গনমানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন গঠন করার আইন বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইলফলক স্থাপন করবে। এই ধরনের আইন প্রনয়নের সিদ্ধান্ত দেশের গনতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। বর্তমান নববির্বাচিত ইসিই সৎ এবং নিরপেক্ষ, সিইসিতে নিয়োগপ্রাপ্ত সবাই তাদের সাবেক কর্ম স্থলেও সৎ এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ করে এসেছেন। তাই আশা করা যায়, তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বও তারা সৎ এবং নিষ্ঠার সাথে পালন করবেন। এমটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির গঠন করা নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে সবার কাছে গ্রহনযোগ্যতা পেতে শুরু করেছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জনগণের ইচ্ছা ও আইন মেনে প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ইতিহাসে এটি একটি অনন্য মাইলফলক। রোববার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দলটির সাধারণ সম্পাদক এ কথা বলেন। এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
ফলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত আইন করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনও গঠন করেছেন। আমাদের প্রস্তাবিত নাম বাদ দেওয়া হলেও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করায় আমরা সন্তুষ্ট। গঠিত নির্বাচন কমিশনের ওপর আমাদের আস্থা আছে। আওয়ামী লীগ নবগঠিত নির্বাচন কমিশনকে আন্তরিক অভিনন্দন জানায়। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সব কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
আমরা আশা করি এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা আশা করি নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করবেন। ভোটের মাধ্যমে দেশের জনগণ যাতে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারে তা নিশ্চিত করবেন। নতুন নির্বাচন কমিশনে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রত্যেকেই কর্মজীবনে দক্ষতা, সততা ও যোগ্যতার জন্য সুনামের সাথে কাজ করেছেন। আমাদের প্রত্যাশা অতীতে যেভাবে দেখিয়েছেন আগামীতেও তারা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবেন।
আমি সব রাজনৈতিক দলকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এই কমিশন সম্পর্কে কোনো ধরনের যুক্তিহীন ও বিতর্কিত মন্তব্য না করে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। কমিশন চলমান গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুযায়ী আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।
রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গঠিত নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। এই কমিশনের অধীনে আসন্ন নির্বাচন যাতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সেজন্য সব রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা আশা করি, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল সেই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবে। তিনি আরো বলেন, অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ নির্বাচন কমিশন গঠনকে সাধুবাদ জানালেও বিএনপি নেতারা নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে ঐতিহ্যগতভাবে নেতিবাচক ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
আসলে বিএনপির প্রতি দেশের মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। তারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ও হতাশ একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। এই রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের ফলে নির্বাচনে অংশ নিতে ভয় পাচ্ছে বিএনপি। তাদের লক্ষ্য নির্বাচন নয়, গুপ্তহত্যা-অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা। দেশের মানুষ বারবার তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। এদেশের মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে কেন? তাদের নেতা কে? সাজাপ্রাপ্ত আসামি কি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন? তাদের দুই প্রধান নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছেন। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা ভোট দিতে পারেন না। তাহলে কার নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে? এ প্রশ্নের উত্তর বিএনপি জানে না। তাই বিএনপির দণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে তারা আজ নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি অতীতে ক্ষমতায় এসে জনগণের কোনো কল্যাণ করেনি। দেশের কোনো উন্নয়ন হয়নি। তারা দেশ পরিচালনার নামে দেশের মানুষের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে। হাওয়া ভবন খুলে জনগণের সম্পদ লুট করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে। তিনি আরো বলেন, বিএনপি বারবার দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। সংবিধানকে হত্যা করেছে। গণতন্ত্রের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
তিনি আরো যোগ করে বলেন, তিনি বারবার সংবিধান হস্তগত করেছেন এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন। তারা জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং জনগণের রায়কে উপেক্ষা করে বারবার ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র করেছে। বিএনপি কখনোই নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেনি। বিএনপি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সংবিধান ও আইনের বিধি-বিধান লঙ্ঘন করেছে। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে উন্মাদ ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিদেশি প্রভুদের ওপর ভরসা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চায় বিএনপি। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, দেশের জনগণকে নিয়ে রাজনৈতিকভাবে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগের লাখো নেতাকর্মী।
উল্লেখ্য, সংবিধান অনুযায়ী এবং গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশের সকল জনগনের ভোটের অধিকার রক্ষাকে কেন্দ্র করে স্বাধীন, নিরপেক্ষ, শক্তিশালী এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য এই আইন মুখ্য ভুমিকা পালন করবে। নবনির্বাচিত এই নির্বাচন কমিশনে আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কোন নাম না রাখা হলেও সংবিধান অনুযায়ী এই নির্বাচন কমিশন গঠন করায় সবাই সন্তুষ্ট এবং এর উপর পুরোপুরি আস্থা আছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।