Saturday , September 21 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ফের আলোচনা কচুর লতি বিক্রি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক

ফের আলোচনা কচুর লতি বিক্রি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক

সবার আগে আমরা বাঙ্গালী। আমাদের প্রতিটি শিরায় মিসে আসে কৃষকের রক্ত। আজ কাল ( Tomorrow ) শিক্ষিত ও প্রভাবশালী হয়ে গেলে আমরা অনেকে নিজের মাটিকে ভুলে যাই। অন্যদিকে যদি কেউ শিক্ষিত হয়েও নিজের পূর্বে পরিচয় না ভুলে দেশের একজন সফল কৃষক হতে পারে তাহলে তাকে নিয়ে সমালোচনা নয়, তার থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত এমনি মন্তব্য করেছেন অনেকেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গ্রামের বাজারে প্লাস্টিকের টুলে বসে কচুর লতি বিক্রি করছিলেন এই ঘটনা বর্তমানে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল। তার নাম আবু বকর সিদ্দিক ( Abu Bakr Siddique ) (রাজপুত্র)। কেউ তার এই ছবি যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় সামিল হন। তবে এ ধরনের ঘটনা এটিই প্রথম নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের ( Bangladesh Agricultural Research Council ) পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে ২০০৬ সালে শ্বশুরবাড়ির এক লাখ টাকা দিয়ে একটি খামারের জন্য জমি কিনেছিলেন তিনি। পরে ঋণসহ বিভিন্নভাবে টাকা জোগাড় করে ২০১৪ সালে সেখানে কৃষাণ সম্বিত কৃষি উদ্যোগ নামে একটি খামার শুরু করেন। এ জন্য তিনি ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও থেকে ২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।

আবু বকরের চাষের জন্য মোট জমির পরিমাণ প্রায় 6 একর। এর মধ্যে ৩ একর দীর্ঘ মেয়াদে ইজারা দেওয়া হয়েছে। তার খামারে রয়েছে ৬ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির ড্রাগন গাছ। স্থায়ী নয়জন শ্রমিক ছাড়াও সেখানে অনেক অস্থায়ী শ্রমিক কাজ করছেন। আবু বকর সিদ্দিক তার নামের আগে ডক্টরেট বা শিক্ষক না বলে শিক্ষিত কৃষক বলতে বেশি পছন্দ করেন। ড্রাগন চাষের জন্য তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে ড্রাগন প্রিন্স উপাধি পান।

কৃষি -আবু বকর সিদ্দিকের যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টের বেশিরভাগই কৃষি বিষয়ক। কালবৈশাখী দাঙ্গার পর শনিবার সকালে এক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টে তিনি লেখেন, ‘এভাবে কৃষিকাজ কীভাবে সম্ভব? ঝড়ের আগের দিন শুক্রবার আবু বকর মোবাইল ফোনে কথা বলেন। “আমি আজ নতুন কিছু করছি না, ছবি ভাইরাল হওয়ার সাথে সাথে তিনি হাসিমুখে বলেছিলেন। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ মাধ্যমে আমার কাজ ও ছবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০১৬ সালে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে ড্রাগন ফল বিক্রি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।

গত ১৪ মে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের বাবুল বাজারে প্লাস্টিকের হাতিয়ারে বসে আবু বকর সিদ্দিক তার খামারে উৎপাদিত কচু লতি বিক্রি করছিলেন। বেশ কয়েকজন সেই ছবি তুলেছেন। তাদের একজন যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি পোস্ট করেছেন। দুই ঘণ্টা পর আবু বকর যখন যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করেন, তখন তিনি দেখেন, তাকে ঘিরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

আবু বকর বলেন, বিক্রির দিন খামারের শ্রমিকদের খাবার কিনতে যাওয়ার কথা ছিল। তখন বাজার করার মতো পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। যে লোকটির কচু লতি বিক্রি করতে যাওয়ার কথা ছিল তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তাই আবু বকর নিজেই স্থানীয় বাজারে গিয়ে বিক্রি করেন।

তিনি বলেন, আমি যদি বসে থাকতাম, তাহলে কেউ লতি বিক্রি করত না। আমার শুধু দরকার ছিল আমার পণ্য বিক্রি করা। আমি 18 কেজি লতি প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি করে বাজারে ফিরে এসেছি। আমি যখন গিয়েছিলাম তখন কী হল? একজন কৃষকের জন্য স্বাভাবিক, শিক্ষিত বা নামের আগে ডক্টরেট থাকা নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ ছিল।’

আবু বকরের পৈতৃক নিবাস ঝালকাঠি। বাবা ঢাকায় চাকরি করেন। বাবা মারা যাওয়ার আগে গাজীপুরে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার হাতিলেট গ্রামে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় খামার গড়ে তোলেন। আবু বকর ফুলবাড়িয়া ও ঢাকার মধ্যে ভ্রমণ করেন।

আবু বকরের বাবা একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বলেন, ‘চাচা-চাচিরা সরাসরি কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত নয়, তারা চাকরি বা ব্যবসা করছেন। আসলে আমিই প্রথম কৃষি বেছে নিয়েছিলাম। শুরুতে এ নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। কিন্তু এখন পরিবারের সদস্যরা, বিশেষ করে ঢাকার উত্তরার তার স্ত্রী মাকসুদা রুমি এবং তাদের তিন সন্তানের আর আপত্তি নেই।

আবু বকর জানান, এখন তিনি খামারের আয় থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধের পাশাপাশি ঢাকার একটি ভালো স্কুলে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাসহ পরিবারের অন্যান্য খরচ মেটাতে পারছেন। তিনি গত বছর বরিশালের ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। তবে এখানেও তার কৃষি ও খামার প্রাধান্য পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকের সাথে ভালো সম্পর্কের কারণে তিনি শুরুতেই বলেছিলেন যে তিনি খামারে ছয় মাস কাজ করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে (দুই সেমিস্টার) ক্লাস করবেন না। আবু বকর জানান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত সম্মানী ভাতা তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণ তহবিলে জমা দেন।
আবু বকর বলেন, কৃষি সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক। কৃষিতে সফল হতে হলে মেধা ও পরিশ্রম দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে।

আবু বকর ২০০২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্যবস্থাপনায় এমএ করেন। তিনি ২০০৬ সালে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি ব্যবসায় তার এমবিএ করেন। তিনি ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে ২০১৬ সালে কৃষি সরবরাহ চেইন এবং মার্কেটিং এর উপর পিএইচডি করেন। তার মতে, কৃষক শিক্ষিত হলে সুবিধা অসুবিধার চেয়ে বেশি।

কিন্তু সেই শিক্ষিত কৃষককে লজ্জায় ঝেড়ে ফেলতে হয়। কৃষিকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। তার মতে, এই পরিকল্পনা আধুনিক টেকসই কৃষির মূল চাবিকাঠি।

About Nasimul Islam

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *