ড. মুরাদ হোসেন বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আমার বক্তব্য নিয়ে হয়তো অনেক সময়, রাজনীতিতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সবার মনোভাব এক নয়। আমাকে কেউ হয়তো, ইতিবাচকভাবে দেখেছে, আবার অনেকে সমালোচনার মুখোমুখি করে নিয়েছে। জীবনের ক্ষেত্রে, ঝড় বয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
পরিস্থিতি ও বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে বিতর্কিত ড. মুরাদ হাসান। তিনি দাবি করেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় তার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ মনে হওয়ায় তিনি প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের আবেদন করেন। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ড. মুরাদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়েছে।নানা সময়ে রাজনীতির ভেতর-বাইরের বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে। মাঝে বিএনপি( BNP ) চেয়ারপারসন ও তার পরিবারের নারী সদস্যদের নিয়ে আপ”ত্তিকর বক্তব্য দেয়া নিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সেই বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির( Mahir ) সঙ্গে অশ্লী”ল ফোনালাপ ফাঁ’স হয়ে গেল। এরপরই বিড়ম্বনায় পড়েন তিনি।
মুরাদের জ’ঘন্য ও অশোভন কর্মকাণ্ডে ক্ষু’ব্ধ প্রধানমন্ত্রী নিজেই। প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। এরপর শুরু হয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা। জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ( Jamalpur District Awami League ) স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি। একে একে উপজেলা ও ইউনিয়নের পদও ছেড়ে দেওয়া হয়।গত ডিসেম্বর( December ) থেকে হঠাৎ ঝড় বয়ে যাচ্ছে এই রাজনীতিকের ওপর, কখনো গোপনে, কখনো প্রকাশ্যে। তবে মুখটা খুব বন্ধ ছিল। মাঝে নিজ জেলা জামালপুরের( Jamalpur ) একজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতার জানাজায় তাকে দেখা গেছে।
আত্মগোপনে থাকলেও দেশের মানুষ মুরাদকে গোপন রাখে। পদ ছাড়ার পর তিনি কী করবেন তা এই মুহূর্তে জানা যায়নি। এর পরেও তার নিজের দিক থেকে কিছু কথা থেকে যায়। নীরবতা ভেঙে দেশের রাজনীতি, প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন মুরাদ হাসান। যাতে তার পদত্যাগের কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এই কারণগুলি বাস্তব কি না তা পাঠকের উপর নির্ভর করে। তবে সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্য হিসেবে এটাই আসল কারণ দাবি করতে পারেন।
সাক্ষাৎকারে ড. মুরাদ:
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ড. মুরাদ বলেন, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমি বিশ্বাস করি আমার নির্বাচনী এলাকার সবাই আমাকে ভালোবাসে। এই বিশ্বাস নিয়েই রাজনীতি করি। এই বিশ্বাস হারিয়ে ফেললে আর রাজনীতি করব না। আমি আমার বাবা, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান তালুকদারকে( To Matiur Rahman Talukdar ) সারাজীবন দেখেছি শুধু মানুষের উপকার করতে। আমি কখনো কারো ফায়দা নেব না- এই চিন্তা কখনো দেখিনি। একইভাবে আমি সবসময় ভাবি, আমি একজন ডাক্তার। একজন ডাক্তার হিসেবে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া থেকে শুরু করে আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সব মানুষকে সাহায্য করা- এটাই আমার রাজনীতি। জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করি। আমার কাছে রাজনীতির অন্য কোনো সংজ্ঞা নেই।
মুরাদ হাসান বলেন, “রাজনীতির সংজ্ঞা হলো, যারা জনগণের উপকার করতে পারে, মানুষের জন্য কাজ করতে পারে এবং নিজের ক্ষতি করে অন্যের উপকার করতে পারে তাদেরই রাজনীতি করা উচিত। অন্যথায় রাজনীতি করার দরকার নেই। তাছাড়া রাজনীতির আলাদা কোনো মানে নেই। প্রতিমন্ত্রীর পদ ফিরে পেতে নেতা-কর্মীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে মুরাদ হাসান বলেন, আপনারা বলতে চান আমাদের এলাকার মানুষ আমাকে আবারও এমপি এবং প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়। প্রতিমন্ত্রী নিয়ে আসলে চিন্তিত নই। এটা পরিষ্কার। কারণ আমি সব সময় প্রতিমন্ত্রী ছিলাম না।আমি ২০০৮ সালে( In ) নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পাঁচ বছর এমপি ছিলাম।আমি প্রতিমন্ত্রী ছিলাম না।পরে আবার এমপি হয়েছি। এবার ২০১৮ সালে( In ) দ্বিতীয় মেয়াদে এমপি হওয়ার পর আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় প্রধানমন্ত্রী আমাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছেন। প্রথমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং পরে তথ্য প্রতিমন্ত্রী।
পদত্যাগের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, “পরিস্থিতি ও বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আমি প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। বিভিন্ন বিষয় আমার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত বলে মনে হয়েছে। যার কারণে আমি ওই পদ থেকে পদত্যাগের আবেদন করেছি। মঞ্জুর করা হয়েছে।এখন কথা হলো জনগণ আবার এটা চায়।আমি কোনো সমস্যা দেখছি না।আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন।কিন্তু আমি আবার প্রতিমন্ত্রী হব কি না, তা মহান আল্লাহর ইচ্ছা এবং প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা। মুরাদ হাসান তার কাজের পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কাজ করা। মানুষের জন্য কাজ করা। বঙ্গবন্ধুর( Bangabandhu ) আদর্শে কাজ করা। বঙ্গবন্ধুর( Bangabandhu ) চেতনা, বঙ্গবন্ধুর( Bangabandhu ) আওয়ামী লীগের যা কিছু আছে, আমাদের দলের জন্য কাজ করা, মানুষের পাশে থাকা। এলাকার উন্নয়ন করতে পারা। ডাক্তার হিসেবে সেবা দান করা, এগুলো আমার কাজ।
আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে মুরাদ হাসান বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষ আমাকে চাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ অবশ্যই আছে। যদি আমার সেই যোগ্যতা থাকে, তারা যদি আমাকে যোগ্য মনে করে, যদি তারা আমাকে ভালোবাসে, যদি আমাকে বিশ্বাস করে এবং যদি আমার ভাগ্যে আল্লাহ লিখে থাকে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা( Sheikh Hasina ) আমাদের মা, তিনি যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি অবশ্যই নির্বাচন করব।
সর্বশেষ, বলেন রাজনীতি করি জনগণের জন্য। এলাকার জনগণ যদি মনে করে ,আমি তাদের প্রতিনিধি হওয়ার জন্য।আমার রাজনৈতিক দল ও যদি আমাকে সমর্থন করে, তাহলে ভবিষ্যতে যদি আল্লাহ চান আমাকে আবার জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখা যাবে। রাজনীতি করি দল ও জনগণের জন্য সেহেতু দল ও জনগণ যদি না চায়, তাহলে রাজনীতিতে আসার আমার কোন ইচ্ছাও কারণ কোনটাই নেই।