বর্তমান এ সমাজে শামীমের মতো মানুষের সত্যিই বড় অভাব। যেখানে নিজের জীবনের কথা একটি বারের জন্যও না ভেবে, তিন ভাই-বোনের জীবন বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত প্রাণ হারাতে হলো তাকেও। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে নীলফামারী সদরের কুন্দরপুর ইউনিয়নের বউবাজার এলাকায়।
জানা যায়, এইদিন সকালে রেল সেতুর উপর দাঁড়িয়ে ছিল তিন ভাই-বোন। আর ঠিক এ সময়ে ওপর দিক থেকে ছুটে আসে দ্রুত গতির একটি ট্রেন। এ সময়ে কিছুই বুঝতে পারছিল না তার। তবে তাদের দুর্ঘটনা আসন্ন দেখে বাঁচাতে ছুটে যান প্রতিবেশী যুবক শামীম। কিন্তু তিনি তাদের বাঁচাতে তো পারেনইনি, বরং নিজের প্রাণটিও হারালেন।
বুধবার সকালে নীলফামারী সদরের কুন্দরপুর ইউনিয়নের বউবাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ওই গ্রামের প্রয়াত আনোয়ার হোসেনের ছেলে সালমান ফারাজী শামীম (২৬), রিকশা চালক রেজওয়ান আলীর দুই মেয়ে লিমা আক্তার (৭), শিমু আক্তার (৪) ও ছেলে মমিনুর রহমান (৩)।
এলাকাবাসী জানায়, পরোপকারী হিসেবে সালমান ফারাজী শামীম এলাকায় সবার প্রিয় ছিলেন। গ্রামের মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন তিনি। এবার তিন শিশুকে ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে নিজের জীবনটাই দিয়ে দিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ট্রেন প্রায় কাছাকাছি। এ সময়ও তিন অবুঝ শিশু দাঁড়িয়েছিল রেল লাইনে। রেল লাইনের পাশে দাঁড়ানো শামীম ওই তিন শিশুর বিপদ দেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন সেখান থেকে বের করে আনতে।
তিনি এক শিশুকে কোলে তুলে চলে আসার সময় ট্রেনের ধাক্কায় লাইনে পড়ে যান মুখ থুবড়ে।
শামীমের ভায়েরা ভাই জেলা শহরের নিউ বাবুপাড়ার আক্রাম হোসেন বলেন, শামীম এক সময়ে ঢাকায় এফডিসিতে চাকরি করতেন। সেখানে চাকরির সুবাদে কয়েকটি চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন। সেখান থেকে দুই বছর আগে বাড়ি এসে সংসার দেখাশোনা করছিলেন। এরই মধ্যে রেলপথের বউবাজারিএলাকায় একটি সেতুর সংস্কার কাজ চলছিল। তাকে সে কাজের দেখাশোনার দায়িত্ব দেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বুধবার সকালে সে দায়িত্বে সেখানে অবস্থান করছিলেন বলে জানান তিনি।
“শামীম অত্যন্ত একজন ভদ্র স্বভাবের ছেলে। মানুষের উপকার করা তার নেশা। এলাকার কোনো মানুষের বিপদে তাকে এগিয়ে যেতে দেখেছি। গ্রামের কোনো মানুষ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া নেশায় পরিণত হয়েছিল তার।”
শামীমের মামি রুমি আক্তার বলেন, প্রায় সাত বছর আগে সুমি আক্তারকে বিয়ে করেছিলেন শামীম। তাদের মিত্তাহুল জান্নাত নামে ছয় বছরের এক মেয়ে রয়েছে। তার বাবা আনোনয়ার হোসেন মারা গেছেন অনেক আগে। স্ত্রী, সন্তান এবং মা চিনু বেওয়াকে নিয়ে তার পরিবার।
“শামীমের মৃত্যুতে অসহায় হয়ে গেল পরিবারটি।”
এদিকে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে সদর উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদ ওয়াদুদ রহমান সংবাদ মাধ্যমকে জানান, শামীম তার নিজের জীবনের কথা না ভেবে ঐ তিন শিশুকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষমেষ তাকেও জীবন দিতে হলো। এ ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে বেশ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।