Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এজলাসে খোশ মেজাজে ছিলেন ডিআইজি মিজান, বেরিয়ে তুললেন অভিযোগ

এজলাসে খোশ মেজাজে ছিলেন ডিআইজি মিজান, বেরিয়ে তুললেন অভিযোগ

দুর্নীতি সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনেকটা গ্রথিত হয়ে রয়েছে। কিছুসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী যার বড় প্রমাণ, তারা দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের রক্ষক, হয়েও অবৈধ সম্পদ ও অর্থের কাছে হয়ে গেছে ভক্ষক। ফলাফলের শিকার হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। দুর্নীতি রোধে কমিশন গঠন ও ন্যায্য বিচার হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে দূর্নীতির কারনে আলোচনায় এসেছেন সরকারে দুইজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

ঘুষ নেওয়ার দায়ে পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার পর থেকে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা, দুর্নীতি দমন ব্যুরো এবং পরবর্তীতে দুর্নীতি দমন কমিশনের ইতিহাসে এ ধরনের ঘুষের ঘটনা বিরল। রায়ে ডিআইজি মিজানুরকে প্যারোল ছাড়া তিন বছরের কারাদণ্ড এবং দুদকের বাছিরকে দুটি ধারায় বিনা প্যারোলে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

কারাদণ্ডের পাশাপাশি বাছিরকে ৮০ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুই ধারায় দেওয়া সাজা একই সঙ্গে কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এভাবে বাছিরকে মোট ৫ বছর সাজাভোগ করতে হবে। উভয় ক্ষেত্রেই আটকের সময় বাদ দেওয়া হবে। রায় ঘোষণা উপলক্ষে মিজানুরকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এবং বাছিরকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আদালতে আনা হয়। সকাল ১১টার পর তাদের আদালতে নেওয়া হয়। এরপর বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিচারক আদালতে এসে রায় পড়া শুরু করেন। রায়ের সময় আসামি মিজানুরকে উল্লাস করতে দেখা গেলেও বাছির নীরব ছিলেন।

রায় ঘোষণার পর মিজানুর সাংবাদিকদের বলেন, বাছির আমাকে ঘুষ দিতে বাধ্য করেছে। দুদকের আরও অনেক বাছির আছে। আদালতের আদেশে তা প্রমাণিত হয়েছে। তাদের কেও খুঁজুন। রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা কোনো মামলা নয় ভুয়া মামলা। এদিকে, আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে, রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, দুর্নীতির হাত থেকে কেউ যে নিরাপদ নয় তার প্রমাণ এই রায়। এই রায় দুর্নীতিবাজদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

মামলা, তদন্ত ও বিচার: ৪০ লাখ টাকা ঘুষের অভিযোগে ডিআইজি মিজানুর ও এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই মামলাটি দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লা আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর ওই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। একই বছরের ১৯ আগস্ট মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এটি ২৩ ডিসেম্বর,২০২১ তারিখে শেষ হয়েছিল। মামলায় ১৬আসামির মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল।

গত ২৪ জানুয়ারি দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। ওই দিন দুই আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। গত ৩ ফেব্রুয়ারি মিজানুরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। যুক্তিতে তার আইনজীবী এহসানুল হক খালাস দাবি করেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি খন্দকার এনামুল বাছিরের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু করেন। বাকি যুক্তিতর্ক শেষ হয় ১০ ফেব্রুয়ারি। দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ওইদিনই রায় ঘোষণা করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কমিশনে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের লাভের আশায় অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েছিলেন। মিজানুর রহমানকে অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন। অন্যদিকে মিজানুর রহমান সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এনামুল বাছিরকে ঘুষ দিয়ে একে অপরের সঙ্গে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

ঘুষ নেওয়ার অপরাধে, আদালতের পক্ষ থেকে বিচারের মাধ্যমে তাদের সাজা হয়েছে। বিচার দেখে ভবিষ্যতের অনেক সরকারি কর্মকর্তা সাবধান হবেন ঠিকই। তবে ভালো হবে কিনা এ প্রশ্ন সবার মনে। সেজন্য সবাই সবার জায়গা থেকে দুর্নীতি রোধে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে ঘুষ নেওয়া এবং দেওয়া দুজনেই সমান অপরাধী।

 

 

About bisso Jit

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *