আর কিছুদিন পর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দক্ষিণ বাংলার মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আর এই পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের মাধ্যমে কষ্ট লাঘব হতে যাচ্ছে দক্ষিণ বাংলার মানুষের। দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা নদীর উপর একটি সেতু নির্মিত হবে এমনটাই আশা করেছিলেন তারা। অবশেষে সেই পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার পর এখন শুধুমাত্র উদ্বোধনের অপেক্ষা।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নোবেল বিজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রোববার (১২ জুন) মাওয়ায় পদ্মা সেতু সার্ভিস-১ পরিদর্শনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস ও বিশ্বব্যাংকসহ সব বিরোধী দলকে আমন্ত্রণ জানাবে সরকার।
তিনি বলেন, সরকার সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। সেতুটির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে ষড়য’ন্ত্রমূলক ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার সেটা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে।
স্বপ্নের এই সেতুটি গড়ে তিনটি বিশ্বরেকর্ড গড়ে এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরায়। এরপর মাদারীপুরের শিবচরে জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
চল্লিশ তলার সমান পাইলিং, দশ হাজার টনের বেশি ধারণ ক্ষমতার বেয়ারিং আর নদী শাসনে এ মেগা স্ট্রাকচার গড়েছে বিশ্ব রেকর্ড।
স্রোতের বিচারে আমাজনের পরেই পদ্মার অবস্থান। পানি প্রবাহের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষে। তেমন একটি নদীকে বশে এনে নিজের টাকায় এমন ইমারত। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশে এর চেয়ে বড় উপলক্ষ আর কী হতে পারে! সেই উৎসবের প্রস্তুতি এখন পদ্মার দুই তীরে।
প্রতিটি স্তম্ভের নিচের মাটি আলাদা ছিল। শেষ পর্যন্ত ১২০ থেকে ১২৮ মিটার পাইলিং করতে হয়েছে। পিলারের ওপর দশ হাজার ৫০০ টন সহনশীল বেয়ারিং বসানো হয়েছে, যা একটি বিশ্ব রকের্ড। আবার রেকর্ড পরিমাণ নদী শাসন করে পদ্মাকে বাগে আনতে হয়েছে।
ইতোমধ্যে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর স্ট্রিট লাইটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সাত দিনে ৪১৫টি বাতি জ্বালানো হয়েছে। সেতুটি উদ্বোধনের দুই সপ্তাহ আগে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। তবে চোখ ধাঁধানো পদ্মা সেতুর আর্কিটেকচারাল লাইটি স্থাপন হবে উদ্বোধনের পর।
রোড লাইটিং সেতুটিকে রাতের পাশাপাশি দিনের বেলায় আলোকিত রাখবে। শুক্রবার (১০ জুন) ৬২টি বাতির সংযোগ দিয়ে পুরো সেতুর আলোকসজ্জার কাজ শেষ হয়েছে।
গত ৪ জুন প্রথম বাতি জ্বলে ২৪ ল্যাম্প পোস্টে। এর পরে, প্রতিদিন বিভিন্ন মডিউল এবং আলোর ভায়াডাক্টের উপর পরীক্ষা করা হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, ঘন কুয়াশা বা মেঘলা আকাশে আলো স্বল্পতায় অটো জ্বলে উঠবে বাতিগুলো।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন নিয়ে বিরোধী দলগুলো অনেক কটাক্ষ করেছে এবং এই পদ্মা সেতু অর্থায়ন নিয়ে শুরু হয়েছিল নানা সমালোচনা। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি নাকচ করে দেয়, যেটার পেছনে ছিল ষড়যন্ত্র। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কারণে অবশেষে বাস্তবায়ন হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু।