সাবিনা ইয়াসমিন, বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গের সব থেকে বড় নাম এটি। জাদুময় মিষ্টি কন্ঠের অধিকারী এই সঙ্গীত শিল্পীর আজ জন্ম দিন। বিশেষ এই দিনটিকে ঘিরে সিক্ত হচ্ছেন ভক্তদের আর আপনজনদের ভালোবাসায়। তার পরিবারের পাঁচ বোনের মাঝে চার বোনই গান করেছেন। তারা হলেন ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিন এবং সাবিনা ইয়াসমিন। একটি অনলাইন সংবাদ পত্রের পক্ষ থেকে এই কিংবদন্তীর প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আজ এই বিশেষ দিনে ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত সাবিনা ইয়াসমিন। সোশ্যাল মিডিয়াতে সাবিনা ইয়াসমিনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেকেই।
করোনার কারণে ঘরবন্দী জীবন পার করছেন সাবিনা ইয়াসমিন। তবে আজকের দিনটা তার জন্য অন্যরকম একটি দিন। যদিও এই দিনে কাছে নেই তার বাবা-মা আর বোনদের। যে কারণে আজকের জন্মদিনে তার মনটা একটু বেশিই খারাপ।
নিজের জন্মদিন প্রসঙ্গে সাবিনা ইয়াসমিন জানান,এখন তো করোনাকাল। অন্যান্যবার টেলিভিশনে স্পেশাল প্রোগ্রাম থাকত। এবার বাসাতেই আছি। আমার দুই-চারজন বান্ধবী ও মেয়ে আসবে। বাসাতেই রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া, গল্প-আড্ডা হবে।
জন্মদিন এলে আপনার কী উপলব্ধি হয়,এমন প্রশ্নের উত্তরে সাবিনা ইয়াসমিন জানান,জন্মদিন এলে ভালোই লাগে। বিশেষ দিন। খুশি হই। আবার আরেক দিক চিন্তা করলে- ওই দিকে একটা বছর, একটা বছর করে এগিয়ে যাচ্ছে। সেটার জন্য একটু মাঝে মধ্যে ভাবনা হয়। এই আর কী।
তিনি আরও জানান,আমি সব কিছুই পেয়েছি। আল্লাহর রহমতে অনেক বেশি পেয়েছি, আল্লাহ আমাকে অনেক বেশি দিয়েছেন। ভক্তরা আমাকে এত বেশি ভালোবাসেন, এর পর একজন শিল্পী হিসেবে আমার আর কোনো অপূর্ণতা বলতে কিছু নেই। সত্যি কথা, আমার জীবনে কোনো অপূর্ণতা নেই।
সাবিনা ইয়াসমিন দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে গানের ভূবনে আধিপত্য বজায় রেখেছেন।মরমী শিল্পী আব্দুল আলীম থেকে শুরু করে এখনকার শিল্পীরদের সঙ্গে অবিরাম গেয়ে চলেছেন। উপমহাদেশের বরেণ্য সুরকার আর,ডি,বর্মণের সুরে গান গাওয়া, বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী কিশোর কুমারের ও মান্না দের সঙ্গেও ডুয়েট গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সাবিনা।
সাবিনা ইয়াসমিন ওস্তাদ পি সি গোমেজের কাছে একটানা ১৩ বছর তালিম নিয়েছেন। মাত্র ৭ বছর বয়সে স্টেজ প্রোগ্রামে অংশ নেন। ছোটদের সংগঠন খেলাঘরের সদস্য হিসেবে রেডিও ও টেলিভিশনে গান করেন নিয়মিত। ‘নতুন সুর’ ছবিতে প্রথম গান করেন তিনি শিশু শিল্পী হিসেবে। এরপর ১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ এবং ‘মধুর জোছনা দীপালি’ গানটির মাধ্যমে তিনি প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে আত্ন প্রকাশ করেন। ছায়াছবিতে ১২ হাজারের মতো গান করছেন তিনি।
সাবিনা ইয়াসমিন গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘উল্কা’ সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। তিনি ২০১০ সালে চ্যানেল আই সেরা কন্ঠ নির্বাচনে একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাবিনা ইয়াসমিন সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার মোট ১৪টি, বাচসাস পুরস্কার মোট ৬টি, বিএফজেএ পুরস্কার লাভ করেন।
এছাড়া উত্তম কুমার পুরস্কার ১৯৯১ সালে, এইচ এম ভি ডাবল প্লাটিনাম ডিস্ক, বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ থেকে সংগীতে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি লাভ করেছেন ১৯৮৪ সালে, ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৯৭৫ সালে চলচ্চিত্র পূবাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৯৯০ সালে শেরে বাংলা স্মৃতি পদক, ১৯৯২ সালে অ্যাস্ট্রোলজি পুরস্কার লাভ করেন।
ক্যারিয়ারে পেয়েছেন সব। দেশি-বিদেশী সব পুরষ্কারই পেয়েছেন তিনি। তবে বর্তমান সময়টা বেশিই কাটাচ্ছেন বাড়িতে বসেই। আগের মত আর গানের জগতেও তেমন একটা সক্রিয় নন তিনি।