Saturday , December 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ইভ্যালির রাসেলসহ ঊর্ধ্বতনদের মাসিক বেতন আকাশছোয়া, প্রকাশ্যে তালিকা

ইভ্যালির রাসেলসহ ঊর্ধ্বতনদের মাসিক বেতন আকাশছোয়া, প্রকাশ্যে তালিকা

বাংলাদেশের মাটিতে এখন সব থেকে আলোচনার যে বিষয়টি হয়ে দাড়িয়েছে সেটার নাম ইভ্যালি। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ই কমার্স প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরেই নানা ধরনের লসে থেকে কোম্পানিটি চালিয়ে যাচ্ছিল তাদের ব্যবসা। তবে কমেনি তাদের নিজস্ব বিলাসিতা।গ্রাহক ও মার্চেন্টের ৩৩৯ কোটি টাকার হদিস না থাকার পরেও ইভ্যালির এমডি ও চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতনরা মাসে ১৮ লাখ টাকা বেতন নিচ্ছেন। এছাড়া গাড়িসহ অন্যান্য সুবিধা তো আছেই। জুন মাসে ইভ্যালি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৬ সদস্যের পরিদর্শন টিমের তৈরি গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির পুঞ্জিভূত নিট লোকসানের পরিমাণ ৩১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৬ হাজার ১৪৮ টাকা। কোনো কোম্পানির লোকসান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়া এবং মোট সম্পদের দ্বিগুণের অধিক ও শেয়ার মূলধনের দুইশত গুণেরও অধিক হারে লোকসান হওয়া কোম্পানিটির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার অন্যতম ঘাটতি নির্দেশ করে। অদূর ভবিষ্যতে এই বিপুল পরিমাণ লোকসান কাটিয়ে ওঠার কোনো গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা না থাকায় দীর্ঘ মেয়াদে কোম্পানির অস্তিত্ব রক্ষা অসম্ভব হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৬ হাজার ১৪৮ টাকা। অর্থাৎ শেয়ার মূলধনের ৩১৫.৪৪ গুণ ইকুইটি ঘাটতি কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনার দূর্বলতা প্রমাণ করে। অবাক করা বিষয় হলো এতো লোকসানের মধ্যেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক মোহাম্মদ রাসেল মাসিক সাড়ে ৪ লাখ টাকা এবং চেয়ারম্যান ও ৬০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হিসেবে শামীমা নাসরীন মাসে ৫ লাখ টাকা বেতন নিয়েছেন। চেয়ারম্যান ও এমডি হিসাবে কোম্পানি থেকে গাড়িসহ অন্যান্য সুবিধা নিয়েছেন তারা। এছাড়া কোম্পানির কতিপয় কর্মকর্তা উচ্চ হারে ৮ লাখ ২ হাজার ২৩০ টাকা বেতন নিয়েছেন।

অন্যদিকে ক্রয়াদেশ বাতিলের কারণে গ্রাহকের কাছ থেকে গৃহীত অর্থ ফেরত প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না। ক্রয়াদেশ বাতিলের প্রেক্ষিতে গ্রাহককে অর্থ ফেরত প্রদানের প্রক্রিয়াটি আইনি সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংগঠিত হয় না। বরং কোম্পানির নিজস্ব পছন্দের প্রক্রিয়া প্রয়োগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

পণ্য ফেরতে গ্রাহকের পরিশোধিত মূল্য অপেক্ষা অধিক পরিমাণে অর্থ ফেরত প্রদানের বিষয়টিও বিভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে। এসব কারণে বিভিন্ন উচ্চ মূলের পণ্য যেমন- হোম অ্যাপ্লায়েন্স, মোটরসাইকেল, গাড়ি ইত্যাদির ক্ষেত্রে এক শ্রেণির গ্রাহক বেশি অর্থ ফেরত পাওয়ার আশায় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে অর্থ লগ্নি করছেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দুই সদস্যের টিম কাজ করছে। টিমের অপর সদস্য হলেন- উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালাম। পুরোনো বেশ কয়েকটি অভিযোগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে শুরু হয়েছে দুদকের অনুসন্ধান।

এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আসা অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই অনুসন্ধান নথি চালু হয়। অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এর আগেও এ বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। ওই অভিযোগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ সকল বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম হিসাবে ইভ্যালির নেওয়া প্রায় ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না- সর্বশেষ গত ৪ জুলাই আসা এমন অভিযোগসহ বিভিন্ন অনিয়ম খতিয়ে দেখতে দুদকসহ সরকারের চার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪ মার্চে ইভ্যালির মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা ( চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা। ওই তারিখে গ্রাহকের কাছে ইভ্যালির দায় ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের কাছে দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা। গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছ থেকে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকার মালামাল নেওয়ার পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ৯১৪ টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও প্রতীয়মান হয়, ইভ্যালি তাদের চলতি সম্পদ দিয়ে মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে বা অর্থ ফেরত দিতে পারবে। বাকি গ্রাহক এবং মার্চেন্টের পাওনা পরিশোধ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে গ্রাহক ও মার্চেন্টের কাছ থেকে গৃহীত ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ ১৮ হাজার ১৭৮ টাকা আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ দিকে এত সব তথ্য প্রকাশ পাবার পর এ সবের সত্যতা যাচাই করার জন্য যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মুঠো ফোনটি পাওয়া যায় বন্ধ। ইতিমধ্যে তাদের দেশ ত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশের আদালত।

About Ibrahim Hassan

Check Also

মাত্র ১৫ মিনিটে বাংলাদেশ দখলের হুমকি, উত্তেজনা পশ্চিমবঙ্গে

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ‍্যালঘু সেলের মালদা জেলা সভাপতি টিঙ্কু রহমান বুধবার (১১ ডিসেম্বর) এক বিতর্কিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *