বাবা-মায়ের কাছে সব থেকে মূল্যবান জিনিসটি হলো সন্তান। সন্তানের খুশির জন্য সর্বদা সবকিছু করতে প্রস্তুত থাকেন তারা। আর তাই কোনো বাবা-মা-ই চান না, সেই সন্তানকে অপমানিত হতে দেখতে। তবে এবার এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহের মহেশপুরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত কয়েকদিন ধরে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসারত বাবার সামনে এক তরুণকে নিজের মুখে ‘জুতার বাড়ি’ দিতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে বইছে ব্যাপক শোরগোল।
জানা গেছে, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নাম আরিফুজ্জামান বিপাশ।
জানা যায়, গত ৭ ডিসেম্বর রাতে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন উপজেলার যাদবপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিন। তার ছেলে এস এম সরকার ওরফে হোসাইন ঢাকায় চাকুরি করেন। হোসাইন আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে তাকে দেখতে হাসপাতালে আসেন।
ঘটনার দিন ৮ ডিসেম্বর রাত ১২ টার দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশ তার ৩ কর্মীসহ নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তারা এসে হোসাইনের বাবার পাশে তাকে বসে থাকতে দেখে তার (হোসাইন) উপর চড়াও হন। তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখা নিয়ে ক্ষুব্ধ হন। এ সময় এস এম সরকার তাদের আক্রমণাত্মক পরিস্থিতি দেখে ক্ষমা চান। একপর্যায়ে পায়ে ধরেও ক্ষমা ভিক্ষা চান। এরপরও ছাত্রলীগ সভাপতি নিজের পায়ের জুতা খুলে এগিয়ে দিয়ে হুকুম দেন হোসাইনের নিজের মুখে জুতার বাড়ি মারতে। উপায় না দেখে হোসাইন নিজের মুখে জুতা দিয়ে বাড়ি মারেন।
এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন হোসাইনের বাবা গিয়াস উদ্দিন। তখন তাকে যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনি মারা যান।
হোসাইনের ভগ্নিপতি মোমিনুর রহমান বলেন, এই ঘটনার পর তার শ্বশুর মানসিক কষ্টে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বারবার জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার ছেলে কী অপরাধ করেছে?’ কিন্তু তিনি কোনো উত্তর খুঁজে পাননি। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন হোসাইনের বাবা গিয়াস উদ্দিন। তখন তারা যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনি মারা যান।
প্রতিবেদকের সঙ্গে কথোপকথনে এস এম সরকার ওরফে হোসাইন বলেন, ‘জুতা মারার দৃশ্যটি দেখলেই বুঝতে পারবেন, আমার ওপর কী অত্যাচার করা হয়েছে।’ তবে এর বেশি কিছু তিনি বলতে পারেননি, শুধু কান্নাকাটি করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশ বলেন, আপনারা ঘটনা যা শুনছেন বিষয়টি তা নয়। হোসাইন আমাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে নানা কথাবার্তা লিখত। তার বাবার অসুস্থতার কথা শুনে আমরা তাকে দেখতে যাই। সে তার ভুল বুঝতে পেরে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে।
তিনি বলেন, আমি তাকে জুতা মারতে বলব কেন। সে নিজেই আমাকে জুতা মারতে বলে। আমি না মারলে সে নিজে নিজে এটা করেছে।
এদিকে এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রানা হামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়টি এরই মধ্যে জেনেছেন দাবি করে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আরিফুজ্জামান বিপাশের বিরুদ্ধে উঠা এ অভিযোগ সত্য প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।