শনিবার (৪ জুন) রাত ১০ টার দিকে হঠাৎই এক বিকট শব্দে কেঁপে উঠে সীতাকুণ্ড। মুহুর্তের মধ্যেই যেন আতঙ্কের ছায়া নেমে আসে গোটা গ্রামে। তড়িঘড়ি করে সবাই এসে দেখেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে দাউ দাউ করে আগুন জলছে। আর এ অবস্থায় ফোন দেয়া হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের। তারা এসে আগুন নেভাতে অনেক চেষ্টা করলেও প্রাণ হারাতে হয়েছে অনেককে। আর তাদের মধ্যে একজন হাবিবুর রহমান (২৫)।
‘গতকাল সকালেও হাবিবের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। হাবিব জিগাইছে, মা কি খাচ্ছেন? আমি বললাম, বাবা, আমি নাস্তা করছি। নাস্তা কইরা মাইয়ারে পড়াইতে লইছি। তহন হাবিব বলেন, ওরে মাইরো না মা, ওরে আমি ডাক্তারি পড়াবো। তার যত্ন নিন, আপনাকে তার জন্য চিন্তা করতে হবে না। মাগো কদিন পর বেতন পাইলে বাড়িত আমু, ৪ দিনের ছুটি দিছে। ২ দিন আইতে-যাইতে, আর ২ দিন তোমাগো লগে থাকমু।’
কথাগুলো বলছিলেন হাবিবুর রহমানের মা হোসনে আরা বেগম।
হাবিবুরের বাবা শাহাবুদ্দিন পটুয়াখালীর বাসিন্দা। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের সঙ্গে ভোলার দক্ষিণ বালিয়া গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে থাকতেন।
সাত বছর আগে জীবিকার সন্ধানে চাচা আলমগীরের সঙ্গে চট্টগ্রামে চলে আসেন তিনি। চাকরি হয় সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে। প্রতিদিনের মতো শনিবার (৪ জুন) রাতে ডিপোতে নাইট ডিউটিতে ছিলেন হাবিবুর রহমান। সেই রাতেই ভয়ানক বিস্ফোরণে বাকিদের সঙ্গে হাবিবুরও নিহত হন। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। তার মৃত্যুতে পরিবার এখন রূঢ় বাস্তবতার মুখে।
হোসনে আরা বেগম আরও বলেন, আমার বাবা দিনে দুই-তিন ঘণ্টা কথা বলতেন। বাবায় এক সপ্তাহ দিনে ডিউটি করত, এক সপ্তাহ রাইতে। সাত মাস আগে বনাই মারা গেলে হাবিবুর বাড়িতে আসেন। এই ঈদে বাসায় আসার কথা থাকলেও ছুটি পায়নি। আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস ছিল হাবিবুর। আল্লাহ তাকে নিয়ে গেলেন, এখন আমাদের কি হবে?
এদিকে হাবিবুরের মৃত্যুর খবরে গভীর শোক প্রকাশ করে পরিবার-স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইফতারুল হাসান। এ সময়ে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তার পরিবারের পাশে দাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।