রুশ-ইউক্রেনীয় সংকটে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় সরাসরি প্রভাব ফেলছে। বিশ্বের বৃহত্তম শস্য উৎপাদনকারী দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব পরিবর্তিত হয়েছে। খোদ ইউরোপের দেশগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। সংকটের প্রায় তিন সপ্তাহের মধ্যে ইউরোপ তার প্রভাব অনুভব করতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে দেশগুলোতে খাদ্যের মুল্যের উর্ধগত আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের মুল্যের এই উর্ধগত সামনে দিকে অব্যাহত থাকতে পারে। তবে খাদ্য দ্রব্যের এই উর্ধগত বিশ্ববাজারের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্য রপ্তানি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়া ১৫ মার্চ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত গম, বার্লি, ভুট্টা এবং চাল সহ সমস্ত খাদ্যশস্যের রপ্তানি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন। খবর রয়টার্স।
রাশিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ইন্টারফ্যাক্সকে বলেছেন: “একটি খসড়া সরকারি ডিক্রি কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে ১৫ মার্চ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত কোনো খাদ্যশস্য আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা হবে না। ডিক্রি খুব শীঘ্রই কার্যকর করা হবে। এদিকে বিশ্বের শীর্ষ গম রপ্তানিকারক দেশের সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইউরোপে বাড়তে শুরু করেছে গমের দাম। প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ফ্রন্ট-মান্থ মে-এর তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে ইতিমধ্যেই গমের দাম টনপ্রতি ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে।
ইউরোপের একজন খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেছেন: “প্রাকৃতিক বিপর্যয়, খরা এবং মহামারী গত এক বছরে বিশ্বজুড়ে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত করেছে, বাজারে খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।” এখন, রাশিয়া যদি সত্যিই সেই সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে বাজার বদলে যাবে।”আমরা আশা করি রাশিয়া পুরানো রপ্তানি চুক্তি বহাল রাখবে। যদি সে তা না রাখে তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটবে। কিছু আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনে ( Ukraine ) রাশিয়ার অভিযানকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর আরোপিত একের পর এক নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে অনেকেই বলছেন, অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়া সরকার এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে, রাশিয়ান সরকার সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে খাদ্যশস্য রপ্তানি স্থগিত করেছে। আগামী আগস্ট পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ কার্যকর থাকবে।
উল্লেখ্য, রুশ আগ্রাসনের কারণে ইউক্রেন থেকে গম ও ভুট্টা রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে সংকট এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া তার নিজস্ব প্রয়োজনে মনোযোগ দিচ্ছে। ফলে রাশিয়া থেকেও শস্য রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। অপরদিকে ইউরোপের অধিকাংশ দেশসমুহের আমদানিকারক হিসেবে এই দুই দেশের উপর নির্ভরশীল। বিশ্বব্যাপী গম রপ্তানির প্রায় ৩০ শতাংশ উভয় দেশ থেকে আসে। এমনকি ইউক্রেন এবং রাশিয়া মোট সয়াবিনের ৮০ শতাংশ সরবরাহ করে। বর্তমানে রাশিয়ার ( Russia ) এই সিদ্ধান্ত যদি কার্যকর করা হয় তাহলে বিশ্ব বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উপর মন্দা নেমে আসবে বলে ধারনা করছেন বিশ্লেষকরা।