দেশের বিশিষ্ট শিল্পী, চারুকলার অধ্যাপক এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুস্তফা মনোয়ার দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক মুস্তফা মনোয়ার দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অসাধারণ প্রভাব ফেলেছেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির প্রাক্তন চেয়ারম্যান, মুস্তফা মনোয়ার একজন প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী, তার উজ্জ্বল অবদানের জন্য সারাদেশের ছোট ছেলে মেয়েদের কাছে একজন জনপ্রিয় মানুষ এবং “বাংলাদেশের পুতুল মানুষ” হিসেবে তিনি পরিচিত। ১৯৩৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর যশোরে প্রখ্যাত কবি গোলাম মোস্তফার ঘরে জন্মগ্রহণ করা একুশে পদক বিজয়ী বিশিষ্ট শিল্পী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর শিল্পকলায় একজন উস্তাদ হয়ে দেশের সেবা করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। মোট ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থী।
বর্তমান সময়ে পরিবারের চাপে অনেকে জিপিএ-৫ পেতে পড়াশোনা করে। ফলে সৃজনশীল বিষয়ে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ‘আসলে পুরো পড়াটা যদি সৃজনশীল হতো, তাহলে আটকে রাখা যেত না। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, এ ধরনের পড়া হলো একটা ফ্যাক্টরির বস্তার ওপর মার্কা মারা ছাপ। এই কোম্পানির এই জিনিস। এ প্লাস দরকার কী তোমার? অন্য কিছু পেলেই তো হয়। পরিবারের চাপ, এ প্লাস- পুরো সোসাইটি মার্কা মারার দিকে চলে যাচ্ছে। পৃথিবীর সব বড় মানুষকে দেখো, এ প্লাস কে পেয়েছে খুঁজে বের করো। কিংবা একেবারে ফার্স্ট হয়েছে। খুবই কম। পৃথিবীতে এ+ পাওয়া বড় মানুষ নেই। ওরা চাকরি করে, গোলামি করে। ব্যস! বড় মানুষ না। তবে চাকরি পাবে। তোমার জীবন যদি অন্যের গোলামি করা চাকরির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তুমি সৃজনশীল কিছুই করবে না। তোমার ছবি আঁকতে ভালো লাগে, এটা তো তোমার নিজের জন্য নয়, ছবিটা কি তুমি বাক্সে তুলে রাখবে? না। তুমি নিশ্চয়ই দেখবে। দেখাবে, আর ভালো লাগবে। তোমাদের প্রকৃতিকে ভালো লেগেছে। সেটা কি তোমরা প্রকাশ করবে না?’
মুস্তাফা মনোয়ার আরও বলেন, ”আগে তো খেলাধুলা নিয়ে ‘এই যে খালি খেলেই বেড়ায়’ বলে দিত মার। আর এখন তো যারা ক্রিকেট খেলছে, তাদের নিয়ে নাচানাচি করে। অনেক পয়সা করছে তো, তাই ক্রিকেটে এখন আর কোনো অসুবিধা নেই। এখন বলে, ‘সবাই জিপিএ-৫ পাবি। যা পড়’। এই জি বোঝায় জেলখানা, জিপিএ-৫ অর্থ দাঁড়ায় জেলের ৫ নম্বর সেল! ওখানে থাকো। আমাদের পয়সার দরকারটা কী? আমি বেশি পাইনি। অল্প পেয়েছি। চলে যাচ্ছে তো। এখনো নেশার মধ্যে আছি। এখনো বাচ্চাদের জন্য কাজ করছি, বড়দের জন্য করছি। এটা বিশাল নেশা।”
গুণী এই চিত্রশিল্পীর ভাষ্যমতে, ‘গরুর পেছনে লোহা পুড়িয়ে যেমন ছাপ দেওয়া হয় না, সে রকম তোমাদেরও ছাপ দেওয়া হয় জিপিএ-৫ এর মাধ্যমে।’
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থী শিবিরে পাপেট শো আয়োজন করেন যুদ্ধ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার জন্য। তার টেলিভিশন পাপেট শো ‘মনের কথা’ গত ১২ বছর ধরে বিটিভিতে সম্প্রচারিত হচ্ছে। মুস্তফা মনোয়ার পূর্ব পাকিস্তান কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটসের প্রভাষক ছিলেন। পরে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মহাপরিচালক হন। তিনি শিল্পকলা একাডেমি ও ন্যাশনাল মিডিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পাপেট শো-এর মাধ্যমে, মুস্তফা মনোয়ার ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী অসংখ্য বাংলাদেশী মানুষকে আনন্দ দান করতেন।