Sunday , November 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / সীতাকুন্ডে অগ্নিকান্ড: মায়ের ফোন কলে বেঁচে যান হাফিজুর

সীতাকুন্ডে অগ্নিকান্ড: মায়ের ফোন কলে বেঁচে যান হাফিজুর

গত শনিবার রাত ৯ টার দিকে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে যে অগ্নিকাণ্ডের শুরুর পরই হাফিজুর রহমান ঘটনার বিষয়ে জানাতে তার মাকে ফোন করেন এবং বলেন যে তিনি সুস্থ আছেন। এই খবর শোনার পর তার মা অনেকটা চিন্তামুক্ত হন। তিনি আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জানান। বাঁশখালীর শেখেরখীলের গ্রাম থেকে আসা ডিপোতে কর্মরত ছেলেকে কিছুক্ষণ পরপরই ফোন দিতে থাকেন তার মা। তিনি ফোন দিয়ে কোনরকম চিন্তা না করতে বলেন।

বিস্ফো”রণের ঠিক আগে হাফিজুর রহমান দুর্ঘটনাস্থল থেকে সরে গিয়ে প্রাণে বেঁচে যান। হাফিজুরকে খুঁজতে আসা তার ও তার দুই ভাগ্নের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তিনি দূর থেকে আগুন পর্যবেক্ষন করেন। এদিকে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়লে ভিড়ও বাড়তে থাকে। ফলে আমার কথা বলতে সমস্যা হচ্ছিল। বিস্ফোরণের একটু আগে আবার হাফিজকে ফোন দেন মা। মায়ের কথা শোনার জন্য ভিড় থেকে দূরে সরে যান হাফিজ। এর মধ্যেই প্রবল বিস্ফো/’রণ হয়। হাফিজের ফোন বন্ধ হয়ে যায়। কোনোরকমে পালিয়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান।

ঘটনার পরপরই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন হাফিজুর। একের পর এক প্রয়ানের খবর আসতে থাকে। এদিকে তার মোবাইলও বন্ধ। এদিকে তাঁর মোবাইলটিও বন্ধ। আবার কারও কাছ থেকে মিলছিল না তাঁর সন্ধানও। তার ভাগনে কামরুল হাসান নিয়াজ ও নুরুল আবছার বাবুল তাকে খুঁজতে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে বাসা ছাড়েন। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে হাজারো মানুষের ভিড় থেকে মামা হাফিজুরকে শনাক্ত করতে পারেনি তারা। আড়াই ঘণ্টা তারা আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে হতাশ হয়ে শহরে ফেরার চেষ্টাকালে হাফিজকে তারা পেয়ে যান।

হাফিজুর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “বিস্ফোরণের আগেও আমি ঘটনাস্থলের খুব কাছাকাছি ছিলাম। সেই সময় আমার মা ফোন দিলে আমি কথা বলতে দূরে সরে আসি। তখনই বিকট শব্দে বিস্ফো’/রণ ঘটে। মায়ের ডাক শুনে মনে হলো আমার লাইফব্লাড। ফোন না এলে আমি বিস্ফো’/রণের মাঝে পড়ে যেতাম।’

হাফিজুর আরও বলেন, “কোনরকমে দৌঁড়ে নিরাপদে ফিরে আসি। কিন্তু মোবাইলের চার্জ না থাকায় পরিবারকে জানাতে পারিনি। বি’স্ফো’/রণে তাদের অনেক পরিচিতজনের মোবাইল ফোনও নষ্ট হয়ে গেছে। শুনে আমরা সবাই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের সহকর্মীদের প্রয়ান। আল্লাহ আমার মতো যদি অন্য সহকর্মীদের কোনো না কোনো উসিলায় বাঁচিয়ে দিতেন!’

হাফিজুরের ভাতিজা নিয়াজ ও বাবুল বলেন, “আমার মোবাইল নম্বর বন্ধ হয়ে পড়ায় মামার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। এদিকে পরিবারে ভয় ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে। অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার অবস্থান নিশ্চিত করতে না পেরে আমরাও হতাশ হয়েছি। হঠাৎ রাত ৩টার দিকে মামা একটি নম্বর থেকে আমার নানুর নিকট ফোন করেন। হঠাৎ রাত তিনটার দিকে একটা নম্বর থেকে আমার নানুর কাছে ফোন দেন মামা। আড়াই ঘন্টা ধরে আমাদের ওপর থেকে যে কি ধরনের ঝড় বয়ে গেছে সেটা আমরা নিজেরাই জানি।

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের ঘটনায় দীর্ঘ হচ্ছে নিথর দেহের সারি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে ব্যস্ত চিকিৎসকেরা। এ ধরনের ঘটনায় সারা দেশের মানুষ শোকাহত। গুরুতর কয়েকজন রোগীকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় এনে উন্নত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

About bisso Jit

Check Also

আওয়ামী লীগ এখনো ক্ষমা চায়নি, তাদের পাল্টা জবাব দিতে হবে: উপদেষ্টা ফারুকী

আওয়ামী লীগ এখনো ক্ষমা চায়নি, তাদের পাল্টা জবাব দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *