ক্ষমতাকে পুজি করে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটিয়ে আসছিলেন সম্প্রতি দেশের ব্যাপক আলোচিত একটি নাম ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। তবে এতদিন তার সব অন্যায়-অবিচার মুখ বুঝে সহ্য করে এলেও, পদত্যাগের পর তার অপকর্মের প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন অনেকেই। আর তাদের মধ্যে একজন তারিক চয়ন।
তিনি বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর, বহুল আলোচিত সেভেন মার্ডারের ঘটনায় নিজ মেয়ে জামাইয়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের মুখে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তৎকালীন মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছিলেন, “হাতি গর্তে পড়লে চামচিকায়ও লাথি মারে। এমন সময়ে হেল্প করতে হয়।”
মন্ত্রীর মেয়ে জামাইকে যদি হাতি ধরা যায় তাহলে স্বয়ং মন্ত্রীকেতো ‘ম্যামথ’ বলতে হয়। হ্যা, বরফযুগের বিলুপ্ত প্রাণী অতিকায় লোমশ হাতি ম্যামথের কথাই বলছি। সদ্য সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে মায়ার কথামতো ম্যামথই বলতে হবে।
ম্যামথকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের প্রবল আগ্রহ। তাদের নিয়ে মানুষের কল্পনার যেমন কমতি নেই, তেমনি আগ্রহেরও শেষ নেই। বিশেষ করে এনিমেশন মুভি ‘আইস এইজ’ এর কারণেও ম্যামথ এর ধারণা খুব জনপ্রিয়তা লাভ করে। আধুনিক যুগের ম্যামথ মুরাদকে নিয়েও মানুষের মধ্যে এখন প্রবল আগ্রহ।
মুরাদ এখন কি করছেন, কিভাবে করছেন; কোথায় যাচ্ছেন, কিভাবে যাচ্ছেন; কি খাচ্ছেন, কিভাবে খাচ্ছেন; কোথায় ঘুমাচ্ছেন, কিভাবে ঘুমাচ্ছেন ইত্যাদি সবকিছুই এখন ছেলেবুড়ো সকলের আলোচনার বিষয়। মূলধারার গণমাধ্যমে না আসলে যা হয়, মুরাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের গুজব।
তাছাড়া ম্যামথ গর্তে পড়লে যা হয়, মুরাদের ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই।একেবারে বেরসিক আর ক্ষমতার ভয়ে দারুণ ভীত মানুষটিও তাকে নিয়ে মজা, ইয়ার্কি, ঠাট্টা, তামাশা, রসিকতা করতে ছাড়ছেন না। সবার ভাবখানা এমন যে, ‘কোন কাজকর্ম যেহেতু নেই, মুরাদকে একটা গালি দিয়ে আসি’।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখব সবচেয়ে বেশি ট্রোলড হচ্ছেন মুরাদ। শুরুর দিকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এটি ‘যে যাই বলুন মুরাদের একটি চুলও কেউ ছুতে পারবে না, কেন জানেন? মুরাদতো টাকলা, তার মাথায়তো চুলই নেই’। আর এই মুহুর্তে বিমানবন্দরে মুরাদের ব্যাগের উপর মাথা রেখে মাটিতে শুয়ে থাকার কিংবা মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে মাথা নীচু করে হাটবার ছবিগুলো খুব ভাইরাল।
কানাডাতে মুরাদ ‘পালিয়ে যেতে’ পারে নি এই নিয়ে বেজায় খুশি নেটিজেনরা। কিন্তু এ নিয়ে আবার নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটিও হচ্ছে। কেউ লিখছেন, ‘মুরাদকে কানাডা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে’। কেউ আবার তার ভুল শুধরে দিয়ে লিখছেন, ‘মুরাদকেতো ঢুকতেই দেয়া হয় নি, ঢুকতে পারলে তবেইতো আসবে বের করে দেওয়ার কথা’।
কানাডা থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর অনেকে আবার মুরাদের শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে তাকে নানান শলাপরামর্শ দিচ্ছেন। বেশিরভাগই তিনি এখন কোন দেশে যেতে পারেন সে বিষয়ে। কেউ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে না যেতে পারলেও মুরাদতো ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘বিশেষ অতিথি’ হতে পারেন। নারীবিদ্বেষী মন্তব্যে মুরাদ যেহেতু ট্রাম্পকেও ছাড়িয়ে গেছেন, সুতরাং ট্রাম্প নিশ্চয়ই তাকে সাদরেই বরণ করে নেবেন। অনেকে আবার বলছেন, উত্তর কোরিয়া কিংবা মিয়ানমারের মতো দেশগুলো ভালো বিকল্প হতে পারে মুরাদের জন্য।
তবে, এসবকিছু ছাপিয়ে মুরাদ সবচেয়ে নিষ্ঠুর রসিকতার শিকার হন, যখন মুরাদের সাথে তার স্ত্রী-কন্যার ছবিও ভাইরাল হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে বলতে হয় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সেই কথা, “হাতি গর্তে পড়লে চামচিকায়ও লাথি মারে। এমন সময়ে হেল্প করতে হয়।” মায়া সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ওই মন্তব্য করেছিলেন। মুরাদের পরিবারের সদস্যদের ছবি ভাইরাল হওয়া থেকে তাদের রক্ষা করতে ‘হেল্প’ করতে পারেন ওই ‘ফেসবুক সাংবাদিক’রাই।
এর আগে গত রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে একটি ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়তেই রীতিমতো নানা আলোচনায় আসেন ডা. মুরাদ হাসান। আর এর দুই দিনের মাথায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করতে হয় তাকে।