গত শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ডিপো বি/ষ্ফোরন ঘটলে আগুণ ধরে যায় ঐ এলাকা জুড়ে। পড়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। তবে ডিপোতে কেমিক্যাল থাকার কারনে বার বার বিষ্ফোরনের জন্য আগুন নিয়ন্ত্রনে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ অনেকে প্রাণ হারান। এবার এই ডিপো তৈরী নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিএনপির সাংসদ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মজিবুর রহমান। দলের এমন অবস্থান থেকে তিনি ডিপো স্থাপনে কোনো নিয়ম-নীতি মানার প্রয়োজন বোধ করেননি।
সোমবার একাদশ জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাও ডিপো মালিকের খুঁটির শক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
বিএনপি দলীয় এই সংসদ-সদস্য আরও বলেন, তিনি (মালিক) অনুমোদন ছাড়া ডিপো তৈরি করেছেন। সেই ডিপোতে অনুমোদন না নিয়ে কেমিক্যাল রেখেছেন। এমনকি যখন সেখানে আ/গুন লেগেছে, তখন অগ্নিনির্বাপণের জন্য যারা গেছেন, তাদের কেমিক্যালের বিষয়ে অবহিত করেননি। এই খুঁটির জোর তিনি কোথা থেকে পেলেন?
বিএনপি দলীয় এই সংসদ-সদস্য আরও বলেন, তিনি (মালিক) অনুমোদন ছাড়া ডিপো তৈরি করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের এমন অবস্থান থেকে তিনি বোধহয় কোনো নিয়ম-নীতি মানার প্রয়োজন বোধ করেননি।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা জানান, ২০১২ সালে আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনে ভয়াবহ অ/গ্নিকাণ্ডে ১১১ জন পোশাক শ্রমিক মারা যান। এ ঘটনায় প্রধান আসামি তাজরিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি দেলোয়ার হোসেন। এই মামলার ১০ বছর হয়ে গেছে। এখনো সুরাহা হয়নি। বিপরীতে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, দুই দিন কেটে গেছে। কিন্তু বিএম কন্টেইনার ডিপো মালিকের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে আইন লঙ্ঘন করে বিশেষ কোনো অবকাঠামো ছাড়াই হাইড্রোজেন পারক্সাইডের মতো দাহ্য পদার্থ ডিপোতে মজুত করে রেখেছেন তিনি। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের কাউকে খবর দেওয়া হয়নি। এখানে দাহ্য পদার্থ রয়েছে। তাহলে আ/গুন নেভানোর জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হতো। এতগুলো প্রাণ আমাদের হারাতে হতো না। আমি আপনার (স্পীকার) মাধ্যমে অনুরোধ করব অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
নিমতলী অ/গ্নিকাণ্ডের কথা স্মরণ করে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ২০১০ সালে নিমতলীতে অ/গ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের মৃ/ত্যু হয়েছিল। শুনে খুব অবাক হলাম, কিন্তু এটা সত্যি যে এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। একটি মাত্র জিডি হয়েছে।
প্রথম আলোর ফলোআপ রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই জিডির তদন্ত এখনও চলছে। নিমতলীর ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় কোনো মামলা হয়নি, কোনো বিচার হয়নি, যার ফলশ্রুতিতে ঠিক ৯ বছর পর চুড়িহাট্টায় আবারও একই ধরনের ঘটনা ঘটে, যেখানে আগুনে পুড়ে ৭৭ জন মা/রা যায়। এ দুটি ঘটনার কারণ একই, কেমিক্যাল গুদাম।
তিনি বলেন, তখন সরকার বলেছিল, কেমিক্যাল গুদাম সরিয়ে ফেলা হবে পুরান ঢাকা থেকে। এখনো সরানো হয়নি। প্রায় ১৫ হাজার কেমিক্যাল গুদাম বা দোকানের নামে যেখানে বারুদের স্তূপ, সেখানে অসংখ্য মানুষ বসবাস করেন। সীতাকুণ্ডের ঘটনা নিয়ে একটা কথা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটা একটা হ/ত্যাকাণ্ড। কেন আমি এটাকে হত্যাকাণ্ড বলছি?
আমি বলছি এ কারণেই, বিস্ফোরক পরিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিদর্শক তোফাজ্জল জানান, বিএম কন্টেইনার ডিপোতে দাহ্য পদার্থ রাখা হয় এটি তাদের জানানো হয়নি। এই ধরনের পণ্য সংরক্ষণের জন্য বিশেষ কাঠামো প্রয়োজন। কিন্তু ডিপোতে তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
রুমিন ফারহানা বলেন, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীও অনিয়মের কথা গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন। যেহেতু বাংলাদেশে পদত্যাগের সংস্কৃতি নেই, তাই আমি নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই না।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের একজন পরিচালক লেফটেন্যান্ট রেজাউল করিম স্পষ্টভাবে বলেছেন, ডিপোর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি বা মালিক কেউই তাদের জানাননি যে এখানে কেমিক্যাল রাখা হয়েছে। সেটা জানা থাকলে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন হতো। এতে বি/স্ফোরণের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যেত।কনটেইনার থেকে নিরাপদ দূরত্বে না থেকে বিস্ফোরণের কারণে ফায়ার সার্ভিসের যে ১২ জন মা/রা গেছেন, তা হয়তো হতো না। এই জীবনগুলো ঝরে গেছে স্রেফ কনটেইনার ডিপো মালিকের চরম উদাসীনতায়।
প্রসঙ্গত, সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো তৈরীতে কোন নিয়ম নীতি অনুসরন করা হয়নি। আর ডিপোতে যে কেমিক্যাল রাখা হয়েছিল তা কাউকে জানানো হয়নি। কেমিক্যালের বিষয়টি জানা থাকলে হয়ত এতগুলো প্রাণ হারতে হত না এমনটায় মন্তব্য করেন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা।