Tuesday , December 31 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বিষয়টি জেনেছি টেলিফোনে, নেত্রীর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি: সেলিনা আইভী

বিষয়টি জেনেছি টেলিফোনে, নেত্রীর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি: সেলিনা আইভী

বাংলাদেশের অন্যতম একজন রাজনীতিবীদ সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি পারিবারিক ভাবেই রাজনীতির সঙ্গে সক্রীয় রয়েছেন। তিনি মূলত বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং জনপ্রিয় ও পুরানো একটি দল আওয়ামীলীগের সাথে যুক্ত রয়েছেন। এমনকি তিনি এই দলের হয়ে বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবং আবারও এই পদের জন্য আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি তার সঙ্গে বেশ কিছু কথোপকথন হলো।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। আগামী ১৬ জানুয়ারি এই নির্বাচন হবে। নির্বাচনে মনোনয়ন, মেয়র হিসেবে নিজের কর্মকাণ্ড এবং আগামী দিনে তাঁর পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

প্রশ্ন: নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হলেন ২০০৩ সালে। এরপর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হলো। সেখানে এখন পর্যন্ত মেয়র আপনি। স্থানীয় সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে আছেন প্রায় ১৮ বছর। দল আবার আপনাকে মনোনয়ন দিয়েছে। কেমন লাগছে?

সেলিনা হায়াৎ আইভী: স্থানীয় সরকারে অনেক কাজ করার জায়গা আছে। এটা এমন একটা জায়গা, যেখানে সমাজের সবস্তরের মানুষের কাছে যাওয়া যায়, সবার মঙ্গলে অনেক কাজ করা যায়। ভালো লাগছে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। যদি আল্লাহ হায়াত দেন এবং মানুষ আমাকে নির্বাচিত করে, তবে আমি আবারও মানুষের সেবার সুযোগ পাব আরও পাঁচ বছর।

প্রশ্ন: মনোনয়ন পাওয়ার পর দলীয় প্রধান কিছু বলেছেন আপনাকে?

সেলিনা হায়াৎ আইভী: মনোনয়নের বিষয়টি জেনেছি টেলিফোনে। কো/ভি/ডের কারণে এখন দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে। তাই নেত্রীর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাকে আশীর্বাদ করেই তিনি মনোনয়ন দিয়েছেন।

প্রশ্ন: সেলিনা হায়াৎ আইভী অনেকের কাছে একটি প্রতিবাদের প্রতীক। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত, আপনার পথ কখনো সহজ ছিল না। এসব বাধা কী এখনো আছে?

সেলিনা হায়াৎ আইভী: বাধা তো থাকবেই। বাধা এখনো আছে। প্রতিমুহূর্তে লড়াই করে টিকে আছি। একেক সময় বাধাটা একেক রকম। কখনো একটু সহজ হয় পথ, আবার কঠিন হয়ে ওঠে। তবে এখনো বাধার মুখেই আছি। এমন পরিস্থিতি কখনো হয়নি যে খুব সহজে আমি কিছু করে ফেলতে পেরেছি।

প্রশ্ন: আপনি বলছেন যে আপনার কাজে বাধা আসে, এত বাধা কেন?

সেলিনা হায়াৎ আইভী: এখানে শক্ত প্রতিপক্ষ যেহেতু আছে, তাই বাধা থাকবে। সে প্রতিপক্ষ নিজ দল বা ভিন্ন দল, যা–ই হোক। আমাদের এখানে রাজনীতির প্রকৃতি এমন হয়ে গেছে যে ভালো কাজকেও অনেক সময় উৎসাহিত করতে পারি না। বরং দলের ভেতরের নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার চেয়ে বাধা দেওয়াটাকেই প্রাধান্য দিই। এটা আমাদের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়ে গেছে। এটা থাকবেই। বাধা–বিপত্তি অতিক্রম করেই স্থানীয় সরকারে কাজ করতে হয়। শুধু আমি না, দেশের সব স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদেরই নানা বাধা পেরোতে হয়।

প্রশ্ন: দলের মনোনয়ন পাওয়া কি এবার সহজ ছিল?

সেলিনা হায়াৎ আইভী: দলের মনোনয়ন নিয়ে দলীয় প্রতিযোগিতা অবশ্যই ছিল। গত দেড় বছর ধরে এই প্রতিযোগিতাই চলল। এখানে আমার জন্য পথ মোটেও সহজ ছিল না। এখানে আমার বিরুদ্ধে ধর্মীয় ইস্যুও তোলা হয়েছে। জবরদখলের কথা বলা হয়েছে। এসব নিয়ে নানা প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে। তাই পথ সহজ ছিল না। তবে এটা ঠিক, দলীয় প্রধানের একটা আস্থা ছিল আমার কাজে। শুধু তাঁর না, দলের অনেকেরই ছিল। তাঁরা মনে করেছেন, বাধা-বিপত্তির মধ্যেই আমি কাজগুলো করতে পারব। করেছিও তাই। তিনবার দল আমাকে এখানে দেখেছে। বরাবরের মতো অবশ্য এবারও সন্দিহান ছিলাম কী হয়। আমি আমার মতো করেই কাজ করেছি।

প্রশ্ন: তাহলে আমরা ধরতে পারি, আপনার বিরোধিতাকারীরা এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী?

সেলিনা হায়াৎ আইভী: তাঁরা ১০০ ভাগ শক্তিশালী আছে। তবে এই প্রতীকের নির্বাচনে আমার সবাইকেই প্রয়োজন আছে। প্রতিযোগিতার কারণে কেউ আমার বিরোধিতা করতেই পারে। তবে সত্য জয়ী হয়।

প্রশ্ন: নারায়ণগঞ্জকে একটি সবুজ নগরী করার প্রতিশ্রুতি ছিল আপনার। কিন্তু নগরের ফুটপাত থেকে তো এখনো দখলদারদের ওঠানো গেল না। কী হলো সর্বশেষ?

সেলিনা হায়াৎ আইভী: ফুটপাতের বিষয়টি নিয়ে আমি নিজে মর্মাহত। কারণ, দুই বছর আগে এই ফুটপাত নিয়েই আমার ওপর হামলা হয়েছিল। দুই মাস আগে হকারই আরেক হকারকে মেরে ফেলেছে। তারপরও প্রশা/স/ন কেন এত শৈথিল্য দেখাচ্ছে, তা আমার বোধগম্য নয়। যখন প্রশাসন চায় না ফুটপাতে হকার বসবে না, তখন বসে না। পু/লি/শ প্রশাসন চাইলে ফুটপাতের সমস্যা সমাধান করতে পারে। ফুটপাতে বসার কোনো কারণ নেই। কারণ, একটি মার্কেট আমরা করেছি, যেখানে ছয় শর বেশি দোকানের ব্যবস্থা আছে। তাই এভাবে ব্যাপক হারে ফুটপাত দখল করে দোকান বসানোর কোনো কারণ নেই। শক্তির বলে নারায়ণগঞ্জে এটা হচ্ছে। রাগে-ক্ষোভ-দুঃখে এখন আর বলি না। অনেকবার পু/লি/শ প্র/শা/স/নকে বলেছি। এটার পেছনে কাদের হাত, সেটা সবাই বুঝি; কিন্তু বুঝেও কিছু করতে পারি না।

প্রশ্ন: হকার বসানোর পেছনে মূল কারণ কী?

সেলিনা হায়াৎ আইভী: ১০০ ভাগ চাঁদাবাজি। তা না হলে এখানে হকার বসতে দেবে কেন? সাধারণ মানুষ চায় না, মেয়র চায় না, হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। তবু কাজ হচ্ছে না। সম্প্রতি এক সাংবাদিককে হকাররা পিটিয়েছে। এসব অপরাধ হচ্ছে। তবু ফুটপাত দখলমুক্ত হচ্ছে না। এর পেছনে কোনো না কোনো বড় শক্তি আছে।

প্রশ্ন: শহর থেকে বাস টার্মিনাল সরানোর কাজ কত দূর এগিয়েছে?

সেলিনা হায়াৎ আইভী: হ্যাঁ, এ কাজটি জরুরি। আমরা টার্মিনালকে শহরের বাইরে নিতে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শহরের বাইরের জায়গা অধিগ্রহণ নিয়ে একটু সমস্যা আছে। কারণ, জেলখানার পাশের এই জায়গাটি জেলখানাও পেতে চায়। সেটা নিয়ে সমস্যা আছে।

প্রশ্ন: পানি সরবরাহের দায়িত্ব সিটি করপোরেশন নিয়েছে। মানসম্পন্ন পানি নিয়ে নগরবাসীর প্রশ্ন আছে। আপনি কী মনে করেন?

সেলিনা হায়াৎ আইভী: পানির মান কিন্তু আগের চেয়ে ভালো। পানির চাহিদা কিন্তু এখন অনেক বেশি। ভাড়াটিয়া বেশি, ভাসমান লোকও অনেক। পানির চাহিদা মেটাতে একটি বড় পানি শোধনাগার নির্মাণের জন্য দুই হাজার কোটি টাকা চেয়েছি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে। নির্বাচনে জেতার পর যদি সেই প্রকল্প পাই, তবে কাজ শুরু হবে। তবে এরই মধ্যে ১০টি নতুন পানির পাম্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পানির সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি লাগবে।

প্রশ্ন: সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য ধরেই বলছি, নারায়ণগঞ্জে জনসংখ্যার তুলনায় রাস্তা, জনসমাগম স্থল এবং বিনোদনের ব্যবস্থা বেশ কম। কী ব্যবস্থা নেবেন?

