ধারাবাহিকভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় ইউপি নির্বাচন ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ তাদের দলীয় প্রতীক নিয়েই এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপি এই সকল নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভিন্ন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এমনটাই জানাচ্ছেন আ.লীগ নেতারা। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীরা তাদের মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন ও তাকে জয়ী করার জন্য কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। তবে শুধু এটাই নয় নির্বাচনে অংশগ্রহন করা প্রার্থীরা নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য মোটা টাকা ছড়ানোসহ ভোটারদের হু’মকি-ধমকি ও সেই সাথে ভ/য়ভী’তি দেখিয়ে চলেছে। নির্বাচনে ভোট কারচুপিরও অভিযোগ করছেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। এবার দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে ভোটার ও কর্মীদের অনেকটা ভ’য় দেখালেন এক এমপি।
‘আওয়ামী লীগের বড় নেতা হয়ে গেছেন, কাল সকালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না থাকুক কুত্তার মওতি (কুকুর) রাস্তায় পিটাইবো’- নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহীমের এমনই এক বক্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভা’ইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পরাজয় হলে ওই ইউনিয়নে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার হু’মকিও দিয়েছেন তিনি।
গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে চাটখিল উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. শহীদ উল্যাহর বাড়িতে এক ঘরোয়া বৈঠকে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি এ কথা বলেন।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে এমপি বলেন, আওয়ামী লীগের বড় নেতা হয়ে গেছেন, কাল সকালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না থাকুক কুত্তার মতো (কুকুর) রাস্তায় পিটাইবো। আমি সোনাইমুড়ী চাটখিলের জনগণের প্রতিনিধি, আমি রাত ২টার সময় পর্যন্ত মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে এসে গেছি। আমি সর্বশেষ আপনাদের বলে যেতে চাই, যদি শেখ হাসিনার নৌকা এ ইউনিয়নে জয়লাভ না করে, আমি আপনাদের কথা দিয়ে যাচ্ছি আমি আপনাদের এ ইউনিয়নের কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করব না।
তিনি বলেন, যারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে মানে না, তারা কিসের আওয়ামী লীগ করে, কিসের রাজনীতি করে। যারা আওয়ামী লীগ করে কিন্তু শেখ হাসিনার প্রতিনিধিত্ব করে না এদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। চেয়ারম্যান একটা পাঁচ বছরে বরাদ্দ পান ১ কোটি টাকা। আট বছর আপনাদের পাশে থেকে শ্রম দিছি তার প্রতিদান আপনারা এটা দিচ্ছেন, নৌকার প্রতিনিধিকে এ প্রতিদান দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে সাংসদ এইচ এম ইব্রাহীমের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতাকর্মী জানান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হয়েও অনেকে দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করছেন। যার কারণে সাংসদ তাদের উদ্দেশ্য করে এক ঘরোয়া বৈঠকে এমন কথা বলেছেন। যেটা কেউ একজন গোপনে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছে।
আগামী ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন সাতজন প্রার্থী। যার মধ্যে মো. শহীদ উল্যাহ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রার্থী। ইসলামী আ’ন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত হাত পাখা প্রার্থী হয়েছেন জহিরুল ইসলাম।
অপর পাঁচজন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। তারা হচ্ছেন- শামছুল আলম, বোরহান উদ্দিন রাব্বানী, মাসুদ রানা, মো. জাকির হোসেন ও মো. মেহেদী হাসান। পরবর্তীতে প্রত্যাহার ও যাচাই-বাছাই শেষে আ.লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) হিসেবে মাসুদ রানা (আনারস), মেহেদী হাসান (অটোরিকশা) ও বোরহান উদ্দিন রাব্বানি (চশমা) পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আগামী ৫ জানুয়ারি চাটখিলের ৯টি ও সোনাইমুড়ি উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন জেলায় ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন প্রায় শেষের দিকে রয়েছে। এই নির্বাচনে বেশিরভাগ ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এদিকে বেশ কিছু ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী যারা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তারা জয়ী হয়েছেন। এদিকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামি মাসের মাঝামাঝি সময়ে, এরপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে চলেছে সরকার। তাই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগেই সকল ইউনিয়নে নির্বাচন সম্পন্ন করছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।