Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / National / কী কী থাকছে ইসি গঠনের আইনে, বিস্তারিত জানালেন আইনমন্ত্রী

কী কী থাকছে ইসি গঠনের আইনে, বিস্তারিত জানালেন আইনমন্ত্রী

কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশ জুড়ে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে চলছে বেশ আলোচনা-সমালোচনা। তবে এই নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে নিরলস ভাবে কাজ করছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। এই আইনে কী কী থাকছে এই বিষয়ে বিস্তারিত উঠে এলো প্রকাশ্যে।

সার্চ কমিটির মাধ্যমে এর আগে গঠিত সব নির্বাচন কমিশনকে বৈধতা দেওয়ার পাশাপাশি ইসি গঠনের আইনের খসড়া রোববার সংসদে উত্থাপিত হচ্ছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ উত্থাপন করবেন। প্রথা অনুযায়ী, বিলটি পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হবে। আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, গণতন্ত্র সুসংহত ও প্রাতিষ্ঠানিক হবে এবং জনস্বার্থ সমুন্নত হবে। ” বিলে বলা হয়েছে, “প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইতিমধ্যে গঠিত তদন্ত কমিশনের কার্যাবলী ও কার্যাবলীর ভিত্তিতে বৈধ বলে গণ্য হবে। কমিশনার এবং যে কোন আদালতে যে কোন প্রশ্ন উত্থাপিত করা যাবে না।”

সার্চ কমিটির কাজ কী হবে

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, সার্চ কমিটির কাজ হচ্ছে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করা। সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনাররা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনায় নিয়ে পদটিতে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবেন। সিইসি ও কমিশনারদের প্রতিটি পদে দুজনের নাম সুপারিশ করবে তদন্ত কমিটি। খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কমিটি গঠনের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশটি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হবে। বিলে বলা হয়েছে, সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে প্রার্থী খোঁজার জন্য সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের নাম আমন্ত্রণ জানাতে পারবে।

সার্চ কমিটিতে কারা থাকবেন

বিলে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপতি ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। সদস্যরা হবেন প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত ২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, ৩ সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির কোরাম সভা অনুষ্ঠিত হবে। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা

বিলে বলা হয়েছে, সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে সুপারিশের জন্য একজনের ৩টি যোগ্যতা থাকতে হবে।

>> তাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।

>> বয়স কমপক্ষে ৫০ বছর হতে হবে।

>> যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা-সরকারি বা বেসরকারি পদে কমপক্ষে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

সিইসি ও কমিশনারদের অযোগ্যতা

প্রস্তাবিত আইনে সিইসি ও কমিশনার পদে ছয়টি অযোগ্যতার বিধান রাখা হয়েছে।

>> আদালত যদি অপ্রাকৃতিক ঘোষণা করে।

>> দেউলিয়া হওয়ার পর দায় থেকে রেহাই না পেলে।

>> আপনি যদি একটি বিদেশী দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন বা বিদেশী দেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন বা স্বীকার করেন।

>> নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত এবং কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ড।

>> আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবোরেটরস (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ-১৯৭২-এর অধীনে কোনো অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে।

>> প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত না হলে ক্ষমতাসীন আইন দ্বারা অযোগ্য নয়।

আইনের প্রেক্ষাপট

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য বিলটি আনা হচ্ছে। কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের বিদায়ের পর মন্ত্রিসভায় খসড়া আইনের আকস্মিক অনুমোদনের পর এখন তা সংসদে পাসের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে ডিসেম্বরে ইসি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরুর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গেইল বলেছিলেন, ‘সময়ের অভাবে’ এবার আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে সংলাপে অংশগ্রহণকারী সব দলই আইন প্রণয়নের জোরালো দাবি জানালে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। গত সোমবার আইনটির খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর এই অধিবেশনেই তা উত্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। তার আগে রাষ্ট্রপতিকে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনটি পাস হতে চার সপ্তাহ সময় আছে এবং গেজেট প্রকাশ করতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, সাংবিধানিক সংস্থা ইসি-তে কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। আর তা হবে আইনের আওতায়। এত দিন এ ধরনের আইন না থাকায় প্রতিবারই ইসি গঠনের সময় বিতর্ক শুরু হয়। তা এড়াতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ২০১২ সালে একটি নতুন কমিশন নিয়োগ করেন। জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটি নামে একটি মধ্যবর্তী ফোরাম তৈরি করেন, যা পড়ে এবং বিতর্কও হয়। এভাবে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিককে নিয়ে বিচারপতির নেতৃত্বে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। সার্চ কমিটি সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারের প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করে। সেই তালিকা থেকে একজন সিইসিসহ পাঁচজনের বেশি কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালেও সেই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন। এবারও তিনি একই ধারায় এগোচ্ছেন। তবে সংলাপে অংশ নেওয়া ২৫টি দলের প্রায় সবাই ইসি গঠনের স্থায়ী সমাধান হিসেবে আইন প্রণয়নের ওপর জোর দিয়েছে। বৈঠকে রাষ্ট্রপতিও এ বিষয়ে একমত হয়েছেন বলে দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন। তবে বিএনপিসহ ৭টি দল সংলাপে অংশ নেয়নি।

এবারের দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিতহতে যাচ্ছে সার্চ কমিটি গঠনের মধ্যে দিয়ে। এই কমিটি গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সংঙ্গে সংলাপ করেছেন। এই সংলাপে অনেক দল অনেক ধরনের মতামত প্রদান করেছে। তবে এই সংলাপে যোগ দেয়নি জাতীয়তাবাদী বিএনপি দল। এবং তারা এই সংলাপের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

About

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপকে লিজ দিচ্ছে। তবে প্রধান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *