রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানায় গত ২৫ জানুয়ারি অ্যানথ্রাক্সে সংক্রামিত হয়ে একটি সিংহী মারা গিয়েছে। প্রাণীটির মৃত্য়ুর সঠিক কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে প্রয়োজন সাপেক্ষে বিদেশে নমুনা পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এছাড়াও অনতিবিলম্বে আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া গ্রহণের মাধ্য়মে জাতীয় চিড়িয়াখানাকে সিঙ্গাপুর এবং দুবাইয়ের মানে উন্নীত করার মাস্টারপ্ল্য়ান করা হবে। আজ সোমবার সকালে চিড়িয়াখানায় আকস্মিক পরিদর্শনশেষে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘এখানে একটি প্রাণী তাৎক্ষণিকভাবে মারা গেছে। এটির ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদন দেশের দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে এনেছি। প্রতিবেদনে সংক্রমণের কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে তৃতীয় প্রতিবেদন আনা হবে এবং তাতেও সন্তুষ্ট না হলে প্রয়োজনে দেশের বাইরে প্রতিবেদনের জন্য পাঠানো হবে।’
খাবারের কোনো ত্রুটি বা অব্যবস্থাপনা অথবা কোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে প্রাণীটির মৃত্যু হয়েছে কি না, সামগ্রিক বিষয়গুলো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আসার পর বিবেচনায় নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া চিড়িয়াখানায় আর কোনো খাবার যেন না ঢোকে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে রোগের সংক্রমণ যাতে না হয়, সে জন্য অভ্যন্তরীণভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। বাড়তি নিরাপত্তা ও চেকআপের ব্যবস্থাও নিচ্ছি।’
মন্ত্রী জানান, চিড়িয়াখানায় সম্প্রতি জন্ম নেওয়া নতুন দুটি বাঘ শাবকের নিরাপত্তা ও জীবাণু থেকে সুরক্ষায় মাছি বা অন্য কোনো প্রাণী যাতে বাঘের খাঁচায় প্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মন্ত্রী চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রাণীর খাঁচা, প্রাণী চিকিৎসা কেন্দ্র, ওষুধ সংরক্ষণের স্থান পরিদর্শন করেন। তিনি বিভিন্ন প্রাণীর খাবার ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এস এম ফেরদৌস আলম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা, জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মো. আবদুল লতিফসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
চিড়িয়াখানায় কোনো রকম অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা বরদাশত করা হবে না বলেও এ সময় হুঁশিয়ার করেন মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
চিড়িয়াখানার পাশাপাশি গত ২ জানুয়ারি থেকে সাফারি পার্কে একের পর এক জেব্রা মারা যেতে থাকে। সবশেষ ২৯ জানুয়ারি শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে দুটি জেব্রার মৃত্যু হয়। এর আগে ১২ জানুয়ারি একটি বাঘ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও খবরটি দীর্ঘদিন গোপন রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে পার্কটিতে একটি সিংহীর মৃত্যু হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে পরবর্তী সাত মাস পর্যন্ত দর্শনার্থী আগমন নিষিদ্ধ থাকায় জাতীয় চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন পশু-পাখির সংখ্য়া উল্লেখযোগ্য় হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু গত একমাসের ঘটনাপরিক্রমায় চিড়িয়াখানা ও সাফারী পার্কে প্রাণীদের খাদ্য় ও বাসস্থানের প্রকৃত মান সম্পর্কে নতুন করে আশঙ্কা তৈরী হয়েছে।