মসজিদ মাদ্রাসায় দান করলে আল্লাহতালা মানুষের মনের আশা পূরন করেন, এমন বিশ্বাসে ধর্মপ্রান মুসলমানেরা অগোচরে বিভিন্ন মসিজিদ, মাদ্রাসা এতিমখানাতে দান করে থাকেন। আজ (শনিবার ) অর্থাৎ ১২ মার্চ ( March ) সকালর দিকে কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ৮টি দানবাক্স খুলে ১৫ টি টাকার বস্তাসহ সোনা-রূপার গহনা, বৈদেশিক মূদ্রা পাওয়া যায়। সকাল থেকে দানবাক্স থেকে পাওয়া অর্থসহ অন্যান্য জিনিসের গনণা চলবে সন্ধা পর্যন্ত বলে জানানো হয়।
এবার দানবাক্সে পাওয়া টাকার পরিমাণ তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বর্ণ, রৌপ্য ও বৈদেশিক মুদ্রাও প্রায় অর্ধকোটি টাকার মতো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সর্বশেষ দানবাক্স খোলা হয় ৭ নভেম্বর। এ সময় সর্বোচ্চ ৩ কোটি ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ টাকা পাওয়া যায়। পাগলা মসজিদের দানবাক্স সাধারণত তিন মাস অন্তর খোলা হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দান বাক্স আসতে বিলম্ব হচ্ছে। এবার ৪ মাস ২ দিন পর মসজিদের দানবাক্স খোলা হলো।
শনিবার ( Saturday ) সকাল ৯টার দিকে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয়। বাক্স থেকে টাকা বের করে প্রথমে বস্তায় রাখা হয়। এরপর শুরু হয় গণনার কাজ।
রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও কিশোরগঞ্জ কর্পোরেট শাখার ( Kishoreganj Corporate Branch ) প্রধান মোঃ রফিকুল ইসলামের ( Md. Rafiqul Islam ) নেতৃত্বে ব্যাংকের ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকা গণনায় অংশ নেন। পাগলা মসজিদের আওতাধীন মাদ্রাসার শতাধিক ছাত্র-শিক্ষক টাকা ভাঁজ করে তাদের সহায়তা করছেন।
টাকা গণনা তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন কিশোরগঞ্জের ( Kishoreganj ) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল ইসলাম সরকার এবং জেলা প্রশাসনের ৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর দায়িত্বে রয়েছেন। নিজ চোখে টাকা গণনার কাজ দেখতে নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ মসজিদে ছুটে আসেন।
কিশোরগঞ্জের ( Kishoreganj ) পাগলা মসজিদের বোর্ডের সদস্যরা জানান, সকাল ৯টার দিকে প্রায় ২০০ জন ১৫ বস্তায় কয়েন গণনা শুরু করেন।
তবে টাকা গণনা শেষ করতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
পাগলা মসজিদের এতিমখানার ১২০ জন শিক্ষার্থী, পাঁচজন শিক্ষক, ৫০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ও মসজিদ কমিটির ১০ জন সদস্য গণনায় অংশ নেন। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ পাগলা মসজিদে এসে নগদ অর্থ ছাড়াও স্বর্ণ-রৌপ্যের অলংকার দান করেন। এছাড়াও মসজিদে গবাদি পশু-মুরগিসহ বিভিন্ন সামগ্রী দান করা হয়।
জনগণের ধারণা খাস খাতির জন্য এ মসজিদে দান করলে মনের আশা পূরণ হয়। তাই দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে স্বর্ণ-রূপার অলঙ্কার দান করে। অন্যান্য ধর্মের মানুষও এখানে দান করেন।
টাকা গণনা কার্যক্রম (সার্বিক) তদারকির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. নাজমুল ইসলাম সরকার গনমাধ্যমকে জানান, পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওয়া গেছে। আমরা আশা করছি এবার টাকার পরিমাণ তিন কোটি ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা এবং সোনা-রূপার গয়নাও পাওয়া গেছে। এখনও গণনা চলছে।
পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জ শহরের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা ( Narsunda ) নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর বহু বছর আগে মসজিদটি নির্মিত হয়।
কালের বিবর্তনে এই মসজিদের পরিধি বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্য। বহু বছর আগে মসজিদটি স্থাপিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা রয়েছে, মসজিদটি গোপনে নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে মসজিদকে কেন্দ্র করে এখানে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স গড়ে উঠেছে। মূল মসজিদ ভবনটিও সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
দেশের অন্যতম লাভজনক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে পাগলা মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স। এই মসজিদের আয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদটিকে ঘিরে আরও ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে। মসজিদ থেকে আয় বিভিন্ন সেবা খাতে সাহায্য করে।
মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ( Shawkat Uddin ) ভূঁইয়া গনমাধ্যমকে জানান, মসজিদটি ১৯৯৭ সাল থেকে ওয়াকফের অধীনে চলে আসছে। এরপর থেকে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মসজিদের সিন্দুকটি নির্মাণ করা হয়। খোলা হয়েছে এবং টাকা গণনা শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ধর্মভীরু মানুষের বিশ্বাস আল্লাহর পথে দান-সাদকা করলে তার মনের আশা পূরন হবে। দান করা ভাল কাজ তবে সেটা সঠিক জায়গায় করা উচিত কারন দানের অর্থ প্রকৃত কাজে ব্যবহার করা হলে জনকল্যান হবে এমন বিশ্বাস সবার। ধর্মকে কেন্দ্র করে আবার অনেক মানুষ ব্যবসা করে থাকে এটা মানুষের কাম্য নয়। প্রতিটি মানুষ তার নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে সেটিই সকলের প্রত্যশা।