Sunday , November 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / নৌকায় মাত্র কয়েক কিলোমিটার যেতেই গুণতে হচ্ছে ৫০,০০০ টাকা, এক কথা গেলে চলেন না গেলে নাই

নৌকায় মাত্র কয়েক কিলোমিটার যেতেই গুণতে হচ্ছে ৫০,০০০ টাকা, এক কথা গেলে চলেন না গেলে নাই

নৌকা এমন একটি জিনিস যেইটা আবহমানকাল থেকে হয়ে আসছে ব্যবহৃত। নদী, খাল-বিল পাড়ি দিতে নপুকার কোনো বিকল্প নেই। তবে যুগের সাথে সাথে প্রযুক্তির উন্নতি হবার কারণে তৈরী হয়েছে অনেক আধুনিক নৌযান। কিন্তু কৌকা দিয়েই মানুষ শুরু করেছিল প্রথম যাত্রা। সম্প্রতি জানা গেল মাত্র ১০ কিলোমিটার নৌলায় যেতে গুনতে হচ্ছে ৫০,০০০ হাজার টাকা।

মারুফ নামে এক কর্মচারী বলেন, আমি চাকরির জন্য সিলেটে থাকি। বাড়িতে আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জলাবদ্ধ। তাকে আনতে নৌকা ভাড়া করে এসেছি, কিন্তু কোনো নৌকা ৫০ হাজার টাকার নিচে যেতে চায় না। আমি ৪০ হাজার পর্যন্ত বলেছি। কেউ যায়নি।’
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর থেকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। যাত্রীরা জানান, ১০ কিলোমিটার যাত্রার জন্য তারা একটি নৌকা ভাড়া বাবদ ৫০,০০০ টাকা দাবি করছেন।

মারুফ আহমেদ তেলিখালে গ্রামের বাড়িতে পানিতে আটকে পড়া অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে নৌকা ভাড়া করে সালুটিকরে আসেন। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক প্লাবিত হওয়ায় এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে একমাত্র নির্ভরযোগ্য নৌকা হলেও এ নৌকা এখন দুর্লভ।

মারুফ বলেন, ‘আমি কাজের জন্য সিলেট থাকি। বাড়িতে আমার গর্ভবতী স্ত্রী জলাবদ্ধ। তাকে আনতে নৌকা ভাড়া করে এসেছি, কিন্তু ৫০ হাজার টাকার নিচে কোনো নৌকা যেতে চায় না। ৪০ হাজার পর্যন্ত বলেছি। কেউ যায় নি। ‘

সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নৌকায় করে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন যাত্রীরা। এ এলাকা থেকে বড় বড় বালুবাহী নৌকায় যাত্রী পরিবহন করা হলেও কোম্পানীগঞ্জ যেতে প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে এক থেকে দেড় হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। টাকা দিয়েও অনেক সময় নৌকা পাওয়া যায় না।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জাফির সেতুর বাড়ি কোম্পানীগঞ্জে।

“শুক্রবার, আমি একজন নৌকার মাঝিকে একটি প্লাবিত পরিবারকে উদ্ধারের জন্য ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত চেয়েছিলাম, কিন্তু নৌকার মাঝি রাজি হননি,” তিনি বলেন।

ইঞ্জিনচালিত নৌকা চালক তৈয়বুর রহমান বলেন, আমরা মালিকের নির্দেশ অনুসরণ করছি। মালিকপক্ষ এমন ভাড়া চেয়েছেন। ‘

শুধু এ এলাকায় নয়, পুরো বন্যা কবলিত সিলেটে নৌকার হাহাকার দেখা দিয়েছে। নৌকার অভাবে জলাবদ্ধ মানুষ আশ্রয়ে আসতে পারছে না; আপনি একটি জলমগ্ন বাড়িতে আটকে আছে.

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের বাসিন্দা নিহাল আহমেদ বলেন, “আমার পুরো পরিবার আটকা পড়েছে, তবে তাদের আশ্রয়ে নেওয়ার জন্য আমরা একটি নৌকা খুঁজে পাইনি।”

‘আমাকে 18,000 টাকায় একটি ডিঙ্গি কিনতে বাধ্য করা হয়েছিল। অন্য সময়ে এগুলো তিন হাজার টাকায় পাওয়া যায়। ‘

বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

এদিকে শনিবার সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। নগরীর অনেক বাড়ির ভেতরে কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। শনিবারও বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। এটা নিচে আসছে.

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছমির মাহমুদ নগরীর ঘাসিটুলা এলাকায় থাকেন। তার ঘরে পানি উঠেছে।

“আমার বিছানার উপর দিয়ে জল বইছে,” চামির বলল। জল দ্রুত বাড়ছে। পরিবার নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হলাম। ‘

বিচ্ছিন্ন কোম্পানীগঞ্জ

বন্যায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সিলেট থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। এ উপজেলায় বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট নেই।

এ ছাড়া কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার অধিকাংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে প্লাবিত হয়েছে জেলার অধিকাংশ উপজেলা ও শহর।

বন্যা বন্ধ না হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা।

তিনি বলেন, পানি দ্রুত বাড়ছে। সিলেটের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে শনিবার থেকে বন্যার্তদের উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে নৌবাহিনী। এর আগে শুক্রবার থেকে মাঠে নামে সেনাবাহিনী। তারা কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।

পানিবন্দি অবস্থায় আটকে পড়া লোকজনের অভিযোগ, প্রশাসনের কেউ তাদের খোঁজ নেয়নি। তারাও প্রশাসনের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, সিলেটের সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জের সড়কপথের সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ ছাড়া মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও ঠিকমতো কাজ করছে না।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে জানিয়ে ইউএনও বলেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় উঁচু ভবনগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, বানভাসিদের উদ্ধারে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের ইউএনওকে নৌকা কিনতে বলা হয়েছে। এ জন্য তাদের টাকাও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

বন্যায় ডুবে গেছে কোম্পানীগঞ্জ থানা ভবন। এ নিয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জ থানা ভবন চরমভাবে বন্যায় আক্রান্ত। বন্যায় থানার নিচতলা পুরোপুরি ডুবে গেছে। থানা এলাকাজুড়ে মোবাইল টাওয়ারগুলো অকেজো হওয়ায় থানার কোনো পুলিশ সদস্যের সঙ্গে এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।

‘থানার ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক বিদ্যুৎ না থাকার কারণে বিকল হয়ে পড়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক অকেজো হওয়ায় থানা এলাকার উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, শনিবার ভোরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে বিশেষ একটি দল উদ্ধার তৎপরতা চালাতে কোম্পানীগঞ্জ থানা এলাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, নৌকায় যেতে যদি দিতে ৫০,০০০ হাজার টাকা তাহলে এর থেকে দুঃখজনক আর কিছুই হতে পারে না তাও আবার মাত্র কয়েক কিলোমিটার পথ। একদল নীচ প্রকৃতির মনের মানুষেরাই বিপদের সময় সরল সোজা মানুষের কাছ থেকে সুবিধা লুটতে চায়। তারা বিবেক জ্ঞান বর্জন করে হয়ে ওঠে স্বার্থপর।

About Shafique Hasan

Check Also

লিপি ওসমানকে নিয়ে সিটি সেন্টারে শামীম ওসমান

দুবাইয়ের আজমান শহরের সিটি সেন্টার শপিং মলে আবারও দেখা মিললো নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *