সাংবাদিকতা পেশাকে ঘিরে বর্তমান সমাজে যেসব অপরাধমূলক কর্মকা্ন্ড সংগঠিত হচ্ছে সেই সম্পর্কে সচেতন করতে একটি নাটকের চরিএ হল আবুল মিয়া। সমাজে যারা হলুদ সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত যাদের কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, তাদের অনেকে অর্থ ও ক্ষমতার জোরে সাংবাদিকের কার্ড পান ও নিজেকে অনেক ক্ষমতবান হিসেবে পরিচয় দেন। কার্ড দেখিয়ে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয়ের দিয়ে ভ”য়-ভী”তি দিয়ে চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে থাকেন। এ ধরনের চরিত্রের মাধ্যমে আবুল মিয়া নামের একজন ব্যক্তিকে দেখানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাই”রাল হওয়া দৈনিক ইন্তেকাল নামের একটি প্রেসের আইডি কার্ড নিয়ে আলোচনা চলছে।
কার্ডে আবুল মিয়া ( Abul Mia ) নামের নিচে বাংলায় একটি ছোট অক্ষর লেখা আছে। বাম দিকে একটি স্বাক্ষর সহ লিখন কর্তৃপক্ষ। তার নিচে লাল অক্ষরে ইংরেজিতে একটি প্রেস আছে।
কার্ডে যার ছবি আছে তার নাম সাদ্দামের ( Saddam ) মাল। তিনি পটুয়াখালীর কুয়াকাটা ( Kuakata Patuakhali ) পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের মৃত সামসুর হক ( Samsur Haq ) মালের ছেলে।
না, আসলে তিনি সাংবাদিক নন এবং এই নামে কোনো পত্রিকাও নেই। এটি মূলত ফে”সবুক এবং ইউটিউব-ভিত্তিক চ্যানেল কুয়াকাটা মাল্টিমিডিয়ার জন্য সামগ্রী তৈরি করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
এই চ্যানেলের প্রধান চরিত্র সাদ্দাম। মূলত, ছবি সহ এই কার্ডটি তার চ্যানেলে প্রচারের জন্য সামগ্রী তৈরির একটি অংশ ছিল। দৈনিক ইন্তেকাল নামের একটি নাটকের শুটিং চলাকালে কেউ একজন কার্ডের ছবি তুলে ফে”সবুকে পোস্ট করেন। তার পর তা ভাইরাল হয়ে যায়।
ভাইরাল হওয়া ছবি পোস্ট নিয়ে অনেকে ঠাট্টা করলেও সমালোচনাও করেছেন অনেকে।
নেছার উদ্দিন আহমেদ টিপু নামের দেশের একজন জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিক বলেন, সাংবাদিকতাকে এভাবে উপস্থাপন করা কতটা যৌক্তিক সেটাই প্রশ্ন। শুধু যে সাংবাদিকতা খারাপ হচ্ছে তা নয়। ভালো মন্দ সব পেশাতেই দেখা যায়। দৈনিক ইন্তেকালের নামকরণও সংবাদপত্র শিল্পকে ব্যঙ্গ করার ইঙ্গিত দেয়।
আরেকটি সংবাদ মাধ্যমের স্টাফ রিপোর্টার বিলাস দাস বলেন, গণমাধ্যমের পেছনে একদল মানুষ সবসময় থাকে। এটা একটা অংশ হতে পারে।
সংবাদপত্রের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, আসলে এর বিরুদ্ধে সিনিয়র সাংবাদিকদের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ফে”সবুকে সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার আশায় এমন কুরুচিপূর্ণ নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে কুয়াকাটা মাল্টিমিডিয়ার লেখক ও কর্ণধার শুভক হোসেন কবির জনপ্রিয় একটি গনমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি আসলে আমাদের নাটকের একটি ধারাবাহিক। এটা ভাইরাল করার কোনো পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। যাদেরকে হলুদ সাংবাদিক বলা হয়, মূলত যাদের কোনো একাডেমিক সার্টিফিকেট নেই। এর পরও তিনি নানাভাবে টাকা-পয়সা বা নানা তদবিরের মাধ্যমে সাংবাদিকের কার্ড পান বা বড় ভাই।
সে কার্ড দিয়ে অশিক্ষিত হওয়ায় নানাভাবে চাঁদাবাজি করছে, মিথ্যা কথা বলে হু”মকি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত। আবুল মিয়া নামের একটি চরিত্রে এমন একটি চরিত্র দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের নাটকেও ভালো সাংবাদিকদের চরিত্র দেখা যায়। তার আচরণের জন্য তিনি অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং এক পর্যায়ে তিনি স্থানীয় প্রেসক্লাবের সদস্য বলে জানান। পরে প্রেসক্লাবের সভাপতিও সেখানে হাজির হন এবং জানা যায়, বাস্তবে আবুল মিয়া প্রেসক্লাবের সদস্য ছিলেন না। এরপর সভাপতি নিজেই আবুলকে পুলিশে সোপর্দ করতে বলেন। পরে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়।
কবির বলেন, আবুলের আইডি কার্ড ফে”সবুকে ভাই”রাল হওয়ার পর আমি আমাদের ফে”সবুক পেজে বিবৃতি দিয়েছিলাম। আপনি চাইলে সেখান থেকেও আমাদের বক্তব্য নিতে পারেন।
হলুদ সাংবাদিকতা নিয়ে কেন কনটেন্ট করতে গেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে শুভ বলেন, “আমাদের ইউ’/টিউব চ্যানেল দেখলেই বুঝতে পারবেন। আমরা সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। হলুদ সাংবাদিকতা সমাজের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। এটা দুর্নীতির। মূলধারার সাংবাদিকতা। আমরা প্রকৃত সাংবাদিকতাকে সম্মান করি।
চাঁদা বাড়ানোর জন্য সাংবাদিকতার পেশাকে অসম্মান করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে শুভ বলেন, “আমাদের নাটকগুলোতে একজন ভালো সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করছি, দেখলেই বুঝতে পারবেন।
“যতদূর আমি জানি বা শুনেছি, একজন সাংবাদিক হতে আপনার ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণী পাস হতে হবে,” বলেছেন YouTuber, যার হলুদ সাংবাদিকতা সম্পর্কে কোন ধারণা নেই৷ ক্যামেরাম্যান হতে গেলেও অন্তত অষ্টম শ্রেণী পাস হতে হবে।
যারা অশিক্ষিত কিছু করতে পারে না, তারা সারাদিন কার্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, সাংবাদিক হওয়ার ভান করে। মূলত হলুদ সাংবাদিকরাই অপসাংবাদিক।
শুভ বললেন দেখুন, আইনে কী আছে তা দেখিনি। আমি যা জানতাম তাই বললাম। আমি মূলত এর পরিচালক। আমার একজন লেখক আছে। আপনি চাইলে তার সাথে কথা বলতে পারেন।
দৈনিক ইন্তেকাল নাটকের লেখক ও প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা আবুল মিয়া একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমরা সাংবাদিকতাকে সমাজের দর্পণ হিসেবে দেখি। যারা সমাজের সামঞ্জস্য ও অসঙ্গতিকে সুন্দরভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরেন।
কিন্তু কিছু মানুষ আছে যাদের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা নেই, তারা সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতা করে বেড়ায়। এটা সমাজের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমার নাটকে সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যেখানে আমরা দুটি চরিত্রকে হাইলাইট করি। একটি ভালো সাংবাদিকের চরিত্র, অন্যটি ভুয়া সাংবাদিকের চরিত্র।
ভাইরাল হওয়া ছবিতে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা দুজনকে স্যান্ডেল পরা অবস্থায় দেখা গেলেও আবুল মিয়া বলেন, নাটকে এমন দৃশ্য দেখা যাবে না।
অনুমতি ছাড়া পুলিশের ইউনিফর্ম ব্যবহার প্রসঙ্গে আবুল মিয়া বলেন, দেখছেন, এগুলো ছায়া ইউনিফর্ম। তা ছাড়া লাখ লাখ ইউটিউবার এ ধরনের পোশাক ব্যবহার করছেন।
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, আমি জানতাম না। তারা কীভাবে পুলিশের ইউনিফর্ম ব্যবহার করছে তা জানার চেষ্টা করছি।
প্রসঙ্গত, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাংবাদিক পেশায় যারা জড়িত আছেন তাদের আরো সচেতন ও দক্ষতার সাথে কাজ করতে হবে। এমন কোন কর্মের সাথে জড়িত হওয়া ঠিক নয় যাতে এই মহান পেশার অসন্মান হয়। অপরা’ধমূলক কর্মেকান্ডে জড়িত হয়েও যদি কেউ নিজেদেরকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সাংবাদিক পেশায় যারা জড়িত আছেন তারা তাদের নিজ পেশাদারিত্ব বজায় রাখবেন। সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যারা সংবাদকর্মী নিয়োগ সাথে জড়িত সকল যোগ্যতা যাচায়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করবেন এমনটায় সকলের প্রত্যাশা।