Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / প্রধান শিক্ষককে টেনে-হিঁচড়ে তার রুম থেকে বের করে বেদমভাবে পেটালেন নৈশপ্রহরীর স্ত্রী ও শাশুড়ি

প্রধান শিক্ষককে টেনে-হিঁচড়ে তার রুম থেকে বের করে বেদমভাবে পেটালেন নৈশপ্রহরীর স্ত্রী ও শাশুড়ি

শিক্ষকদের শিক্ষার ছায়া তলে সুশিক্ষায় বেড়ে ওঠে দেশের লাখো শিক্ষার্থীরা। বাবা মায়ের পরেই শিক্ষকের স্থান। তারা পরম যত্নে শিক্ষার্থীদের যথাযথ শিক্ষা প্রধানের দ্বারা মানুষের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। আর এই ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকার কোনো সীমা নেই। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। সেই মেরুদন্ডকে শক্ত রাখার কারিগর হলেন তারা। সম্প্রতি জানা গেল নরসিংদীতে ( Narsingdi ) রকটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ঘর থেকে বের করে পেটালেন নৈশপ্রহরীর স্ত্রী ও শাশুড়ি।

নরসিংদীতে স্কুলে না আসার কারণ জানতে চাওয়ায় দফতরী কাম নৈশ প্রহরী প্রধান শিক্ষককে মারধর করেছে। এতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারসহ শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। তারা বিষয়টি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও জেলা প্রশাসককে জানান।

এর পরিপ্রেক্ষিতে নৈশ প্রহরীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আলগী মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দফতরীর বিরুদ্ধে মাধবদী থানায় মামলা করেছেন। এদিকে শিক্ষককে মারধরের কথা স্বীকার করেছেন দপ্তরী। তবে তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, কামরুন নাহার মাহামুদা নরসিংদীর সদর উপজেলার আলগী মনোহরপুর ৮৬ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। একই বিদ্যালয়ের আউটসোর্সিং বিভাগে নৈশ প্রহরী হিসেবে কর্মরত মো. শরীফ মিয়া। বিদ্যালয় এলাকায় বাড়ি হওয়ায় দফতরী শরীফ মিয়া তার ইচ্ছানুযায়ী বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এতে বিদ্যালয় পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটে। একাধিকবার মৌখিক নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। তাই প্রধান শিক্ষক বাধ্য হয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানাতে বাধ্য হন।

পরে শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে নৈশ প্রহরীর বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগে মামলা করা হয়। নৈশ প্রহরী শরীফ মিয়া প্রধান শিক্ষকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষককে অশালীন মন্তব্য করেন। এরই মধ্যে গত ১৮ মে শরীফ মিয়া সকাল ৯টার পরিবর্তে সাড়ে ১০টায় স্কুলে আসেন। এ সময় প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে দেরি করে আসার কারণ জানতে চান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে দপ্তরি। এ সময় দফতরী শরীফ মিয়া প্রধান শিক্ষককে গালিগালাজ করতে থাকেন।

কিছুক্ষণ পরে, দপ্তরি তার স্ত্রী এবং শাশুড়িকে স্কুলে নিয়ে আসে। এ সময় তার স্ত্রী ও শাশুড়ি প্রধান শিক্ষক কামরুনারকে চুল ধরে টেনে তার কক্ষ থেকে বের করে বিদ্যালয়ের আঙিনায় নিয়ে আসেন। পরে তাকে উপর্যপুরি আঘাত করেন। প্রধান শিক্ষকের চিৎকারে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকার লোকজন এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনার একদিন পর মাধবদী থানায় দফতরী, তার স্ত্রী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

এদিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত নৈশ প্রহরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ম্যানেজিং কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বায়েজিদ খান। কিন্তু অদৃশ্য কারণে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি নৈশ প্রহরীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার মাহামুদা বলেন, বিভাগ প্রধান শিক্ষকের কথা অমান্য করলে বিদ্যালয়টি ব্যাহত হবে। সে তার ইচ্ছামতো স্কুলে আসলো। তাই তিনি একাধিকবার হতবাক হয়েছিলেন। তিনি আমাকে ১৭ তারিখে স্কুলে আসতে দেরি করার কারণ জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে আক্রমণ করেন। তাছাড়া স্কুলের পাশেই স্কুল বাড়ি। তাই সব সময় এলাকায় দাপট দেখান তিনি।

সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মিজানুর রহমান খান বলেন, প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার খবর পেয়ে আমি বিদ্যালয়ে ছুটে যাই এবং সত্যতা জানতে পারি। প্রধান শিক্ষকও অপরাধ করলে তিনি স্কুল কমিটি, উপজেলা শিক্ষা অফিস বা জেলা শিক্ষা অফিসে অভিযোগ জানাতে পারেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের গায়ে কেউ হাত দিতে পারে না। এটা একটা লজ্জাজনক ব্যপার. তাছাড়া নৈশ প্রহরী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চুক্তি ভিত্তিতে। তিনি শিক্ষা পরিবারের সদস্য নন। এর বিচার হবে।

এদিকে বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী শরীফ মিয়া প্রধান শিক্ষককে মারধরের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক ১৮ মে মিটিং এ চলে যান। ১৭ তারিখে আমি স্কুল খুলে বাসায় যাই। ম্যাডাম এসে আমাকে ডাকলেন। তখন তিনি বলেন, আমি ১৭ মে স্কুলে আসিনি। এরপর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাই। এই কথা বলার সাথে সাথে সে আমার গায়ে একটা স্ট্যাপলার ছুড়ে দিল। এ খবর শুনে পরিবারের লোকজন ছুটে আসেন। এরপর আমার পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া, মারামারি হয়। বাইন্ডার আরো বলেন, ম্যাডাম স্কুলের বই বিক্রি করেন। সে আমাকে না বলার জন্য চাপ দিত।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফারুক মিয়া জানান, শিক্ষা অফিস থেকে চিঠি পেয়ে সভা ডাকা হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির ১১ সদস্যের মধ্যে দুজন উপস্থিত ছিলেন। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।

অপর একটি সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়াকে কেন্দ্র করে আলগী মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ঝগড়া চলছিল। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। স্কুলের অভিভাবক কমিটির সদস্যদের সাথে একদল শিক্ষক যোগ দেন। এই দলটি নৈশ প্রহরী শরীফ মিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করত। দফতর শরীফ প্রধান শিক্ষকের ইন্ধনে হামলা চালায়।

প্রসঙ্গত, মানুষ কতোটা খারাপ হলে একটি স্কুলের একজন প্রধান শিক্ষককে ঘর থেকে বের করে পটাতে পারে। শুনতে সত্যিই খুব অবাক লাগে। একজন প্রধান শিক্ষক হলেন উচ্চ শিক্ষিত ও সমাজে সম্মানীয় ব্যক্তি। তার সাথে এমন কর্মকান্ড ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।বিষয়টি যাই হোক না কেনো সব সমস্যারই কোনো না কোনো সমাধানের পথ রয়েছে। এভাবে প্রধান শিক্ষককে পেটানো মোটেই সভ্য সমাজের সভ্য মানুষের কাজ না বলে মনে করছেন অনেকে।

About Shafique Hasan

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *