সরকারি অফিসে বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্য সম্পাদনের পাশাপাশি একটি অন্যতম দায়িত্ব হলো সাধারণ মানুষকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করা৷ আর এই সহায়তা প্রদান করার সময় দূর্নীতির শিকার হওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। সরকারি অফিসের এমন হাজারো দূর্নীতির খবরের মধ্যে তথ্যপ্রমাণ সম্বলিত একটি ভিডিওচিত্র নতুন করে সৃষ্টি করেছে আলোড়ন৷
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর( Nasirnagar Brahmanbaria ) উপজেলার ভলাকুট( Valakut ) ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) আলমগীর মিঞা চৌধুরীর( Alamgir Mia Chowdhury ) এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে( Facebook ) ছড়িয়ে পড়েছে।
দুই মিনিট ৫১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আলমগীর মিঞা তাঁর নিজ কার্যালয়ে বসে কাজের বিনিময়ে টাকা দাবি করে এর ব্যাখা দেন। ঘুষ হিসেবে পাওয়া পাঁচ শ টাকা নোট দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এখান থেকে আমি দুই শ টাকা পাব।’
মিহির দেব নামে নাসিরনগরের( Nasirnagar ) এক সাংবাদিকের ফেসবুক আইডিতে শুক্রবার সন্ধ্যায়( Friday evening ) ভিডিওটি দেখা যায়।
ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘দৌঁড়াদৌড়ি যখন করতেন না আফনে আমারে না জিগাইয়া ডিড রাইটারে (দলিল লেখক) জিগান( Jigan ) তারা কত টেহা দে। আফনে অত টেহাইঅই দিবেন। আমি খুলাখুলি বলি আমডা জমা দিলে ত সিস্টেমে অইয়া জাগা। এই সিস্টেমের জন্য এ অত হে অত দেওন লাগে। ছয়-সাতজনে পা।’ ওনার সামনেই বসে থাকা গ্রাহকের প্রশ্নের জবাবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) টাকা পান বলে তিনি উল্লেখ করে বলেন, ‘ইতা কইলে ত হারাপ কতা। কইবো যে তাইনে বইয়া বইয়া আমার বদনাম করে।’
এদিকে তহশিলদার আলমগীর মিঞার( Alamgir Minar ) বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার( Last Thursday ) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভলাকুট( Valakut ) গ্রামের শামীম আহমেদ( Shamim Ahmed ) নামে এক ব্যক্তি। এতে আলমগীর মিয়ার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল তৈরি, খাজনা ও নামজারির জন্য অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
আলমগীর মিঞা চৌধুরী বলেন, ‘স্থানীয় কেউ এ ভিডিওটা করে সাংবাদিকদের দিয়েছে। ভিডিও করার আগে একজন পাঁচ শ টাকার খাজনা দিয়ে গেছে। এ টাকা থেকে দুই শ টাকা ফেরত দিয়েছি বুঝিয়েছি। মূলত ভিডিওটি এডিট করা হয়েছে। কারণ দর্শানোর নোটিশ হাতে পেলে এর জবাব দিবো। ‘
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদি হাসান খান শাওন( Md. Mehdi Hasan Khan Shaon ) শুক্রবার রাতে( Friday night ) বলেন, ‘ভিডিওটি আমি পেয়েছি। ভিডিওতে যিনি কথা বলছেন তিনিসহ দুজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও পাওয়া গেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। পাশাপাশি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের জবাব পাওয়ার পর সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঘুষের টাকা ছাড়া সরকারি অফিসে ফাইলও ঠিকমতো নড়ে না, এমন নানা ধরণের কথা প্রচলিত আছে। নিঃসন্দেহে সকল সরকারি অফিসার মাত্রেই খারাপ বা দূর্নীতিগ্রস্ত নন৷ তবে অধিকাংশেরই অসাধুতা ও দুর্নীতিপরায়ণতা যে সমগ্র জাতির সামনে সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরী করে সে সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই সামান্যতমও।