Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বেতন বাড়াতে যাবেন না, তাহলে চাকরি হারিয়ে বেতনহীন হয়ে পড়বেন: প্রধানমন্ত্রী

বেতন বাড়াতে যাবেন না, তাহলে চাকরি হারিয়ে বেতনহীন হয়ে পড়বেন: প্রধানমন্ত্রী

গার্মেন্টস কর্মীরা দেখা যায় প্রায় সময় বেতন বেড়ানোর দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে থাকেন। আর সেই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে অনেক সময় আইন শৃঙ্খলা বাহীনির সাথে সংঘাতের সৃষ্টি হয় এবং তাতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনেনত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বেতন বাড়াতে গিয়ে চাকরি গেলে বেতনহীন হয়ে পড়বেন।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো ও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলনের কারণে কলকারখানা বন্ধ হলে চাকরি চলে যাবে। অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করলে তীরে-তীর দুটোই হারাতে হয়। তাহলে বেতন বাড়বে না, অবৈতনিক হতে হবে। এটাও সবার মনে রাখা উচিত।

মঙ্গলবার (৭ জুন) ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন-গণভবন থেকে কার্যত যোগ দেন।

তৈরি পোশাক ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানির বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শ্রমিকদের মজুরি থেমে নেই। আমরা নিজেরাই প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি, টাকা দিয়েছি। পোশাক কারখানার শ্রমিকরা যাতে সুবিধা পায় সে ব্যবস্থা করেছি। তাদের বেতন সরাসরি ভর্তুকি দিয়ে। সরাসরি ফোনে পরিশোধ করেছি। মালিককে দেইনি। তারপরও গার্মেন্টস শ্রমিকরা প্রতিবাদ করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, “আজ বেতন বাড়া, এই-ওটা নানা দাবি নিয়ে আন্দোলনে যায়। এই রপ্তানি বন্ধ হলে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে আমও যাবে, ছালাও যাবে। বেতন হলে। বাড়বে না, তাহলে চাকরি চলে যাবে। আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে। তখন কী করবেন?’

নেতারা কাদের উসকানি দিচ্ছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আসল কথা খুব খোলাখুলি বলেছি। যারা কিনছে তাদের ক্রয়ক্ষমতাও সীমিত হয়ে যাচ্ছে। দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আমরা আমেরিকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পণ্য পাঠাই। ,ইউরোপ।সব জায়গায় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে।সেখানকার মানুষ চরম দুর্ভোগে।কত মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।সে তুলনায় আমি বাংলাদেশের মানুষকে খাবার,টিকা,ওষুধ সবকিছু দিতে পারি।’

তিনি বলেন, “কেউ যদি অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে, তাহলে বলবো শেষ পর্যন্ত এই শীতল-কুল, দুই তীরে হারাতে হবে। এটাও সবার মনে রাখা উচিত।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমে কলকারখানা ও কাজ বন্ধ হলে চাকরি চলে যাবে।’ কিন্তু সেটা মাথায় রাখতে হবে। তাহলে বেতন বাড়বে না, বিনা বেতনে যেতে হবে। ‘

৭৫ বছর পর বাংলাদেশে ১৯টি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক বাহিনীর অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছেন, এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি, সিপাহী-জনতার বিপ্লবের নামে কত অফিসার ঘরে ঢুকেছে। তাদের স্ত্রী, ডাক্তারদের হত্যা করেছে।” ১৫ আগস্ট থেকে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটেছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে স্থিতিশীলতা এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জেল-জুলুম সহ্য করে আজ দেশে স্থিতিশীলতা আনতে পেরেছি, তারপরও বারবার চেষ্টা; আমাদের সরকারকে উৎখাত করতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম নির্বাচনের পর থেকে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে এবং সে কারণেই দেশের উন্নতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ক্ষমতা থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের সুযোগ দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব মন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উন্নত দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “ইংল্যান্ডে মানুষ আগে তিনবেলা খাবার খেতেন। এখন একবেলা খাবার বাদ দেওয়া হয়েছে। তাদের সীমিত পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। কেউ এক লিটারের বেশি ভোজ্যতেল কিনতে পারবে না। নিষিদ্ধ. ”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। আমি রিজার্ভ 46 বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছি। সেই অর্থ বিদ্যুৎ, গ্যাস, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে ভর্তুকি ও সহায়তায় ব্যয় করা হচ্ছে। কোনো দেশ তা করেনি। ‘

প্রধানমন্ত্রী বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন ও করোনা পরীক্ষার কথা উল্লেখ করেন। “তারপরেও যদি কেউ গোলমাল করার চেষ্টা করে তাহলে এই দেশ থমকে যাবে। সাধারণ মানুষের কি হবে?”

গ্রামের মানুষের অবস্থা এখনও অনেক ভালো উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি এটাকে আরও ভালো করার জন্য বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছি। সে কারণেই আমি এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না থাকার আহ্বান জানিয়েছি। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতি, খাদ্য সংকট। সেখানে আমাদের নিজস্ব মাটি আছে, মানুষ আছে, ফসল ফলাতে হবে। অন্তত নিজেদের খাদ্যের যত্ন নেব।’

সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার এবং খাবারের অপচয় না করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সবাই বাঁচান। সরকার আর সব করতে পারবে না। আপনাদেরই করতে হবে। আমি আমাদের নেতা ও জনগণকে এটা বলব।”

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শিগগিরই শেষ হবে বলে মনে করেন না প্রধানমন্ত্রী। এ কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি। “জিনিসের দাম বাড়বে,” তিনি বলেছেন।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সঞ্চালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলেছেন বলে মনে করছেন অনেকে। আসলেই যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। বেতন বাড়াতে গিয়ে যদি চাকরিই চলে যায় তাহলে তো আরো বেশি বিপদের সম্মুখীন হতে হবে গার্মেন্টস শ্রমিকদের। তাই যেমনটি তারা বেতন পাচ্ছে সেইটা নিয়ে খুশি থাকলে তাদের নিজেদের জন্যই মঙ্গলকর হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

About Shafique Hasan

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *