বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গন এখন তেমন সম্ভাবনা থাকলেও একটা সময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গন ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিয়েছিল মানুষের কাছে এখন যুগের সাথে তাল মেলাতে না পেরে এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং সিনেমার মান অন্যান্য দেশে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে বাংলাদেশের তুলনামূলক কিছুই হয়নি যার কারণে বাংলা সিনেমার অবস্থা অনেকটা ধ্বংসের মুখে চলে গিয়েছে তবে অতীতে যেসব অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অভিনয় করেছেন তাদের প্রশংসা এখনো মানুষের মুখে মুখে
নায়ক-নায়িকা হলে কী হবে, অনেকে কিন্তু শিক্ষাজীবনেও নায়ক। ঢাকাই চলচ্চিত্রে উচ্চশিক্ষিত তারকাদের সংখ্যা কিন্তু হাতেগোনা। আবার অল্পদিনের ব্যবধানে খ্যাতির চূড়ায় ওঠায় নিয়মিত পড়াশোনা থমকে রয়েছে অনেকের। সেজন্যই অনেক তারকারাই নিজেদের শিক্ষাজীবন নিয়ে খুব একটা মুখ খোলেন না। বাংলাদেশের টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ও টিভি তারকাদের ‘কার বিদ্যা কতদূর’ তা আজ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
মঞ্চ ও নাটক মাধ্যমের শিল্পীদের বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষিত। একই সঙ্গে সিনেমার সিনিয়র তারকাদের অনেকেই উচ্চশিক্ষায় সার্টিফিকেটধারী।
খবর নিয়ে জানা গেছে, চিত্রনায়ক আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়েছেন। পরবর্তীতে পাকিস্তানের করাচিতে তিনি পড়াশোনা করেছেন। চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন স্নাতকসম্পন্ন। অভিনেতা ও পরিচালক সোহেল রানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেসময়ে ছাত্র রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।
বাংলা চলচ্চিত্রের প্রয়াত খ্যাতিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপি করিম বুয়েট থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন।
অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম নাট্যকলায় স্নাতক শেষ করে উচ্চতর পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। অপরদিকে অন্যতম মডেল অভিনেত্রী সুমাইয়া শিমু করছেন পিএইচডি। চিত্রনায়ক-প্রযোজক অনন্ত জলিলের দাবি- যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করেছেন তিনি। যদিও এ বিষয়ে কোন বিশ্বাসযোগ্য নথি এখনো পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে খ্যাতিমান খল অভিনেতা মিশা সওদাগর পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা নিয়ে। একই প্রতিষ্ঠানে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পড়েছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। সিনিয়র অভিনেত্রী ওয়াহিদা মল্লিক জলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স-মাস্টার্স করেছেন অভিনেত্রী রুনা খান। ফিল্ম স্টাডিজের ওপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেছেন অভিনেত্রী স্বাগতা।
বাংলা চলচ্চিত্রের চিত্রনায়ক রিয়াজের কলেজ জীবন শুরু হয় যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে এইচএসসিতে ভর্তির মাধ্যমে। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ এয়ারফোর্স একাডেমিতে ১৯৯১ সালের জুন পর্যন্ত অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি সম্পূর্ণ করেন।
চিত্রনায়িকা ববি হক আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করেছেন। চিত্রনায়িকা রত্না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। এছাড়াও রত্না সাফল্যের সঙ্গে এলএলবি পাস করেছেন। তিনি ঢাকা ক্যাপিটাল ল’ কলেজ থেকে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী হিসেবে এলএলবি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এই কলেজের পাসকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রত্না মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন।
অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স করেছেন। আর নায়িকা আঁচল স্ট্যামফোর্ড থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেছেন। অভিনেত্রী অর্চিতা স্পর্শিয়া ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করেছেন।
বর্তমানে দুই বাংলার প্রিয় মুখ জয়া আহসান ব্যবস্থাপনা বিষয় নিয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন ইডেন মহিলা কলেজ থেকে। অন্যদিকে লাক্স সুন্দরী বাঁধন বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজ থেকে সাফল্যের সঙ্গে বিডিএস (গ্র্যাজুয়েশন) সম্পন্ন করেছেন।
নতুনদের মধ্যে সাবিলা নূর একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। অভিনয়শিল্পী জোভানও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক করছেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যা সিনহা মিম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও বেশি দিন ক্লাস করতে পারেননি। নতুন করে ভর্তি হয়েছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউথইষ্টে। সেখান থেকে অনার্স শেষ করেছেন এ লাক্স সুন্দরী। এখন সেই বিশ্ববিদ্যায়ের অধীনেই মাষ্টার্স করছেন এই অভিনেত্রী।
চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী নিয়মিত ক্লাশ করে ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যলয়ে তার শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাচ্ছেন। বাপ্পী জানান, প্রতিনিয়ত তাকে ক্লাশ করতে হচ্ছে। আর যেহেতু ১২তম সেমিষ্টার চলছে সামনের মাস থেকেই ইন্টার্নশিপ শুরু করবেন এই নায়ক।
তমা মির্জা আইন নিয়ে পড়াশুনা করেছেন একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইতোমধ্যে পরীক্ষা দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
অনেক খোঁজ নিয়েও জানা জায়নি হালের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনির শিক্ষা জীবনের কথা। তবে গুগল উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, তিনি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে সন্মানের ছাত্রী!
অন্যদিকে চিত্রনায়ক সাইমন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে করেছেন বিএসএস (ব্যচেলর অফ স্যোসাল সায়েন্স)।
বড় তারকাদের শিক্ষাজীবন:
বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকে জানিয়েছেন, বড় নায়ক নায়িকারা তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ব্যস্ততা ও খ্যাতির খাতিরেই পড়াশোনা থেকে ক্রমশ দূরে সরে যান তারা।
চিত্রনায়িকা মৌসুমীর শিক্ষাজীবন নিয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। তবে বাংলাদেশের শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনমত ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি তিনি ও বাংলাদেশের খ্যাতনামা জাদুকর জুয়েল আইচ ইউনিসেফ অ্যাডভোকেটের দায়িত্ব পালন করেছেন।
জানা যায়নি এক সময়ের স্বনামখ্যাত চলচ্চিত্রাভিনেত্রী শাবনুরের শিক্ষা জীবনের কোনো খবরও। তবে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় চলচ্চিত্র বিষয়ক পড়াশোনা করেছেন বলে খবর মিলেছে।
এই সময়ে বাংলা সিনেমার সবচেয়ে বড় তারকা চিত্রনায়ক শাকিব খান। অনেক কাছের মানুষও জানেন না তার শিক্ষা জীবন সম্পর্কে। তার এক ছবির প্রযোজক জানান, ‘শাকিব খান কাছের মানুষদের বলতে শুনেছেন, তিনি উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন এবং প্রায়শই তাকে বলতে শোনা যায়, তিনি প্রকৌশলী হতে চেয়েছিলেন। কয়েকটি সাক্ষাৎকারে অবশ্য তিনি নিজেকে স্নাতক পাসও দাবি করেছিলেন। ইদানীং বিষয়টি তিনি সচেতনভাবে এড়িয়ে যান।
নায়িকা অপু বিশ্বাস পড়েছেন এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুলে। এরপর আলোর মেলা, ক্রিসেন্ট হাই স্কুল এবং সব শেষে ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তবে এরপর তার শিক্ষা জীবনের পরিস্থিতি কী, তা নিয়ে রয়েছে রহস্য। অপু বিশ্বাস নিজে কখনও কাউকে এ বিষয়ে বলেননি।
এছাড়া নায়িকা সিমলা শৈলকূপা গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শৈলকূপা সরকারী কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন। কিন্তু দ্বিতীয়বর্ষে পড়ার সময়ই চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন বলে সেখানেই ইতি টানেন তার পড়াশোনার।