Wednesday , November 13 2024
Breaking News
Home / Countrywide / রাজনীতিতে পতনের আগে এক লাফে বেড়েছে মুরাদের সম্পদ, আয় বেড়েছে ৩ গুন

রাজনীতিতে পতনের আগে এক লাফে বেড়েছে মুরাদের সম্পদ, আয় বেড়েছে ৩ গুন

সম্প্রতি একের পর এক বিতর্কিত বক্তব্য ও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে একটি ফোনালাপের জের ধরে অবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগের পর এই মুহুর্তে কানাডায় অবস্থায় করছেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। তবে তার পতনের পরপরই তার বিরুদ্ধে একের পর এক উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

বিশেষ করে, মুরাদ হাসান যখন প্রথমবার সংসদ নির্বাচনে দাঁড়ালেন, চিকিৎসা পেশা থেকে তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন তিন লাখ টাকার সামান্য বেশি। দশ বছর পরে সেটা বেড়ে হয় ১৪ লাখ, যার বেশিরভাগটা আসে ব্যবসা থেকে।

অডিও কেলেঙ্কারিতে প্রতিমন্ত্রিত্ব আর দলীয় পদ হারানো সংসদ সদস্য মুরাদ হাসানের অনেক কিছুই এখন আলোচনা আসছে। ২০০৮ ও ২০১৮ সালে দুই দফা নির্বাচন করার সময় ইসিতে জমা দেওয়া তার হলফনামা থেতে দেখা যাচ্ছে, দশ বছরের ব্যবধানে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। তবে তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে আরও বেশি।

৪৭ বছর বয়সী মুরাদ জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদারের ছেলে। মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা, পরে জামালপুরে আওয়ামী লীগের পদে বসেন।

আওয়ামী লীগের টিকেটে নবম সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৪ আসন থেকে প্রথমবার এমপি হন মুরাদ। পরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও নৌকার মনোনয়ন পান মুরাদ। ২০১৮ সালের ওই নির্বাচনে জিতে প্রথমে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং পরে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। কিন্তু আড়াই বছরের মাথায় তাকে পদ হারাতে হয় নারীর প্রতি অবমাননাকর মন্তব্যের অডিও ফাঁস হওয়ার জেরে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ করার পর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে দেশও ত্যাগ করেছেন মুরাদ, গেছেন কানাডায়; সেখানে তার কোনো সম্পদ আছে কি না, তার কোনো উল্লেখ কোনো নথিতে নেই।

আয় বেড়ে ৩ গুন

দুই নির্বাচনের হলফনামাতেই মুরাদ নিজের পেশার ঘরে লিখেছেন ‘চিকিৎসা’। ২০০৮ সালে তিনি আয় দেখিয়েছিলেন ৩,০৯,৬০০ টাকা, যার পুরোটাই ‘চাকরি থেকে’ থেকে আসত। আর কোনো খাত থেকে কোনো আয় তার ছিল না।

২০০৮ সালের হলফনামায় মুরাদের বার্ষিক আয় বেড়ে হয় ১৩ লাখা ৮৩ হাজার ২৯৩ টাকা। পেশার ঘরে কোনো পরিবর্তন না এলেও চাকরি থেকে আয়ের ঘর দেখা যায় ফাঁকা।

তার বদলে ব্যবসা থেকে বছরে ১২ লাখ টাকা, বাড়ি/এপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে ১ লাখ ২৩ হাজার ২৯৩ টাকা এবং কৃষি থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় দেখানো হয় সেখানে।

বেড়েছে টাকা, গয়না

২০০৮ সালের হলফনামা বলছে, সে সময় মুরাদ হাসানের হাতে নগদ ২ লাখ ২২ হাজার ২১৩ টাকা ছিল। সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগে ছিল ৫৪ হাজার ৯২১ টাকা।

দশ বছর পর তিনি যখন আবার নির্বাচন করতে গেলেন, তখন তার হাতে নগদ টাকার কোনো হিসাব তিনি দেননি। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২১ লাখ ২৭ হাজার ৩৫ টাকা সঞ্চয়, শেয়ারে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ, সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৩১ টাকা বিনিয়োগ দেখিয়েছেন।

আগেরবার মুরাদ কোনো গয়নার মালিক ছিলেন না। তবে ২০১৮ সালের হলফনামায় তার নামে ২৫ ভরি সোনা থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে, এর দাম দেখানো হয়েছে আড়াই লাখ টাকা।

পুরনো গাড়ির সঙ্গে দামী আরেকটি
হলফনামার তথ্য বলছে, ২০০৮ সালে মুরাদের ৮ লাখ টাকা দামের একটি টয়োটা মাইক্রোবাস ছিল। ১০ বছর পর সেই গাড়ির সঙ্গে যোগ হয় ৭০ লাখ টাকার একটি নতুন কার।

প্রথমবার এমপি হওয়ার আগে তার বাসায় ছিল ৪০ হাজার টাকার টিভি ও ফ্রিজ। কম্পিউটার ও ওভেন ছিল আরও ৪০ হাজার টাকার। খাট, সোফা, ডাইনিং সেট, চেয়াল টেবিল যা বাসায় ছিল, তার দাম দেখানো হয়েছিল ১ লাখ টাকা।

আর দশ বছর পর প্রতিমন্ত্রী হওয়ার সময় তার বাসায় ৮০ হাজার টাকা দামের টিভি ও ফ্রিজ এবং লাখ টাকা দামের ল্যাপটপ ছিল। আসবাবপত্র ছিল আড়াই লাখ টাকার।

এর বাইরে ৩ লাখ টাকার পিস্তল ও শটগানেরও মালিক তিনি তখন, যা দশ বছর আগে ছিল না।

এছাড়া জমি বিক্রি থেকে ২০ লাখ টাকা; পুঁজি হিসেবে ৬ লাখ টাকা এবং ঋণ হিসেবে দেওয়া ১৫ লাখ টাকার হিসাবও তিনি ২০১৮ সালের হলফনামায় দিয়েছেন।

জমি, বাড়ি বাড়-বাড়ন্ত

মুরাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালের নির্বাচন করার সময় তিনি ছিলেন ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যমানের ৭.৩০ শতাংশ অকৃষি জমির মালিক। কোনো কৃষিজমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট বা প্লট তার সে সময় ছিল না।

২০১৮ সালের হলফনামায় তিনি নিজের নামে সরিষাবাড়ির দৌলতপুরে ১০ বিঘা কৃষি জমি এবং ২ কাঠা ও ১.২ বিঘা অকৃষি জমি দেখিয়েছেন, যা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া। এছাড়া ঢাকার পূর্বাচলে ৫ কাঠা জমি থাকার তথ্যও দিয়েছেন, যার দাম ৩৫ লাখ ২৭ হাজার ৯৫০ টাকা।

এদিকে তার পদত্যাগের খবরে গোটা এলাকাজুড়ে আনন্দের বন্য বইতে শুরু করেছে। যেন দীর্ঘদিন ধরে এমন একটি সংবাদের অপেক্ষায় ছিলেন সকলেই, আর এই আশা পূরন হতেই আনন্দে ফেটে পড়েছেন তারা। জানা যায়, গতকাল শুক্রবার কানাডার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন সাবেক এই তথ্য প্রতিমন্ত্রী। এই মুহুর্তে কানাডায় রয়েছেন তিনি।

About

Check Also

কাল নিলেন উপদেষ্টার দায়িত্ব, আজ হলেন আসামি: যা বললেন বশির উদ্দিন

নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন নিজের নামে মামলা প্রসঙ্গে বলেন, “আমি পুরো বিষয়টি স্পষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *