সীতাকুন্ডের অগ্নিকান্ডে ঘটেছে অনেক হতাহতের ঘটনা। আর তাতে স্বজনরা হারিয়েছে তাদের খুব কাছের প্রিয়জনদের। বিস্ফোরণের ঐ দিনটি তাদের জীবনে নিমে এসেছিলো কালো অন্ধকারের দিন। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝরে পড়লো অসংখ্য তাজা প্রাণ। সম্প্রতি জানা যায় বিস্ফোরণে হাত হারানো নুরুল আক্তার ও শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে যাওয়া খালেদুর রহমান।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কেশবপুর এলাকায় বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আর এ মামলায় মালিক পক্ষ থেকে কাউকে আসামি করা হয়নি। মামলার প্রধান দুই আসামি হলেন, দুর্ঘটনায় আহত দুই ব্যক্তি হাসপাতালে প্রয়ানমুখে কাঁতরানো দুজনকে।
গত বুধবার (৮ জুন) রাতে এ মামলা করা হয়।
তারা হলেন ওই দুর্ঘটনায় হাত হারানো নুরুল আক্তার এবং শরীরের ১২ শতাংশ হারানো খালেদুর রহমান।
নুরুল আক্তার বিএম কন্টেইনার ডিপোর উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন)। তাকে পুলিশের মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। দ্বিতীয় আসামি করা হয় ডিপো ম্যানেজার (প্রশাসন) খালেদুর রহমানকে। সীতাকুণ্ড থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফ সিদ্দিকীর দায়ের করা মামলার জবানবন্দি থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বাকি ৬ অভিযুক্ত সবাই বিএম ডিপোর কর্মকর্তা। তারা হলেন- ডিপোর সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্বাস উল্লাহ, সিনিয়র নির্বাহী মো. নাসির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুল আজিজ, কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম, একই বিভাগের নজরুল ইসলাম ও মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) নাজমুল আক্তার খান। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, কর্তৃপক্ষের গাফিলতি উল্লেখ করে আটজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিএম কনটেইনার ডিপোতে একটি কন্টেইনারে আগুন লাগে। রাত ১১ টার দিকে বিস্ফোরণটি ঘটে এবং অন্তত ৪৬ জন প্রয়াত হয়েছে। প্রয়াতদের মধ্যে ৯ দমকলকর্মী রয়েছেন। এ ঘটনায় চার শতাধিক মানুষ দগ্ধ হয়েছেন।
শনিবার রাতের ঘটনার পর গত চার দিনে কোনো মামলা হয়নি। মঙ্গলবার রাতে তড়িঘড়ি করে মামলাটি করা হয়। পুলিশ ওই রাতে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করেনি।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের দুটি কোম্পানির যৌথ বিনিয়োগে ২০১১ সালে এই বেসরকারি বিএম কন্টেইনার ডিপোটি স্থাপন করা হয়। এটি দেশের শীর্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের মালিকানাধীন। ডিপোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্মার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান। পরিচালক তার ছোট ভাই স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ।
এদিকে নুরুল আক্তারকে ১ নম্বর আসামি করায় হতবাক স্বজনরা। তাদের মতে, আগুন লাগার খবর শুনে কর্মস্থলে যে ব্যক্তি দৌড়ে গিয়ে আ/গুন নেভাতে গিয়ে হাত হারান তাকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।
নুরুল আক্তারের ভাই এ আর সোহেল জানান, ঘটনার দিন নুরুল আক্তার অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় যান। রাতে আ/গুন লাগার খবর শুনে কাজে ছুটে যান। আগুন নেভানোর চেষ্টায় নেমে পড়েন তিনি। হঠাৎ আ/গুন থেকে তার বাম হাত উড়ে গেল। নুরুলের একটি হাত কেটে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। মরণপণ লড়াই। তার অবস্থা গুরুতর। তাকে এক নম্বর আসামি করায় আমি হতবাক।
খালেদুরের জামাতা রকিব উদ্দিন ফাহিম জানান, দুর্ঘটনার সময় খালেদুর বাড়িতেই ছিলেন। আগুন লাগার খবর শুনে তিনি কর্মস্থলে ছুটে যান। তিনি সহকর্মীদের নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তার শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে যায়। যে কোনো মুহূর্তে অবস্থার অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এমতাবস্থায় মামলায় আসামি করা খুবই অমানবিক। টাকার বিনিময়ে ডিপোতে সেবা দিতেন। কেন তাকে অভিযুক্ত করা হবে?
সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে মালিকপক্ষকে আসামি না করার জন্য মো. আশরাফুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, মামলায় আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সঙ্গে ডিপো ব্যবস্থাপনায় দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ আনা হয়েছে। আরো অনেক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তদন্তে প্রাণনাশের অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রাণনাশ মামলা হবে।
প্রসঙ্গত, জীবন প্রয়ানের আশঙ্কায় থাকা সত্ত্বেও হতে হলে স্বরণীয় চট্রগ্রামের সীতাকুন্ডের বিস্ফোরণের ঘটনার আসামী। ভাগ্য কতটা খারাপ হলে জীবনে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে সেইটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবে ভাগ্য এখন তাদের কোনদিকে নিয়ে যায় তাই শুধু দেখার অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ।