রোগ নিরাময় করার জন্য মানুষ নানা ধরনের ঔষধ সেবন করে থাকে। তবে কে জানে সেটা নকল না আসল। অনেক ঔষধ কোম্পানি রয়েছে যারা বেশি মুনাফা অর্জনের জন্য নকল ঔষধ উৎপাদন করে বাজার জাত করে। সে ঔষধ পরীক্ষানাগারে পরীক্ষা না করলে সাধারণ চয়ে ধরার উপরয় নেই। ২০১০ দশ সালে এমনি একটি ঔষধ কোম্পানির বিরুদ্ধে নকল ঔষধ বিক্রির অভিযোগ উঠে।
এছাড়া আইনজীবী মনজিল মোরশেদ সাংবাদিকদের জানান, ১৯৯১ সালে ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ছয়জন এবং ২০০৯ সালে রিড ফার্মার প্যারাসিটামল খেয়ে ২৬ জন সন্তানের নিথর হয়। ২০১০ সালে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে জনস্বার্থে মানবাধিকার সংস্থা এইচআরপিবি হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে। রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন আদালত।
ভেজাল প্যারাসিটামল খেয়ে নিথর হারিয়েছে এমন ১০৪ পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তিপূরণ দিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি মো. রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেওয়া হয়।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ১৯৯১ সালে ছয়জন এবং রিড ফার্মার প্যারাসিটামল পড়ে ২০০৯ সালে ২৬ জন ছোট সন্তান নিথর হয়েছিল।
২০১০ সালে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে জনস্বার্থে মানবাধিকার সংস্থা এইচআরপিবি হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে। রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন আদালত।
তিনি আরও বলেন, ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনের কারণে ১০৪ ছোট সন্তন নিথর হলে প্রত্যেক পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের নিষ্ক্রিয়তাকে বেআইনি ঘোষণা এবং ভেজাল ওষুধের অপরাধের ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতাবলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত আরও বলেছেন, ভেজাল ওষুধের কারণে ছোটদের নথর করার দায় ওষুধ প্রশাসন এড়াতে পারবে না।
ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে ২৭ সন্তাকে নিথর করার মামলায় ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কোর্টের বিচারক আতোয়ার রহমান রায় দেন।
রায়ে বিচারক বলেন, প্রসিকিউশন ও তদন্তকারী কর্মকর্তা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তৎকালীন সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম এবং উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন ‘অদক্ষতা ও অযোগ্যতার’ কারণে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। পরে 23 সেপ্টেম্বর 2016 এই দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। 31 মার্চ, 2019, ওষুধ প্রশাসন ‘তিরস্কার’ করে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে।
এরপর এই দুই কর্মকর্তা চাকরি শুরু করেন। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) ৩১শে মার্চের প্রত্যাহার আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আপিল করে।
আপিলের শুনানি নিয়ে বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত এ রায় দেন।
ওষুধ আবিষ্কারের সময় দীর্ঘ সময় ধরে অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধে সক্রিয় উপাদানের পরিমাণ নির্ধারণ করেন। একটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেটে সক্রিয় উপাদান হিসাবে 500 মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল থাকে। ট্যাবলেটের আকার দেওয়ার জন্য সক্রিয় উপাদান এবং অন্যান্য উপাদানগুলির সাথে ভলিউম বাড়াতে স্টার্চ, ল্যাকটোজ বা অন্যান্য জড় উপাদান যোগ করে ওষুধের পূর্ণ রূপ দেওয়া হয়।
অনেক সময় সক্রিয় উপাদানের পরিমাণ এত কম থাকে যে (যেমন ১ মিলিগ্রাম) ওষুধের আকার দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই জড় উপাদান মিশিয়ে আয়তন বাড়িয়ে ওষুধ তৈরি করা হয়। একটি ওষুধকে এর সক্রিয় উপাদান ছাড়া ড্রাগ বলা যায় না। প্যারাসিটামল ব্যবহার না করে, ট্যাবলেটগুলি কেবল স্টার্চ বা অন্যান্য উপাদান দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে যা দেখতে হুবহু প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের মতো। সক্রিয় উপাদানের অভাবের কারণে, এই জাতীয় ওষুধ গ্রহণে ব্যথা বা জ্বর নিরাময় হবে না। তাই এসব ওষুধকে নকল ওষুধ বলা হয়।