একটি সেতু নির্মাণ করতে ব্যয় হয় প্রচুর পরিমাণ অর্থ। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্যই মূলত নির্মাণ করা হয় সেতু। আর সেই সেতুই যদি হয়ে যায় জনগনের দুর্ভোগের কারণ তাহলে এর থেকে দুঃখের আর কি হতে পারে। সম্প্রতি তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জে। কোটি টাকার নির্মাণাধীন সেতু ভেঙ্গে পড়ে প্রয়াত হয়েছেন এক শ্রমিক।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে নির্মাণাধীন সেতু ধসে লিয়াকত প্রামানিক (৩০) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের প্রয়ান হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ৮/১০ জন শ্রমিক। মঙ্গলবার (৬ জুন) বিকেল ৩টার দিকে প্রবল বর্ষণ ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে গার্ডার ভেঙে ঢালাই ও রড দিয়ে নির্মাণাধীন সেতুটি খালে তলিয়ে যায়।
প্রয়াত ছাত্তার প্রামাণিক সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার নাগারহা গ্রামের। রাতেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে।
আহতরা হলেন- ফরিদ (৩৫), শ্রীবাস হালদার (৩৩), শামসু (৪০), আলমগীর (২৫) ও নাঈম ইসলাম (১৮)। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠায়।
কালীগঞ্জ থানার ওসি আনিসুর রহমান জানান, গত কয়েক মাস ধরে কালীগঞ্জের বক্তারপুর-বরানগর বাইপাস সড়কের মোহনী এলাকায় সুবাইদা খালের ওপর সেতু নির্মাণের কাজ চলছিল। মঙ্গলবার টানা বৃষ্টির মধ্যে ৮/১০ জন নির্মাণ শ্রমিক রড বেঁধে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করছিলেন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে হঠাৎ গার্ডার ভেঙে সেতুর রড ও ঢালাই ভেঙে পড়ে। ফলে খালের পানিতে নির্মাণসামগ্রীর নিচে চাপা পড়ে শ্রমিক লিয়াকত নিখোঁজ হন। এ সময় অন্য শ্রমিকরা সেতু থেকে নেমে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে। সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার কাজ শুরু করে। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর রাত সাড়ে ৯টায় ব্রিজের নিচে চাপা পড়ে নিখোঁজ শ্রমিকের লাশ পাওয়া যায়।
স্থানীয়রা জানায়, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের আগস্টে নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও ব্যাপক অনিয়মের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, নির্মাণ কাজে গাফিলতি এবং যথাযথ তত্তাবধায়নের জন্যই মূলত ঘটে থাকে এমন দুঃখজনক দুর্ঘটনা। নির্মাণাধীন সেতু ভেঙ্গে সত্যিই একটি আশ্বর্যের বিষয়। সেতু ভেঙ্গে পড়ে প্রয়াত হওয়া শ্রমিকের পরিবারের হয়তো দুঃখের সীমা নেই।