা অধিদপ্তরের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ৯ জুন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি ডিবি অফিস থেকে বের হন, এরপর ওখান থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি চলে গেলেন।

গত ৬ জুন ঢাকার জুরাইনে ট্রাফিক আইন অমান্য করায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই আইনজীবীকে আটক করে পুলিশ। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সংঘর্ষের একপর্যায়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট ওই নারীকে স্পর্শ করে দম্পতিকে পুলিশ বক্সে নিয়ে যান। তখন এলাকার লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তারা পুলিশ বক্স লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এতে এক সার্জেন্টসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে যান নাগরিক অধিকারকর্মী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, পুলিশের চাঁদাবাজিতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। মূলত আজ (৬ জুন, এক সংবাদ মাধ্যমে) প্রকাশিত হয়। তার বক্তব্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয় পুলিশ।

কিন্তু বিষয়টি সেখানেই থেমে থাকেনি। এ ঘটনায় জুরাইন থানায় মামলা দায়ের করে মোটরসাইকেলে থাকা নারীসহ ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। ৮ জুন তাদের ঢাকার সিএমএম আদালতে তোলা হয়। অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন চিফ ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন ওই নারীর জামিন মঞ্জুর করেন এবং বাকি পাঁচজনকে তিন দিন আটকে রাখেন। আটককৃতদের মধ্যে একজন আইনজীবী এবং একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী রয়েছেন। আটকের প্রতিবাদে সিএমএম আদালতের সামনে বিক্ষোভ করেন শতাধিক আইনজীবী।

আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নেতা, ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যান্য বিচারকরা কয়েক দফা বৈঠকে বসেন। ডিএমপির অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশনের উপ-কমিশনার মো. জাফর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে হাইকোর্টের প্রাক-বিচার আটকের আদেশের প্রতিপালন নিশ্চিত করা হয়েছে এবং দুই আইনজীবীকে বিচারপূর্ব আটক ছাড়াই কারাগারে রাখার মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়েছে (৬ জুন, যুগান্তর অনলাইন)।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুই আইনজীবীকে আটকের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। লিখিত আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারক খিজির হায়াতের উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতে মামলার নথি উল্লেখ করে বিচার-পূর্ব আটক কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। আদালত রোববার নথি পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ওইদিনই পরবর্তী শুনানি হবে। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে জানান, আইনজীবীদের প্রতিরোধমূলক আটক সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে এবং আটক ব্যক্তিরা কারাগারে রয়েছেন। রোববার চেম্বার আদালত মামলার নথি তলব করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন। মঙ্গলবার (১৪ জুন) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে শুনানি চলাকালে ওই দুই আইনজীবীকে নিম্ন আদালতে জামিন চাইতে বলা হয়। ওই দিন সিএমএম আদালতে জামিনের আবেদন করলে এক আইনজীবী জামিন পান।

এসব ঘটনা পুলিশ, বিচারক ও আইনজীবীদের ভূমিকার পাশাপাশি বিচার বিভাগ বিশেষ করে নিম্ন আদালতের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

গণমাধ্যমে একজন নাগরিকের বক্তব্যে পুলিশের এমন ‘কঠোর’ প্রতিক্রিয়ার উদ্দেশ্য কী? তাকে গ্রেফতার করতে লুকোচুরি খেলতে হলো কেন? কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হলে তার নিকটাত্মীয় বা বন্ধুকে গ্রেপ্তারের স্থান ও সময় এবং কোথায় বা কার হেফাজতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানাতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অন্য অনেকের মতো মিজানুরের গ্রেপ্তারের বিষয়টি অনুসরণ করা হয়নি। এমনকি তার বিরুদ্ধে ভয়াবহ ডাকাতি ও হত্যার অভিযোগও আনা হয়েছে।

জনগণের ‘ক্ষোভ’ ও মিজানুরকে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’
ট্রাফিক পুলিশের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে তার অভিমত ব্যক্ত করেন জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। তিনি ঘটনাটিকে স্থানীয় জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পুলিশের দায়ের করা মামলা নিয়ে তিনি ফেসবুকে দুটি স্ট্যাটাসও দেন। একজন লিখেছেন: “দুটি জিনিস ঘটতে বলা যেতে পারে। ক. মোকদ্দমা। দুই. মামলার ভয়ে ঘুষের ব্যবসা। আমি এমন একটি দেশে বাস করি যেখানে আমি ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই, কিন্তু তা হচ্ছে না’ (৯ জুন, প্রথম আলো অনলাইন)।

বুধবার গণমাধ্যমে বক্তব্য ও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শ্যামপুর পুলিশ ও ডিবি (গোয়েন্দা বিভাগ) প্রথমে তাকে গ্রেপ্তারের কথা অস্বীকার করে। এমতাবস্থায় মিজানুরের দেশ-বিদেশের বন্ধু-বান্ধব ও সমর্থকরা তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হন, তাদের কেউ কেউ মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। চলে যাওয়ার সময় নাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি শামিল।

আইনজীবীদের ‘রিমান্ড-বিতর্ক’
জুরাইনের প্রশ্ন করা প্রশ্নয় অতিরিক্ত চিফট্রোপলিটন ম্যাস্ট্রেটের মালিক রিমান্ড মঞ্জুর করা নিয়ে বিতর্ক। যাঁদের রিমান্ড মঞ্জুর হয়, তার মধ্যে সদস্য আইনজীবী; এর ফলে আদালত প্রাঙ্গণ উত্তপ্ত হতে পারছেন। আইনজীবীদের সঙ্গে বলেছে যে কথোপকথন জানা যায়, এই কথায় আসামিদের কোনো যৌক্তিকতা বা যোগসূত্র ছিল না। দ্বিতীয়টি, এই প্রশ্নর এবং যে বর্ণনার মাধ্যমে বটে তুলে ধরেছেন, সেই অভিযোগের সাথে পুলিশ পুলিশ এবং পুলিশও। একই সাথে রিমান্ড হাইকোর দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া ব্যক্তিদের কাছে সেই ব্যক্তিটির কাছে একটি সন্দেহজনক এবং অবিবেচক কাজ।

আদালত রিমান্ড করার পরে ‘নাটকীয়তা’ আরও বলা যায়। আইনবীদের আন্দোলনের আইনজীবী সমিতির নেতারা, ডিএমপির লালবাগের নেতৃত্বের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং চিফ ম্যাজিস্ট্রেট অন্য বিচারকেরা কয়েক দফায় আলোচনায় এবং ‘মৌখিকভাবে’ রিমান্ডের আদেশ স্থগিত করার জন্য নির্বাচন করা হয়। । আদালত আপনাকে নয়, আশ্চর্যজনকভাবে পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সংবাদমাধ্যমের কাছে রিমান্ডের স্থিত পরিস্থিতি জানান। তবে নিম্ন নাগরিক রিমান্ড স্ট্যাগিত করার লিখিত বা সাধারণ আদেশ কেউ দেখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রশ্নগুলো ওঠাও স্বাভাবিক খুব যে পুলিশ চাওয়া আদালতে কোন উল্টো পথেই রিমান্ড, কেন আর আইনজীবীদের রিমান্ড অবস্থা? রিমান্ড স্থগিটার বা কোন আদেশ ছাড়াই তা কার্যকর? ‘মৌখিকভাবে’ রিমান্ড স্থগিতের আদালত বা সিদ্ধান্ত পুলিশকে জানাবেন? স্বতন্ত্র পরিস্থিতি ঘটতে পারে এমনটা মনে হতে পারে, আইন বা উচ্চ নির্দেশনা নয়, মহলের চাপে আবার ভিন্ন ভিন্ন আদালতের অবস্থান নির্ধারণ করা।

দুই আইন বীর রিমান্ডের আদেশের পর আদালতে মঞ্জুর পরম প্রদেশে বিক্ষোভ দেখান এবং এই আইনজীবীর আদালতের ফলে ‘মৌখিকভাবে’ রিমান্ড আদেশ স্থগিত করেন। নিজেকে নিয়ে আবেদনের প্রার্থীকে ঘোষণার হাইকোর্ট বিভাগ আপিল ডিজিটালও দ্রুত শুনানি হয়। যে চিফ মেট্রোপলিটনজিস্ট্রেট রিমান্ড মঞ্জুর, তিনি আবার এক জামিন মঞ্জুর করেন। রিমান্ড মঞ্জুর, ‘মৌখিকভাবে’ রিমান্ড স্থগিত, উচ্চ আদালতে এবং আইনজীবীর জামিন লাভ – আসামি আইনজীবী না হওয়া কোনো মানুষ হলে এই দ্রুত ঘটা সম্ভব ছিল। জুরাইয়ের লোককে পুলিশ, আইনবী ও নিম্ন ভূমিকায় মানুষের মধ্যে এই তথ্য জানাতে, ‘জোর তার’ বাইরেই এই দেশটির কথা বলেছে।

 

About Nasimul Islam

Check Also

দীর্ঘ ১৭ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন বিএনপি নেতা পিন্টু

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় খালাস পাওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *