গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়া সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যদি কোনো দলীয় নেতা-কর্মী কোনরূপ যোগাযোগ কিংবা সম্পর্ক বহাল রেখে কর্মকান্ড চালিয়ে যায়, তাহলে বিষয়টি তদন্ত করার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছিল গত বছর ডিসেম্বরে। ওই সময় আ.লীগের একটি বর্ধিত সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং সম্পর্ক বজায় রেখে চলা নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একটি ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। এবার সেই ব্যবস্থায়ই নেওয়া হলো।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ১১৯ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে গত বছরের ১৯ নভেম্বর মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ফলে দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার সম্ভাবনার ভয়ে ভুগছেন দলের কিছু নেতা-কর্মী।
দলীয় সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ১১৯ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ১ জুন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ড. আতাউল্লাহ মন্ডল স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। চিঠিতে আগামী সাত দিনের মধ্যে শোকজকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। শোকার্তদের মধ্যে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির বিভিন্ন পদে রয়েছেন ১৯ জন। বাকি ১০০ জন মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটির নেতা-কর্মী।
জানা গেছে, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ নয়ন, সহ-সভাপতি ও গাজীপুরের জিপি আমজাদ হোসেন বাবুল, যুগ্ম সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এসএম মোকশেদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান কাউছিন রফিকুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনির হোসেন প্রমুখ। হোসেন, যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাজহারুল আলম, ক্রীড়া সম্পাদক আসাদুজ্জামান তরুণ, সদস্য ও জিসিসি কাউন্সিলর আজিজুর রহমান শিরীষ, সদস্য রজব আলী, হাজী আব্দুর রশিদ প্রমুখ।
এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড কমিটির নেতারা রয়েছেন। এদিকে, বর্তমান জিসিসি মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ ২০২৩ সালে শেষ হবে। ফলে আগামী বছরের মে বা জুন মাসে সিটি নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই নির্বাচন ও মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠনের আগে ১১৯ নেতাকে কারণ দর্শানো হয়েছে। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যারা বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বা বন্ধুত্ব বজায় রেখেছেন তাদের চিহ্নিত করতে ১১ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ওসমান আলীকে। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১১৯ নেতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
কমিটির এক নেতা জানান, শোকজপ্রাপ্তদের মধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিবাদপত্রটি দেওয়া হয়েছে। তবে কারণ দর্শানোর নোটিশে স্বাক্ষরকারী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
নোটিশ প্রাপ্তদের বিরুদ্ধে সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের বিধান মোতাবেক কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদককে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ। ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগের আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং সংবিধানের স্বার্থের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শোকজের তালিকায় থাকা বেশ কয়েকজন নেতা শোকজ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করলেও অনেকে ওই চিঠি গ্রহণ করেননি। প্রতিবাদের চিঠি পেয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শতাধিক নেতাকে বহিষ্কারের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি।
জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। ‘তারা বলেন, ‘সামনে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। আর সিটি নির্বাচনও সামনে আসছে। মুরতাদ ও পরীক্ষিত নেতাদের দল থেকে বাদ দিয়ে তুচ্ছ অজুহাতে দলের কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখার চেষ্টা চলছে এ সময়ে। যা দলের জন্য ভালো নয়।”
২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করে। কয়েকদিন পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জিসিসি মেয়রকে সাময়িক বরখাস্ত করে। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননার অভিযোগে সরকার ও দল তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়। একই সঙ্গে বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করে সরকার। ঘটনার পর বিভিন্ন জেলায় মামলা হয়েছে। মামলাগুলো বর্তমানে তদন্তাধীন এবং সরকার নিযুক্ত তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, জিসিসি নির্বাচনকে সামনে রেখে মহানগর আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানোর প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবে বেশ কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। নেতারা বলছেন, জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এখনো আদালতে প্রমাণিত হয়নি। নির্দোষ প্রমাণিত হলে দলে ফিরতে পারেন তিনি। তার ফেরার আশ/’ঙ্কায় জাহাঙ্গীরবিরোধী নেতারা দলে তার অনুসারীদের প্রভাব কমাতে বহিষ্কার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে চাইছেন। বিরোধী দলগুলি উপনির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু বলেছে যে কিছু স্বাধীনতা বজায় রাখা উত্তর নয়।
জাহাঙ্গীর আলমের সাথে দলীয় নেতাকর্মীদের কোনো যোগাযোগ রয়েছে কিনা এবং কারা তার সাথে রাজনৈতিকভাবে যোগাযোগ রেখে চলছে সেটা অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল। সেই মোতাবেক এবার ব্যবস্থা নিলেন দলের সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গত বছরের শেষ দিকে একজন মন্ত্রী বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের সাথে দলীয় কোনো নেতাকর্মীর কারো যোগসুত্র নাই বিশেষ করে রাজনৈতিক সম্পর্ক।