বাংলাদেশে ( Bangladesh ) দুর্ঘটনাজনিত কারনে প্রতিনিয়ত অনেক মানুযেরই জীবন অকালে ঝড়ে যায়। একটি দুর্ঘটনাকে একটি পরিবারের জন্য সারা জীবনের কান্নার কারন হয়ে দাড়ায়। দুর্ঘটা কবলিত হয়ে ঝড়ে পড়া জীবনটির সৃতি তার পরিবারের জন্য কতটা দুর্বিসহ তার একটি দৃষ্টান্ত কুমিল্লা জেলায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া তিন শিশুর একটি দুর্ঘটা সামাজিক গনমাধ্যমের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে।
মিমের ( Mimer ) মা রুপা আক্তারের আহাজারি। রেলপথে ছোট স্যান্ডেল। পাশে তিনটি স্কুলব্যাগ পড়ে আছে। একটা ব্যাগ থেকে একটা বই, একটা টিফিন বক্স বের হয়ে পড়ে আছে। ভাঙা টিফিন বক্স থেকে খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে রেলের পাথরের ওপর। বইয়ের পাতাগুলো বাতাসে উল্টে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে তিন স্কুলছাত্রীর জীবনের সব অংকের নম্বর শেষ। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ট্রেনের ধাক্কায় পঞ্চম শ্রেণির তিন শিক্ষার্থী প্রয়ান হওয়ার পর দৃশ্যটি প্রকাশ্যে আসে।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর লেভেল ক্রসিং থেকে প্রায় ২০০ গজ উত্তরে ঢাকা ( Dhaka )-চট্টগ্রাম রেললাইনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রয়ানরা হলেন- রিমা আক্তার, তাসপিয়া আক্তার ও মিম আক্তার। তিনজনই খেলার সাথী। তিনি বিজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও লেখাপড়া করেছেন। দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. সেলিম ( Md. Selim ) নামের এক ব্যক্তি জানান, ঢাকা ( Dhaka )-চট্টগ্রাম রেলপথের একাংশ ডাবল লাইনের। দুপুর ১২টার দিকে বিজয়পুর বাজার এলাকায় দুটি লাইন দিয়ে একই সময়ে দুটি ট্রেন যাচ্ছিল। একটি ছিল চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস। আরেকটি হল ঢাকা ( Dhaka ) থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর ( Chittagong-bound metropolis ) প্রভাতী এক্সপ্রেস ( Morning Express ) ট্রেন। সামনে থেকে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন আসতে দেখে সাইড লাইন ধরে হাঁটছিল তারা। এসময় পেছন থেকে মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ( Morning Express ) ট্রেনটি আসে। ট্রেনের হর্ন বাজল কিন্তু বাচ্চারা সামনের ট্রেন ভেবে পিছনে ফিরে তাকালো না।
এ সময় তিন শিক্ষার্থীর প্রয়ান হয়। প্রয়ানরা হলেন- উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর ( Durgapur ) গ্রামের রিপন মিয়ার মেয়ে রিমা আক্তার লিমা ( Rima Akhtar Lima ), একই বাড়ির রতন মিয়ার নাতনি ও বরুড়া উপজেলার অর্জুনতলা ( Arjuntala ) গ্রামের ভুলু মিয়ার ( Bhulu Mia ) মেয়ে তাসপিয়া আক্তার। তাসপিয়া ও মিম তাদের নানার বাড়িতে পড়াশোনা করত। তারা বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে হেঁটে স্কুলে আসা-যাওয়া করত। বকুল ( Bakul ) মিয়া কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান হিসেবে কাজ করেন। তিনিও দুর্ঘটনাটি দেখেছেন। বকুল ( Bakul ) জানান, শিশু দুটি রেলওয়ের স্লিপারে করে হাঁটছিল। আরেকজন ছিলেন মাঝখানে। প্রভাতী এক্সপ্রেস ( Morning Express ) ট্রেনটি পেছন থেকে এসে দুজনকে স্লিপারে ফেলে দেয়। মাঝখানের মেয়েটিকে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। দুর্ঘটনার পর রেল ও সড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা।
বিজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাদেকুর রহমান ( Sadekur Rahman ) জানান, স্কুলে যাওয়ার পথে ট্রেনের ধাক্কায় তাদের তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়। দুর্ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ওই স্থানে রেলওয়ে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি। এভাবেই স্কুলে আসা-যাওয়া করছে শিক্ষার্থীরা। রেলওয়ে কুমিল্লার সিনিয়র উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার ( Liaquat Ali Majumdar ) জানান, দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রেলগেট ও স্কুল ভাঙচুর করে। তারা প্রায় আধা ঘণ্টা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখে। লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন খন্দকার ( Jasim Uddin Khandaker ) বলেন, প্রয়ানদের নিথরদেহ স্বজনরা নিয়ে গেছে। রেলওয়ে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ( Mohammad Kamrul Hasan ) বলেন, তিন শিশুর পরিবার নিম্নবিত্ত।
দুর্ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। নিহতের বাড়িতে শোকের মাতম : রিমার বাবা রিপন মিয়া কাঁচামালের ব্যবসা করেন। দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে একটি টিনের ঘরে থাকেন। রিমা ছিল সবার ছোট। মা রেনু বেগম ( Renu Begum ) ও বড় বোন সীমা আক্তার বাড়ির উঠানে তার জন্য মাতম করছেন। তাসপিয়া তার নানার বাড়িতে থাকত। বাড়ির সামনে তাসপিয়ার নিথরদেহ পড়ে আছে। তার মা রোজিনা আক্তার নিথরদেহের সামনে বসে শোক করছেন। মা রুপা আক্তারসহ পরিবারের সদস্যরা মিমের ( Mimer ) জন্য শোকে মুহ্যমান। রুপা আক্তার আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন। তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
উল্লখ্য, উপরোক্ত ট্রেন দুর্ঘটনাকে এলাকাবাসী রেলওয়ের উপররেই দোসারোপ করেছেন। তাদের দাবি এই এলাকা চলাচলের পথ অরক্ষিত হওয়ার কারনেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, কারন এই এলাকা থেকে সবসময়েই স্কুলের বাচ্চারা আসা যাওয়া করে তাই একটি ফুট ওভারের দাবি ছিল এলাকাবাসীর অনেক দিনের। তবে সেটি বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলসরুপ এই দুর্ঘটনা হয়েছে বলে দাবি করছে ভুক্তভোগীর স্বজন এবং এলাকাবাসী। তবে ভুক্তভোগী সবাই নিম্নবিত্ত হওয়ায় তাদের ২৫০০০ করে টাকা দিয়েছে জেলা প্রশাসন বলে সামাজিক গনমাধ্যম কর্মীদের তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়।
‘