Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ঔষধ ছাড়া রোগী সুস্থ করার একটি পদ্ধতি সেয়ার করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঔষধ ছাড়া রোগী সুস্থ করার একটি পদ্ধতি সেয়ার করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আমাদের দেশের মানুষ বর্তমানে চিকিৎসা নিতে গিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া রোগী এবং তাদের স্বজনরা অক্সিজেন-আইসিইউ গ্রহণের জন্য এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে যান। শয্যা ও চিকিৎসকেরও সংকট রয়েছে। ঢাকার বাইরের অনেক হাসপাতালে অতিরিক্ত বেডের রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে রোগীদের অবস্থা বেশি ভালো নেই। তবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি চিকিৎসকদেরে উদ্দেশ্যে বলেন

সেবা দেওয়ার ব্রত নিয়ে চিকিৎসকদের জনগণের পাশে থাকতে হবে । চিকিৎসা শুধু একটি পেশা নয়। কখনও কখনও ওষুধের পরিবর্তে ডাক্তারের দুটি শব্দ রোগীকে সুস্থ হতে সহায়তা করে। এই দিকটি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী রোববার রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) এর সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন এবং ১৪তম সমাবর্তন ২০২২-এর প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আমাদের চিকিৎসকদের একটি কথা বলব- একজন রোগী যখন কোনো চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে যান, তখন চিকিৎসকের দুটি কথা অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে সুস্থ করে তুলতে পারে বা তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারে। চিকিৎসকের মতে রোগী অর্ধেক ভালো হয়ে যায়, এটাই বাস্তবতা। তাই এই বিষয়ে আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, আপনারা জনগণের সেবা করেন এবং আমি চাই আপনারা সেবার ব্রত নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ান। আমাদের দেশে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার জরুরি প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে চিকিৎসকদের এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। আমাদের গভীরভাবে গবেষণার প্রয়োজন, এবং আমি সবাইকে সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি, তিনি বলেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। তাদের থেকে মানুষকে মুক্ত করা আমাদের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জাতির পিতার উদাহরণ তুলে ধরেন যিনি কলেরা নিরাময়ের জন্য আইসিডিডিআরবি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা সেই সময়ে এই অঞ্চলে ব্যাপক ছিল এবং এটিকে একটি উচ্চমানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল। তার সরকার এসে রাষ্ট্র পরিচালনা করে এর আরও উন্নয়ন করে। ফলে এ অঞ্চল কলেরার প্রাদুর্ভাব মুক্ত। এছাড়া শৈশব থেকেই পোলিওসহ বিভিন্ন রোগের টিকা দিয়ে মানব স্বাস্থ্য রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছেন। দেশের মেধাবী চিকিৎসকদের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের চিকিৎসকরা যদি বিদেশে গিয়ে এত ভালো করতে পারেন, তাহলে দেশে কেন করবেন না।

আমাদের চিকিৎসকরা যাতে দেশে তাদের মেধাকে সঠিকভাবে বিকশিত করতে পারেন সেজন্য এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য আপনার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা পাবেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিসিপিএস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপও দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জাহিদ মালেক বিসিপিএসের সুবর্ণ জয়ন্তী ফেলোশিপ ও স্মারক গ্রহণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জাহিদ মালেক ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিসিপিএস ফেলোদের কাছে স্বর্ণপদক এবং দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানসূচক ফেলোশিপ তুলে দেন।

বিসিপিএস সভাপতি অধ্যাপক কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিপিএসের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এএইচএম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আগত বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন বিসিপিএস সচিব প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বিল্লাল আলম। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিসিপিএসের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিসিপিএসের থিম সং ও বিসিপিএসের কার্যক্রমের ওপর একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। তিনি করোনার জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য চিকিত্সক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন যে তার সরকার একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা রেখে ক/ র ‘না নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিসিপিএস ফেলোশিপ পাওয়া খুবই সম্মানের। এখানে উপস্থিত সকল সম্মানিত ফেলো এবং সদস্যদের প্রতি আমার আহ্বান- আপনারা আপনাদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন।

তিনি বলেন, আমি বলতে পারি জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমার কাছ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন। আমি তোমাকে এতটুকুই বলতে পারি। বিদেশ থেকে আগত অতিথিদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দেখভাল করছেন এবং আমি মনে করি একসঙ্গে কাজ করলে অনেক নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা সম্ভব। যা দেশ ও জনগণের মধ্যে সংঘটিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটাই আমাদের লক্ষ্য এবং আমরা চেষ্টা করছি যাতে আমাদের দেশের মানুষ সবসময় আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা পায় এবং আমরা তা করব। তিনি বলেন, তার সরকার রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেটে আরও তিনটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে এবং তার সরকারের লক্ষ্য প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। তিনি আরো উল্লেখ করেন, সরকারি ও বেসরকারি খাতে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে চিকিৎসার মান উন্নয়ন এবং রোগীর সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষ যাতে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা পেতে পারে সেজন্য আপনাকে বিষয়টি দেখতে হবে। যদিও আমাদের দেশের জনসংখ্যা অনেক বেশি, রোগীর চাপ অনেক বেশি, তারপরও আমি বলব বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।

ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে অনলাইন ভিত্তিক বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা জনগণের নিজ নিজ উপজেলায় বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগও তৈরি করছি।

দেশে অসংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অসংক্রামক রোগের সংখ্যা বাড়ছে। আর ইদানীং কেন ক্যান্সার ও কিডনি রোগের প্রকোপ বেড়েছে জানি না। এসব রোগ থেকে মুক্ত থাকতে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও জ্ঞান প্রদান করতে হবে। আপনার সাধ্যমত এই সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমরা প্রতিটি বিভাগে এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে একটি হাসপাতাল তৈরি করব। আমরা ইতিমধ্যে জেলা হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস ও হৃদরোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়েছি।

সরকারপ্রধান বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বলতে পারি, তবে আমি মানবতাবোধ নিয়ে এদেশের মানুষের সেবা করে যাবো। আমার মতো আমিও জনগণকে সেই সেবা দিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতা হলো জনগণের সেবা করার সুযোগ। তিনি বলেন, মানুষের সেবা করাই এখানে মূল লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিলাসিতায় লিপ্ত হওয়ার কথা নয়। তাই আপনি যে পেশায়ই থাকুন না কেন, মানবতাবোধ নিয়ে মানুষের পাশে থাকবেন, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বেসরকারী হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলিকে রোগীদের কাছ থেকে লাগামহীন বিলিংয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে শুধু ‘ডাকাতি’ করে রোগীদের টাকা ছিনতাই করা হয়। অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা, অতিরিক্ত ভাড়া-ফি, বিভিন্ন খাত দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা বিল করে অনেকেই চলে গেছে। জনস্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি ও সম্প্রসারণের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালের ক্লিনিকের চলমান বিলিংয়ের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। চিকিত্সার সম্ভাব্য খরচ (যেমন, পরীক্ষার জন্য কত, অপারেশনের জন্য কত, ডাক্তারের ফি, সিট ভাড়া, ওটি চার্জ ইত্যাদি) সরকারীভাবে ধার্য করা যেতে পারে, যা প্রতিটি হাসপাতালের ক্লিনিকের জন্য বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। এবং সেই অনুযায়ী বিল করা হয়।

About Nasimul Islam

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *