প্রেম সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গত বেশ বেশকিছু দিন ধরেই নানা বিপত্তিতে ছিলেন শুভ দাস (১৮) নামে এক এইচএসসি শিক্ষার্থী। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রেমিকার কাছ থেকে প্রতারণার বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে একপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে মৃত্যুর পথ বেঁছে নেন তিনি। এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন শুভ দাসের পরিবার।
মৃত্যুর ঘণ্টাখানেক আগে ওই তরুণ নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বেশ কয়েকটি ছবি ও হিন্দি সিনেমার আংশিক ভিডিও পোস্ট দেন। সর্বশেষ সে তার প্রোফাইল পিকচার ‘দ্য এন্ড’ ক্যাপশন লিখে পরিবর্তন করেন। মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পাবনার চাটমোহর পৌর শহরের কালীসাগরপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শুভ দাস ওই এলাকার সুব্রত দাসের ছেলে। চলতি বছর চাটমোহর সরকারি কলেজ থেকে শুভর এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। শুভর মৃত্যুর পর ১০ পাতার সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে প্রেমিকা ও তার মায়ের বিরুদ্ধে বিস্তর প্রতারণার অভিযোগ লিখে গেছেন তিনি। মেয়েটি তার সাথে প্রেমের অভিনয় করে বারবার ঠকিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুইসাইড নোটের প্রথমে প্রেমিকার নাম উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, তুমি আমার সাথে এরকম করলা কেনো। আমি তো তোমাকে ঠকাই নাই। তুমি যা বলতা, আমি তাই শুনতাম, কোনো মেয়ের সাথে কথাও বলতাম না। তুমি মানা করতা, সিগারেট খেতাম না। কোনো নেশা পানি করতাম না। তাইলে সবাইকে তুমি মিথ্যা কেন বলছো যে, আমি ভাল না, নেশাখোর। তুমি যা চাইতা তাই দিতাম। ৪-৫ বছর আমাকে ব্যবহার করে গেলা।
সুইসাইড নোটের বিভিন্ন জায়গায় তার প্রেমিকা অন্য কয়েকটি ছেলের সাথে প্রেম করতো উল্লেখ করে তার সাথে রাগ-অভিমানের কথা জানানো হয়েছে। গেমস খেলার জন্য প্রেমিকাকে ৩০ হাজার টাকা মোবাইল কিনে দিয়েছেন শুভ। চিঠিতে শুভ দাসের আক্ষেপ ঝরেছে, প্রেমের নামে তাকে বারবার ঠকিয়েছে প্রেমিকা। অনেক রাত তারা একসাথে কাটিয়েছে। প্রেমিকার মা সব জানতো। তাকে দিয়ে বাড়ির সব কাজে ব্যবহার করাতো।
সুইসাইড নোটের আরেকটি পাতায় লেখা রয়েছে, তোমাকে আমি মরার কথা বললে তুমি বলেতে মরো, মরলে নাকি তোমার ভাল। তাই মরে তোমার ভাল করে দিয়ে গেলাম। আর সব সত্যি কথা বলে গেলাম। মিথ্যা কথা একটাও বলি নাই। শেষের পাতায় শুভ লিখেছেন, তোমাকে সত্যি পাগলের মতো ভালবাসতাম। তুমি দাম দিলা না। শুধু ব্যবহারই করে গেলা মা-মেয়ে মিলে। তুমি ও তোমার মা দায়ী আমার মৃত্যুর জন্য।
এদিকে এ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে চাটমোহর থানার ওসি মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, এ ঘটনায় ১০ পাতার সুইসাইড নোট জব্দ করা হয়েছে। এরই মধ্যে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ পাননি তিনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ওসি মুহাম্মদ আনোয়ার।