সেলিনা হায়াৎ আইভী: নারায়ণগঞ্জ খুব পুরোনো একটি শহর। পুরোনো শহরের ভেতরে কাজ করা খুব জটিল। রাস্তাঘাট আগের চেয়ে আমি চওড়া করেছি। মানুষের কাছে থেকে জায়গা চেয়ে নিয়েছি। সিটি করপোরেশনের যেসব নিজস্ব জায়গা বিভিন্ন জনের দখলে ছিল, সেগুলো উদ্ধার করেছি। সব রাস্তা প্রসারিত করতে পারব না, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটাই বাস্তবতা। কিন্তু প্রধান সড়কগুলো করা হয়েছে এবং হচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে একটি আধুনিক শহরের রাস্তা আরও প্রসারিত হওয়া উচিত। সরকারও আমাদের বলেছে কাজ করতে। প্রয়োজনে অধিগ্রহণ করতে। আমরাও সে পথে হাঁটব। আমরা বিশদ উন্নয়ন পরিকল্পনাকে (ড্যাপ) অনুসরণ করছি। তবে শুধু রাস্তা প্রসারিত করা নয়, এখানে খোলা জায়গার অভাব আছে। বিভিন্ন সংস্থার অব্যবহৃত জায়গা, যেগুলো অবৈধ দখলে আছে, সেগুলা আমরা নিয়ে খেলার মাঠ, পার্ক করতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার প্রসার ঘটাতে বলেছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এখন ১২টি খেলার মাঠ তৈরির কাজ করছে। অনেকগুলো মাঠ উদ্ধার করেছি। শহরের প্রাণকেন্দ্রে শেখ রাসেল পার্ক করেছি। দুটো পার্কের কাজ চলছে। নদীর তীরবর্তী যে জায়গা আছে, তা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সিটি করপোরেশনকে দেওয়ার কথা। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। প্রতিবন্ধকতা আছে। তবু এ কাজ হচ্ছে।

প্রশ্ন: এবার নির্বাচন প্রসঙ্গে আসি। সাংসদ শামীম ওসমান আপনার নির্বাচনী প্রচারে এলে কী করবেন?

সেলিনা হায়াৎ আইভী: উনি তো নির্বাচনী প্রচারে আসতেই পারেন। কারণ, প্রতীক নৌকা। এটা দলের প্রতীক। নৌকা প্রতীকের পক্ষে উনি কাজ করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। আমার মনে হয়, উনি নৌকার পক্ষেই কাজ করবেন।

প্রশ্ন: কিন্তু শামীম ওসমান আপনার পক্ষে প্রচারে এলে আপনার যেসব অনুসারীর সঙ্গে তাঁর বৈরী সম্পর্ক, তাঁরা অখুশি হবেন না?

সেলিনা হায়াৎ আইভী: আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন, যাঁরা সংস্কৃতিমনা, বাম দলের। তাঁরা কিন্তু নৌকাকেই ভোট দেন। সে ক্ষেত্রে এ জন্যই সমস্যা হবে না, কারণ, নির্বাচনী প্রচার কিন্তু একসঙ্গে হয় না। কারও সঙ্গে কারও দেখা হবে না। আমার জন্য মানুষ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নিজেদের উদ্যোগে ভোট চায়। আমার আহ্বানের অপেক্ষায় থাকে না।

প্রশ্ন: পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হতে মানুষের কাছে যাবেন কী প্রতিশ্রুতি নিয়ে? আগামীর পরিকল্পনা কী আপনার?

সেলিনা হায়াৎ আইভী: বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা, নগরের স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আবাসন, খাল পুনরুদ্ধার—এসব আমার প্রাধান্য থাকবে আগামীতে। আমি ইতিমধ্যেই দুটি খাল পুনরুদ্ধার করেছি। একদম আগের রূপ দিয়েছি সেসব খালের। কদম রসূল সেতু চলমান একটি কাজ। এটির কাজ শেষ করব। নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত স্থান তৈরির জন্য বেশি জোর দেব। খাল ও পুকুরগুলো সংরক্ষণ করব। মোটকথা, পরিবেশ উন্নয়ন হবে আমার বড় একটি কাজ।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামীলীগ দল। এই দলটি টানা ৩ মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছেন। এবং আাগামী সংসদ নির্বাচনেও তারা বিপুল ভোটে জয় লাভ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগ দলটির সভানেত্রী আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন।

About

Check Also

কোহিনূরের পর বিশ্বের সবচেয়ে দামি হীরা দরিয়া-ই-নূর বিদেশে পাচার করেছিল শেখ হাসিনা

ঢাকার নবাবি আমলের মহামূল্যবান হীরকখণ্ড ‘দরিয়া-ই-নূর’ নিয়ে রহস্য আজও অমীমাংসিত। ২০১৬ সালে সোনালী ব্যাংক সদরঘাট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *