নাম আসপিয়া ইসলাম কাজল। বাবার মৃত্যুর পর পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টেই দিন কাটছিল তার। কোনো দিন দু’বেলা আবার কোনো দিন এক বেলা খেয়েই দিন কাটিয়ে দিতেন তিনি। তবে এত কষ্টের মধ্য দিয়ে হঠাৎ’ই একদিন দেখা দিল সস্তির আভাস। কিন্তু সেখানেও এক বিপত্তিতে পড়তে হলো তাকে। তবে অবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদৌলাতে স্বপ্ন পূরণ হলো তার।
জানা যায়, নিয়োগ পরীক্ষার সবগুলো ধার পেরিয়ে আসার পর পিতৃহীন আসপিয়া ইসলাম কাজল ‘ভূমিহীন’ হওয়ায় পুলিশ কনষ্টেবল পদে তার চাকরি নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। সেই হতাশায় বুধবার বরিশাল পুলিশ লাইন্সের গেটে দীর্ঘক্ষণ বসেছিলেন আসপিয়া। সোশাল মিডিয়ায় ওই ছবিটি নিয়ে তৈরি হয় তুমুল আলোচনা। চাকরি না পেয়ে হতাশ আসপিয়া নজর কেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা পেয়েই জেলা প্রশাসন দ্রুততম সময়ে তার জন্য জমি ও ঘরের ব্যবস্থা করছে।
এছাড়াও পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আসপিয়া ইসলাম কাজল যাতে পুলিশ কনস্টবল পদে চাকরি পেতে পারেন সেজন্য ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই নির্দেশনার কথা জানতে পেরে আবেগ আপ্লুত হয়ে ওঠেন আসপিয়া ইসলাম। তিনি বলেন, আমার মতো অসহায় একটি মেয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন। নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে আমি আনন্দে আপ্লুত। এ দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমার কাছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা কখনো শেষ হবে না আমার। আমি প্রার্থনা করি, মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন-যাপন করুন।
পিতৃহীন আসপিয়া আরও বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের সংসারে অভাব অনটন ঘিরে ধরেছে। তাই এ সময় একটি চাকরি আমার কাছে স্বপ্নের মতো। এখন মনে হচ্ছে সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। কনস্টেবল পদে চাকরি হলে নিষ্ঠার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানান। তিনি এজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
আসপিয়ার বিষয়টি জানতে পেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি জমিতে ঘর নির্মাণ ও চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে নির্দেশ দেন। নির্দেশনা পেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার আসপিয়ার জন্য ঘর নির্মাণে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বকুল চন্দ্র কবিরাজকে সরকারি জমি খুঁজতে বলেছেন।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া শুক্রবার সকালে ফোন করেন তাকে। তিনি বলেন, আসপিয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে। আসপিয়া যাতে কনস্টেবল পদে চাকরি পেতে পারে সেজন্য সরকারি জমিতে ঘর নির্মাণ করে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
জসীম উদ্দীন আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে আসপিয়ার জন্য জমির স্থান নির্ধারণ করতে হিজলার ইউএনওকে বলা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে আসপিয়ার জন্য ঘর নির্মাণ সম্ভব হবে।
আসপিয়ার নিয়োগের ব্যপারে বরিশাল জেলা পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ কমিটির সভাপতি জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, এখনো পুলিশ কনস্টেবল পদে আসপিয়ার নিয়োগ বাতিল করা হয়নি। নিয়োগ আবেদনে তার স্থায়ী ঠিকানা ভুল উল্লেখ ছিল। বিষয়টি ভেরিফিকেশনে উঠে আসে। তবে তার যে চাকরি হবে না, এটা কখনো বলা হয়নি। আসপিয়া যেন এ কারণে নিয়োগবঞ্চিত না হন, সেজন্য নিয়মের মধ্যে থেকে কী করণীয় সে সম্পর্কে ভাবা হচ্ছে।
এদিকে এর আগে ‘ভূমিহীন’ হওয়ায় পুলিশ কনষ্টেবল পদে তার চাকরীর নিয়োগ বাতিল হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই রীতিমতো গোটা এলাকাজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। তবে নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে তার চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় আনন্দি্য যেন সকলেই।